ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমবাজারে সুবাতাস

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

শ্রমবাজারে সুবাতাস

নতুন বছরের শুরুতে বৈদেশিক শ্রমবাজারে সুবাতাস বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস মিলেছে। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরের চেষ্টা চলে আসছে নানাভাবে। তবে এই জনসম্পদ বৈদেশিক শ্রমবাজারে নিযুক্ত না হতে পারলে তা একদিকে সম্পদের অপচয়, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়ায়। আশার কথা হচ্ছে সাত বছর পর আমাদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাচ্ছে বলে সেদেশের সরকারী তরফ থেকে সুসংবাদটি মিলেছে। বলতেই হবে তেলসমৃদ্ধ দেশটির শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশী শ্রমিকরা এখন মাত্র ২০ হাজার টাকায় সৌদি আরব যেতে পারবেন। সরকারী হিসাবে বর্তমানে ১২ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশী সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। ২০০৮ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক নিত সৌদি আরব। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার সুযোগ দেয় সৌদি আরব। এরপর ওই বছরের মে থেকে নবেম্বর পর্যন্ত সাত লাখ ৯৯ হাজার ১৮৬ অবৈধ কর্মীকে বৈধ করা হয়। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার মূলত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিকÑ সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর বাইরের বড় বাজার হলো মালয়েশিয়া। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাসহ বিভিন্ন কারণে বিগত কয়েক বছরে শ্রমবাজার কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে এসেছিল। সেই অবস্থা থেকে আবার বাংলাদেশ সামনের দিকে এগোতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। আশার কথা বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে সচেতন। বিদেশে কাজ করতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের একটি ডাটা সেন্টার তৈরি করেছে সরকার। এতে ২২ লাখের বেশি লোক নিবন্ধিত হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও হংকংয়ে যাওয়া অচিরেই শুরু হতে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনশক্তি রফতানি বাড়াতে প্রচলিত শ্রমবাজারের বাইরে ১৬টি দেশের তালিকা করা হয়। এ দেশগুলো হলো : জাপান, হংকং, তাইওয়ান, ইতালি, বেলজিয়াম, জার্মানি, স্পেন, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, চেকসেøাভাকিয়া, পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও জিম্বাবুয়ে। এই দেশগুলোর পরিস্থিতি দেখতে প্রবাসী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে পাঁচটি দলও গঠন করা হয়। অবশ্য এখন পর্যন্ত আমরা এই ১৬টি দেশে উল্লেখ করার মতো শ্রমবাজার তৈরিতে সমর্থ হইনি। পরবর্তীকালে নতুন করে মরিশাস, কম্বোডিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশ এবং কানাডার মতো কয়েকটি উন্নত দেশে শ্রমবাজার সন্ধানের প্রক্রিয়া শুরু হয়। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রার অন্তত পঞ্চাশ ভাগ অর্জনের পথে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়। কিছুদিন আগে সারাবিশ্বে নতুন শ্রমবাজার খুঁজে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়ার তাগিদ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ এক্ষুনি নেয়া দরকার। শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শ্রমশক্তি তৈরি করার কাজটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে শ্রমবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলমান রয়েছে। এই সঙ্গে ভাষাগত প্রশিক্ষণ প্রদানও জরুরী। রিক্রুটিং এজেন্সি, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে কূটনৈতিক মিশনÑ সব পক্ষের সহযোগিতা ও সমন্বয় সম্ভব হলে আগামীতে বৈদেশিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
×