ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে ॥ কেউ কেউ দুগ্ধপোষ্য শিশুর খাবার যোগাতেও ব্যর্থ

অবরোধের ধাক্কা সামাল দিতে হিমশিম রংপুরের পরিবহন শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধের ধাক্কা সামাল দিতে হিমশিম রংপুরের পরিবহন শ্রমিকরা

মানিক সরকার মানিক, রংপুর থেকে ॥ টানা অবরোধে রংপুর থেকে ঢাকাগামী ও অভ্যন্তরীণ সকল রুটের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। কাজ বন্ধ থাকায় কোন রোজগার করতে না পারায় এসব শ্রমিকের অনেকেই এখন খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কেউ কেউ শিশুখাদ্য এবং বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় চরম অসহায়ত্বের মুখে। কেউবা জীবন বাঁচানোর তাগিদে ভিন্ন পেশা হিসেবে রিকশা কিংবা ভ্যান চালানোর মতো কষ্টসাধ্য কাজ বেছে নিলেও সেসবে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। এ অবস্থায় শ্রমিকদের অনেকেরই দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। অন্যদিকে পরিবহন মালিকরাও পড়েছেন চরম এক অনিশ্চয়তার মুখে। প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকা লোকসানের পাশাপাশি তাদের গুনতে হচ্ছে ব্যাংকের বাড়তি সুদও। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ চায় সকলেই। রংপুর থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন অন্তত ৫শ’ বাস এবং ১৫শ’ ট্রাক চলাচল করে থাকে। এসব যানবাহনে কাজ করে অন্তত দুই লক্ষাধিক শ্রমিক। গত ৪ জানুয়ারি থেকে যান চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা এখন পুরোপুরিই বেকার। বাঁচার তাগিদে কেউ কেউ রিকশাভ্যান কিংবা অন্য কোন পেশায় যুক্ত হবার চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হচ্ছেন। অভ্যস্ত না হওয়ায় সেসব কাজও তেমন করতে পারছে না। মোটর শ্রমিক মফিজার জানান, তিনি দিন আনেন দিন খান। অবরোধের কারণে কাজ বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিনে মুদি দোকানে তার সাড়ে বারো হাজার টাকা বকেয়া পড়েছে। এখন ওই দোকানিও আর তাকে বাকি দিতে চাইছেন না। এ অব্স্থায় কী করে চলবেন তিনি জানেন না। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অবিলম্বে অবরোধ তুলে না নিলে শ্রমিকরা পথে নামবেন আন্দোলনে। আর শ্রমিকরা নামলে সরকার কিংবা বিরোধীদল কেউই পালাবার পথ পাবে না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে হেলপার সাগরের স্ত্রী রুমানা বেগম জানান, দুগ্ধপোষ্য শিশুর দুধ ফুরিয়েছে। নিজেরা এক বেলা খাই না খাই বড় কথা নয়, ওই শিশুর দুধ এবং বাড়ি ভাড়ার টাকা দিতে পারছি না। তার শিশুর খাবার যোগাতে না পারলে এবং অবরোধ প্রত্যাহার না করলে তিনি আত্মহত্যা করার হুমকি দেন। অন্যদিকে কামারপাড়ার মোটর শ্রমিক আনোয়ারের স্ত্রী রুবানা বেগম জানান, তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখনও ভর্তি করাতে পারেননি তিনি। শুধু যে পরিবহন শ্রমিকরাই সঙ্কটে পড়েছে তা নয়। জেলার ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ড এবং বিভিন্ন রুটের বাস টার্মিনাল ঘিরে গড়ে ওঠা হোটেল- রেস্তরাঁ ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন চরম বেকায়দায়। যানবাহন বন্ধ থাকায় এবং যাত্রীর আসা-যাওয়া না থাকায় প্রতিনিয়ত তাদেরও গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের লোকসান। তারা জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদেরও ব্যবসা গোটাতে হবে। কিন্তু সেই অন্য কোথাও গিয়েই তারা কি করবে, তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায়। এদিকে জেলা মোটর মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এজাজুল ইসলাম রাজু জানান, রংপুর থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫শ’ বাস এবং ১৫শ’ ট্রাক ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করে থাকে। এসব বাস-ট্রাক থেকে গড়ে তাদের প্রতিদিন ৫০ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে। কিন্তু অবরোধের কারণে প্রতিদিন তাদের এই টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এর বাইরে ব্যাংক ঋণের সুদও দিতে হচ্ছে তাদের। তিনি জানান, তারা তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে না পারলেও মেনে নিতে হচ্ছে। তবে পরিবহনের সঙ্গে যেসব শ্রমিক আছেন তারা আজ পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে বসেছেন। তিনি জানান, কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি বের করে পেট্রোলবোমার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। এ অবস্থা কী করে মেনে নেয়া সম্ভব বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
×