ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাজিলে রফতানি প্রবৃদ্ধির হার ৩ শতাংশ

তৈরি পোশাকের নতুন সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

তৈরি পোশাকের নতুন সম্ভাবনা

জসিম উদ্দিন ॥ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিততৈরি পোশাকের নতুন সম্ভাবনা ব্রাজিলে রফতানি প্রবৃদ্ধির হার ৩০ শতাংশ জসিম উদ্দিন ॥ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে দেখা দিয়েছে বড় বাজার তৈরির সুযোগ। এখানে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাকের বাজার। গত ৫ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায় গড়ে প্রতিবছর এই বাজারের প্রবৃদ্ধির হার শতকরা প্রায় ৩০ শতাংশ। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে তৈরি পোশাক প্রস্তুতাকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ গামের্ন্টস ম্যানুফেকচার্স এ্যান্ড এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। সংগঠন সূত্রে জানা যায়, গত বছর ফ্রান্সের রাজধানীতে ‘প্যারিস বাটেক্সপো ২০১৪’ আয়োজনের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশ বাজার তৈরি করা। কারণ বাংলাদেশের জন্য সরাসরি ব্রাজিলের যোগাযোগের চেয়ে ফ্রান্স হয়ে যোগাযোগ করা অনেক সুবিধাজনক। তবে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ব্রাজিলে ‘গোটেক্স’ নামে অনুষ্ঠিত ‘ব্রাজিল ফেয়ার’ এ নেয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতাকারক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র। স্থানীয় আয়োজকরা সেখানে অন্যান্য দেশের মতো করে এই দেশের জন্য একটি ‘বাংলাদেশ কর্নার’ নামে একটি কর্নার রাখে। যেখানে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫০টি স্টল। তবে ওই মেলায় অংশ নিতে টাকা পাঠানোর সময় বাঁধে কূটনৈতিক জটিলতা। শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা ওই মেলায় অংশ নিতে পারেনি। বিজিএমইএ’র সহসভাপতি (অর্থ) রিয়াজ বিন মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বছরের মার্চে ব্রাজিলে একটি ফেয়ারে অংশ নিবেন তারা। যেখানে পণ্যের প্রদর্শনী ও ফ্যাশন শো দুইটা থাকবে। তিনি বলেন, আমাদের পণ্যগুলো তুলে ধরার জন্যই এসব মেলায় অংশ নেয়া দরকার। তবে এসব মেলায় অংশগ্রহণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে উল্লেখ করেন তিনি। তাই প্রয়োজন সরকারের সহায়তা। এছাড়া ব্রাজিলের সঙ্গে ব্যবসা করতে কিছু চ্যালেঞ্জ ও জটিলতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করে রিয়াজ বিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ব্রাজিলের সঙ্গে ব্যবসা আমাদের করতে হলে আমাদের বাংলাদেশ সময় রাতের বেলায় সার্ভিস দিতে হয়। এছাড়া রাজনৈতিক কোন অস্থিরতার কারণে পণ্য শিপমেন্ট করতে দেরি হলে বিমানে পণ্য পাঠানোর খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ ট্যারিফ দিয়ে ব্রাজিলের সঙ্গে ব্যবসা করতে হয়। বিজিএমইএ’র প্রকাশনা দ্যা এ্যাপারাল স্টোরির তথ্য মতে, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ব্রাজিলের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৮২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ সময়ে ব্রাজিলের বাংলাদেশে রফতানি করে ৯৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিপরীতে বাংলাদেশ ব্রাজিলে রফতানি করে ১৭৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ব্রাজিলে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাকের বাজার। গত ৫ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায় গড়ে প্রতিবছর এই বাজারের প্রবৃদ্ধির হার শতকরা প্রায় ৩০ শতাংশ। ২০১৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে ব্রাজিলের তৈরি পোশাকের বাজার হয় ৬৮০ দশমিক শূন্য ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ৪৯ দশমিক ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ৫৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০১৩ সালে ব্রাজিলে ২৩৭৫ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তৈরি পোশাকের বাজার ছিল। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ১২ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ১৮২ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। যা ব্রাজিলের মোট তৈরি পোশাক আমদানির মাত্র ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০১২ সালে ব্রাজিলে ২১৭৭ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তৈরি পোশাকের বাজার ছিল। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ১৫৭ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ৩৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। যা ব্রাজিলের মোট তৈরি পোশাক আমদানির মাত্র ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০১১ সালে ব্রাজিলে ১৭২১ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তৈরি পোশাকের বাজার ছিল। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ৬০ দশমিক ৪০ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ১১৬ দশমিক ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ৬৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। যা ব্রাজিলের মোট তৈরি পোশাক আমদানির মাত্র ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১০ সালে ব্রাজিলে ১০৭৩ দশমিক শূন্য ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তৈরি পোশাকের বাজার ছিল। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ৩৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ৭০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ। যা ব্রাজিলের মোট তৈরি পোশাক আমদানির মাত্র ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০০৯ সালে ব্রাজিলে ৭৬৭ দশমিক শূন্য ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তৈরি পোশাকের বাজার ছিল। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশ রফতানি করে মাত্র ৫০ দশমিক ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার প্রবৃদ্ধির হার ছিল এর আগের বছরের তুলনায় ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা ব্রাজিলের মোট তৈরি পোশাক আমদানির মাত্র ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বিজিএমইএ’র সহসভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজিম জনকণ্ঠকে বলেন, ব্রাজিল আমাদের জন্য এখন একটি সম্ভাবনাময় বাজার। আগে সেখানে আমাদের কোন দূতাবাসও ছিল না। সামান্য ব্যবসা ছিল ব্যক্তিগতভাবে। ২০১০ সালের আমরা সেখানে আনুষ্ঠানিক ব্যবসা শুরু করি। এ সময় আমাদের ও ব্রাজিল সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এরপর দুই দেশেই স্থাপিত হয় উভয়ের দূতাবাস। এছাড়া আমাদের সরকারও এখন ব্রাজিলে পোশাক রফতানিতে উৎসাহ দিতে প্রণোদনা দিচ্ছে। শুধু ব্রাজিল নয় মেক্সিকো, আর্জেটিনা, পেরু ও চিলিসহ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের জন্য নতুন বাজারের বিশাল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করছি।
×