ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাখি হয়ে যায় প্রাণ

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৫

পাখি হয়ে যায় প্রাণ

পাখির কণ্ঠে আপনি জাগে আনন্দ। আর সেই আনন্দের সুর শুনতে পান কবি। পাখির ডানায় ভর করে কবির মন উড়ে চলে কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে আকাশ প্রান্তরে। উদার আকাশ আর বিস্তীর্ণ প্রান্তরজুড়ে পাখিদের আনাগোনা। তবে শীত মৌসুমে খালবিল নদীনালা বৃক্ষজুড়ে পাখিদের কলরব অবিমিশ্র আনন্দ সৃষ্টি করে। নীড়ের পাখিরা উড়ে যায় দূর-দূরান্তে। প্রকৃতির আবাহনে প্রকৃতির মাঝে নিজেদের শান্ত নীড় গড়ে তোলা পাখিরা চায় খাদ্য আর নীরব নিবিড়তা। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, বাস্তুস্থানিক সঙ্কট, জলবায়ু পরিবর্তন পাখিদের আরও বেশি করে অভিবাসী করে তুলেছে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে তাই আরেক প্রান্তে ছুটে চলে তারা। খাবারের সন্ধানে দিগদিগন্ত পাড়ি দেয়। বাংলাদেশে শীত মৌসুমে অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখিদের আগমন ঘটে। টাঙ্গুয়ার হাওড়, বাইক্কা বিল, হাকালুকি হাওড়, কুলীক পাখিরালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের নদীকূলবর্তী চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পাখি আসে। এরা বেড়াতে নয়, আসে শীতের প্রকোপ থেকে মুক্তি; খাদ্যের সহজলভ্যতা আর বংশ বৃদ্ধির জন্য। পরিযায়ী পাখিদের যে নামেই ডাকা হোকÑ অতিথি পাখি, গেস্ট বার্ড বা বিদেশী পাখি, তারা মূলত ভিনদেশ থেকে আসা। এর মাঝে অবশ্য স্বদেশীরাও রয়েছে। বিশ্বের প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১৮৫৫ প্রজাতিই পরিযায়ী। এই পাখিরা প্রায় প্রতিবছর পৃথিবীর কোন এক বা একাধিক দেশ বা অঞ্চল থেকে বিশ্বের অন্য কোন দেশ বা অঞ্চলে চলে যায়, বিশেষত শীত ঋতুতে। ঋতু শেষে আবার ফিরে যায় যেখান থেকে এসেছিল সেখানেই। উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ পরিযায়ী পাখি বসন্তকালে উত্তরে আসে অত্যধিক পোকামাকড় আর নতুন জন্ম নেয়া উদ্ভিদ ও উদ্ভিদাংশ খাওয়ার লোভে। এ সময় খাদ্যের প্রাচুর্যের কারণে এরা বাসা বানায় এবং বংশ বৃদ্ধি ঘটায়। মূলত বছরের কয়েক মাস তারা ভিনদেশে বাস করে। তারা নিজ দেশে বাস করে স্বল্প সময়। এই পাখিরা মূলত জীববৈচিত্র্যের দূত। জলবায়ুর পরিবর্তনের ব্যাপকহার মানুষের যেমন, তেমনি পাখিদের আবাসস্থলও ধ্বংস করে ফেলেছে। এ কারণে অতিথি পাখিরা মারাত্মক খাদ্য সঙ্কটের মধ্যে পড়ছে। শঙ্খচিল শালিকের বেশে পাখি আবাসের ব্যবস্থাও করুণ। ওদিকে অতিথি পাখি নিধন থেমে নেই। কিছু শিকারী গোপনে তাদের শিকার চালিয়ে যাচ্ছে। আবার নদী বা হাওড়ের দু’ধারে গাছগাছালিতে বসবাসরত অতিথি পাখিদের আনন্দ নীরবতা ভেঙ্গে যায়, যখন যান্ত্রিক জলযানগুলো বিকট শব্দ করে ঢেউ খেলিয়ে চলাচল করে। এতে যে পাখিদের বিড়ম্বনা, বিরক্তি বাড়ে শুধু তাই নয়, ভীতিও জাগে। মানুষের হাতে পাখিদের প্রাণ কত যে সহজলভ্য, তা শহরের রাস্তায় কখনও-সখনও দেখা যায়। সত্তর দশকে কবি আবুল হাসান লিখেছিলেন, ‘পাখি হয়ে যায় এই প্রাণ’। পাাখিদেরও রয়েছে নিজস্ব জীবনবোধ ধারা, কর্তব্যকর্ম, সংসার যাপন, সন্তান উৎপাদন, লালন-পালন, পরিচর্যা। তাতে মানুষের উৎপাত বন্ধ হওয়াটাই সমীচীন।
×