ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গেট খোলেনি;###;খালেদাকে সমবেদনা জানাতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী

ফিরে গেলেন হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

ফিরে গেলেন হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত সাক্ষাতটি হলো না! পুত্রশোকে কাতর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে গেলেও সাক্ষাত না পেয়ে গেট থেকেই ফিরে আসতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে প্রধান ফটকের সামনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর গাড়ি থেকে নামেন রাত আটটা ৩৫ মিনিটে। কিন্তু প্রধান ফটকে গিয়ে দেখতে পান তাতে বড় বড় দুটি তালা লাগানো। ফটকের সামনে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আগেই সেখানে আসা আওয়ামী লীগের দুই প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ প্রধান ফটক খুলে দেয়ার জন্য ভেতরে থাকা নেতাদের অনুরোধও জানান। এ সময় দলীয় কার্যালয়ের ভেতর থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়- ‘পুত্রশোকে কাতর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে তিনি কারও সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।’ প্রায় সাত মিনিট প্রধান ফটকের সামনে খোলা আকাশের নিচে অপেক্ষা করেও সাক্ষাত না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত বিএনপির গুলশানের কার্যালয় থেকে গণভবনে ফেরত আসতে বাধ্য হন। সাক্ষাত না পেয়ে গুলশানের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার পর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু সংবাদ শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন মা হিসেবে, একজন দরদী মানুষ হিসেবে, একজন নেত্রী হিসেবে আরেক ছেলেহারা মাকে সান্ত¡না ও সমবেদনা জানাতে এসেছিলেন। এরমধ্যে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু খালেদা জিয়া দরজা না খোলায় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে সমবেদনা জানাতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ ফটকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় ফিরে গেছেন। আপনারা দেখেছেন, দরজাটি খোলা হয়নি। তিনি বলেন, বিকেলেই গুলশানের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন করে জানানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে আসবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আসার পরও দরজা এভাবে বন্ধ রাখা ভদ্রজনোচিত নয়, এটা সম্পূর্ণই অমানবিক ও অশোভনীয়। তারা ন্যূনতম ভদ্রতা ও শিষ্টাচার দেখায়নি। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। এদিকে, সাক্ষাতকারের নির্দিষ্ট সময় রাত আটটার দিকে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থানরত চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাস হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে বলেন, পুত্র হারানোর শোকে কাতর খালেদা জিয়াকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তিনি (খালেদা জিয়া) সুস্থ হলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের বিষয়টি জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী ‘ম্যাডামকে’ সমবেদনা জানাতে আসতে চেয়েছেন এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ। খালেদা জিয়ার ঘুম ভাঙ্গলেই তাঁর সঙ্গে আলোচনা ও দু’পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আসার সময় নির্ধারণ করা হবে। তবে সকলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দুপুর থেকেই খালেদা জিয়াকে সান্ত¡না দিতে বিএনপিসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তাঁর কার্যালয়ে যান। তাঁদের মধ্যে প্রায় সবাই সাক্ষাত পান খালেদা জিয়ার সঙ্গে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে গুলশানের কার্যালয়ে আসবেন এটা জানাজানি হওয়ার পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খানসহ অন্য নেতারা বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে কথাও বলেন। সন্ধ্যা ৭টার পর পরই খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয়ের যে রুমে অবস্থান করছিলেন, তা বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গুলশানের কার্যালয়ে আসার আগেই হাইকমান্ডের নির্দেশে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা প্রধান ফটকেও বড় বড় দুটি তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সকলের আসা-যাওয়া বন্ধ করে দেন। প্রধানমন্ত্রী যখন বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তখনও ওই কার্যালয়ের ভেতরে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি কার্যালয়ে যাবেন, বিকেল থেকেই শুরু হয় সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ গুলশানের খালেদার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়, বসানো হয় আর্চওয়ে, আরোপিত হয় কড়াকড়ি নিরাপত্তা। কার্যালয়ের প্রায় ৩শ’ মিটার এলাকায় কড়া নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী রাত সোয়া আটটার দিকে গণভবন থেকে রওনা দেন গুলশানের কার্যালয়ের দিকে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলসহ অন্য নেতারাও ছিলেন। কিন্তু প্রধান ফটকে প্রায় সাত মিনিট অপেক্ষা করার পরও সাক্ষাত না পেয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরে আসতে হয়। প্রধানমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার কিছু সময় পর গুলশানের কার্যালয় থেকে একে একে বেরিয়ে যান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ দলটির সিনিয়র নেতারা। ফলে সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও বৈরী রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণেই শেষ পর্যন্ত সবকিছুই ভেস্তে যায়। এ নিয়ে সব মহলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আবারও প্রেস ব্রিফিং করেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। শোকের ঘটনা নিয়ে কেউ যাতে নোংরা রাজনীতি না করেন সে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শোকবই নিয়ে আসতে না আসতেই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চলে গেলেন। প্রধানমন্ত্রী এক মিনিটের মধ্যেই গেট থেকে ফিরে গেছেন। কেউ তাঁর (খালেদা জিয়া) পুত্রশোক নিয়ে কুতসিত রাজনীতি করুক, আমরা তা পছন্দ করি না। দেশের রাজনীতিতে শালীনতা ও সৌজন্যতা সবাইকে রক্ষা করতে হবে। এ নিয়ে রাজনীতি করে কেউ যেন চলমান সমস্যার সমাধানের পথে কোন বাধার সৃষ্টি না করে।’ গণভবন সূত্র জানায়, সাক্ষাত না পেয়ে গুলশান থেকে সরাসরি নিজের সরকারী বাসভবন গণভবনে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ফিরেই তাঁর সঙ্গে থাকা নেতাদের সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠকও করেন তিনি। জানা গেছে, পূর্ব থেকে জানানো সত্ত্বেও তাঁকে এভাবে ফেরত আসায় বেশকিছুটা অসন্তুুষ্টও প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, স্বজন হারানোর বেদনা আমার চেয়ে কে বেশি অনুভব করে। আমি একরাতে বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে হারিয়েছি। আমি তো একজন মা হিসেবে আরেক পুত্রহারা মাকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম। সেটাও করতে দেয়া হলো না। এরপর একটি কথাও বলেননি প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি রবিবার রাতে জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নেত্রী, একটি দলের সভানেত্রী, সর্বোপরি একজন মা হিসেবে পুত্রহারা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন। একজন সন্তানহারা মা অসুস্থ হতেই পারেন, তাঁকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানো হতেই পারে। কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাবেন, সেটা বিকেল থেকেই জানানো হয়েছে বিএনপি নেতাদের। প্রধানমন্ত্রী গেলেন এবং ছয় মিনিট বন্ধ ফটকের সামনে অপেক্ষা করলেন। তিনি বলেন, পুত্রশোকে কাতর বিএনপি নেত্রীকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হলেও সেই কার্যালয়ে থাকা বিএনপি নেতাদের উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীকে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের ভাষায় খালেদা জিয়াকে সম্ভব না হলেও তাঁর দলের নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানানোর সুযোগ দেয়ার। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সকল মানুষই তো তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দেখা করতে না দিতে প্রধানমন্ত্রী গুলশানের কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার মাত্র ৫-১০ মিনিট আগে প্রধান ফটকে তালা দেয়ার ঘটনা কেন করা হলো? পরিবারের বিয়োগান্তক ঘটনা হরহামেশাই যে কোন পরিবারেই ঘটে। সমবেদনা জানাতে আসা একজন সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে যে সৌজন্য দেখানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে সেই ন্যূনতম সৌজন্য দেখাতেও বিএনপি নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁরা (বিএনপি) ভদ্রতা জানাতে ব্যর্থ হলেও আমরা এরকম পরিস্থিতিতে কোন মন্তব্য করতে চাই না। এ ঘটনার কোন মন্তব্য বা ব্যাখ্যা প্রদানের ভাষা আমার জানা নেই। এদিকে, দলীয় কার্যালয়ে গেলেও সাক্ষাত না করা এবং প্রধানমন্ত্রীর ফেরত আসা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এ বিষয়টিকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত ঘটনা বলেই মন্তব্য করেছেন। ২০০৯ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর ধানম-ির বাসভবন সুধাসদনে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানান এবং দুই নেত্রীর মধ্যে কিছুক্ষণ কথাও হয়। এরপর গত পাঁচ বছরে বেশ কয়েকবার একই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তাঁরা কথা বলেননি। সর্বশেষ ২০১৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর শোক জানাতে বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। অবশ্য সে সময় কথা হয়নি তাঁদের মধ্যে। এছাড়া বিগত কয়েক বছরে একাধিকবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে গেলেও কথা বলেননি তাঁরা। ’৯৭ সালে সদ্য প্রয়াত খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর বিয়ের অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে আজকের মতোই ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর ক্লান্তিকালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সংলাপের জন্য খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু’জনের মধ্যে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ফোনালাপ হলেও বরফ গলেনি, বরং সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন বানচালে আন্দোলনের নামে সহিংসতা-ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপরে দু’নেত্রীর মধ্যে আর কোন সাক্ষাত কিংবা কথা হয়নি। এরমধ্যে গড়িয়ে গেছে অনেক জল। বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই নেত্রীর নেতৃত্বাধীন দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে এখন যোজন যোজন দূরত্ব। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে বিরোধী দলের নেতার পদটিও হারিয়েছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। নির্বাচন বয়কটের আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল সহিংসতায় প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, মানুষকে পুড়িয়ে মারার মহোৎসব প্রত্যক্ষ করেছে দেশের মানুষ। ঠিক এক বছর বাদে গত ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ-হরতালের নামে একই কায়দায় মানুষ হত্যায় নেমেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। গত ৬ জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ১৯ দিনে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতায় প্রায় ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে। পেট্রোলবোমা ও অগ্নিসংযোগে শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, দিনমজুর, ট্রাকচালকসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ দগ্ধ হয়ে মারা গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। জাতীয় সংসদসহ সর্বত্র বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের প্রচ- দাবি উঠেছে। অন্যদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। দেশের এমন বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যখন দেশের হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিটে শত শত দগ্ধ মানুষ জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, তাঁদের শারীরিক যন্ত্রণা ও জীবন বাঁচানোর তীব্র আর্তনাদে যখন দেশের সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে- ঠিক তখন শুধুমাত্র মানবিকতা আর পুত্রশোকে কাতর একজন মা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে সান্ত¡না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুলশানের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু গিয়েও সাক্ষাত না পাওয়ার ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলেই মন্তব্য করছেন অনেকেই।
×