ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্পাদক সমীপে

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

সম্পাদক সমীপে

সহিংসতার শেষ কোথায়? রাজনীতির নামে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ যখন অশান্ত ও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে, তখন কিছু মিডিয়া, শিক্ষক ও সুশিল সমাজের ভূমিকা রহস্যজনক। একটি দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন হতেই পারে। কিন্তু আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা ও নাশকতা দিয়ে যখন একের পর এক মানুষ পুড়িয়ে হত্যা ও নাশকতা সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলা হবে তখন কেউ কেউ সেই হত্যাকারী ও নাশকতাকারীদের পক্ষ অবলম্বন করেন। বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগজনক। আমাদের মিডিয়া ও সুশীল সমাজ হয়ত দেশের মঙ্গল চায়। তারা ক্রসফায়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ক্রসফায়ার হচ্ছে কাদের। যারা সাধারণ মানুষের উপর বোমা নিক্ষেপ করছে, যারা ট্রেনের ফিসপ্লেট উপড়ে ফেলছে, যারা দেশের অর্থনীতিকে ভেঙ্গে ফেলছে, যারা শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কুফল বইয়ে দিচ্ছে তাদের। শুধু মাত্র টাকার বিনিময়ে যারা অন্যের উপর পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে তারা কি সত্যি মানুষ। এদের ধরার পর ক্রসফায়ারে হত্যা করতে পারাটা নিশ্চয়ই কোন অপরাধ নয়। তবে যারা এদের বিপথগামী করছে তাদের বিচার করে ক্রসফায়ারে হত্যা করা উচিত নয় কি। আমরা সাধারণ মানুষ দেশে শান্তি চাই। বিরোধীজোট নিয়মতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুক, কোন হত্যা নয়, ষড়যন্ত্র নয়, ধ্বংসযোগ্য নয়। আর যেন পেট্রোলবোমায় কারও লাশ না পড়ে সেভাবেই শান্তির পথে বিরোধীজোটের আন্দোলন এগিয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের অভিশাপ কোন ভাল ফল নিয়ে আসবেনা। দেশের নিয়মতান্ত্রিক আইনকে ভেঙ্গে কেউ যদি হত্যাযজ্ঞ চালায় আর দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তাহলে সাধারণ মানুষ সেই রাজনীতির পক্ষে নয়। হাজি মোহম্মদ মোস্তফা হোসেন ধানমন্ডী, ঢাকা। বার্ন ইউনিটের আর্তনাদ রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে বাসে পেট্রোলবোমা ফাটিয়ে সাধারণ মানুষকে দগ্ধ করার যে ঘৃণ্য রাজনৈতিক কর্মসূচী তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে কার্যকর কৌশল কে বের করবে সাধারণ মানুষ সেটা বুঝে উঠতে পারছেনা। এরশাদ সরকারের পতনের পর ভাবা হয়েছিল এদেশ গণতন্ত্রের ধারায় ফিরবে। যদিও ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর দেশ সেনা শাসনে থেকে যে ভাবে রাজনৈতিক ধারা নষ্ট করেছে তার থেকে আগে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত ছিল। মেধাবী ছাত্রদের হিজবুল বাহরে করে সমুদ্র বিহারে নেয়ার পর থেকে ছাত্র রাজনীতিতে যে আর্থিক সুবিধা নেয়ার রাজনীতি শুরু হয়েছে, সেই কার্যক্রম থেকে দেশ বেরিয়ে না আসার কারণে রাজনীতির মূলধারার যে বিপর্যয় তা থেকে এখনও বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি উদ্বেগজনক। ১৯৯০ সালের পর রাজনীতির মূল মঞ্চে এসে হাজির হলেন অবসরপ্রাপ্ত আমলা, সেনাবাহিনীর লোকেরা এবং ব্যবসায়ীরা। ফলে এরা যখন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হয়েছে তারা দেশের কল্যাণে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। যে সাধারণ ছাত্র দেখছে তার সহপাঠিরা ছাত্র সংগঠনের ছত্রছায়ায় থেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতাধর হচ্ছে তখন তারা অসহায় হয়ে পড়ে। কিছু স্বার্থবাদি দল হীনস্বার্থে সংবিধানকে পরিবর্তন করে ধর্মীয় মৌলবাদের রাজনীতি শুরু করে। আর আজকের সন্ত্রাসের মূলে লুকিয়ে আছে সেই ধারা যেখানে লোভে পড়ে রাজনীতি তার গতি হারিয়েছে। রাজনীতি মানে হয়ে পড়েছে পকেট ভারি করার প্রক্রিয়া। তাই তো সন্ত্রাসীরা ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে যে কোন ধরনের নাশকতা করতে দ্বিধা বোধ করেনা। বর্তমান বার্ণ ইউনিটের আর্তনাদ তাই থামানো যাচ্ছেনা। পেট্রোলবোমায় দগ্ধ করে যে নাশকতা, সেই সুযোগে তৃতীয় কোন শক্তি ক্ষমতায় আসুক বর্তমান বিরোধীজোট তাই চাইছে। তাহলে তারা দুটি বিষয় বাস্তবায়ন করতে পারবে, তা হলো বর্তমান আওয়ামী লীগ জোট যারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, অর্থনৈতিক গড় প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যের হার ও মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে অভুতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে আর নিজেদের অপকর্ম থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে প্রবাহিত করা যাবে। তাই তারা বার বার বার্ণ ইউনিটের আর্তনাদ বাড়াতে সচেষ্ট। বিরোধীজোটের কাছে অনুরোধ, এভাবে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনকে ক্ষতবিক্ষত করবেন না। বরং দেশ ও জাতির স্বার্থে গণতান্ত্রিকভাবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ করে, মৌলবাদের লেবাস থেকে বেরিয়ে এসে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আদর্শগত জনগণের রাজনীতিতে ফিরবে সেটাই প্রত্যাশা। নাজনীন বেগম আসাদ এভিনিউ, ঢাকা।
×