ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২২ দেশের আলোকচিত্র দেশ বিদেশের অতিথি ঢাকাজুড়ে উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

২২ দেশের আলোকচিত্র দেশ বিদেশের অতিথি ঢাকাজুড়ে উৎসব

মোরসালিন মিজান ॥ আলোকচিত্র প্রদর্শনী-ই বটে। তবে এত বড় আর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের যে, অবাক না হয়ে পারা যায় না। আলোকচিত্রীর দেখার চোখ, ইতিহাস সংরক্ষণের তাগিদ, ক্যামেরার ব্যবহার, নান্দনিকতার বোধ- সবই মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। ছবি নয় শুধু, ক্যামেরার মাধ্যমে ঘটনাবহুল সময়কে তুলে ধরেছেন আলোকচিত্রীরা। পৃথিবীর কোথায় অন্যায়-অসঙ্গতি, কোন প্রান্তে দুর্বিসহ জীবন, প্রেম কোথায়, মানবিক মানুষ কী নিয়ে ভাবছে- দেয়ালে টাঙানো ছবি সব বলে দিচ্ছে। আয়োজনটির নাম- ছবিমেলা। এশিয়ার সবচেয়ে বড় আলোকচিত্র উৎসব শুক্রবার থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে। প্রতি দুই বছর অন্তর এ উৎসব আয়োজন করে দৃক গ্যালারি ও পাঠশালা। প্রথম আসরটি বসেছিল ১৯৯৯ সালে। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে অষ্টম আসর। বরাবরের মতোই এ আয়োজনে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত আলোকচিত্রী ও আলোকচিত্র প্রেমীরা। বিশাল এ আয়োজন উপলক্ষে এখন সরব রাজধানীর অধিকাংশ গ্যালারি। উদ্বোধনী দিন বেলা ২টার পর থেকেই আলোকচিত্র প্রেমীরা এসে জড়ো হতে থাকেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। এখান থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ তাঁরা যান উৎসবের প্রধান ভেন্যু শিল্পকলা একাডেমিতে। তারও আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে ছিল এ জায়গা। কারণ উৎসব উদ্বোধন করতে আসবেন রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী। এ উপলক্ষে দিনের প্রথম ভাগ থেকেই এ এলাকায় অন্যরকম উষ্ণতা ছড়াচ্ছিল। বাইরে ছিল বেশ কড়াকড়ি। জোরদার নিরাপত্তা। এর মাঝেই ছড়িয়ে পড়ছিল উৎসবের রঙ। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আগমনের ফলে এ উৎসব বিশেষ মর্যাদা পায়। আভিজাত্য যোগ হয়। বিকেলে জাতীয় নাট্যশালায় ছবিমেলা ২০১৫ উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেনÑ সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, নিউ ইয়র্ক টাইমসেরর জ্যেষ্ঠ আলোকচিত্রী জেমস এস্ট্রিন ও জিও ম্যাগাজিনের পরিচালক রুথ এইকর্ন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব পরিচালক শহিদুল আলম। আলোচনা ছাড়াও, অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় পাঁচ আলোকচিত্রীকে। এঁরা হলেনÑ আনোয়ার হোসেন, ল্যারি টওয়েল, জেমস এস্ট্রিন, ডেনিস ডেইল্যাক্স ও ক্রিস্টিনা নূনেজ। প্রত্যেকের হাতে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রপতি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পাশের জাতীয় চিত্রশালা প্লাজায় যান তিনি। ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা সাজানো হয়েছে ছবিমেলার ছবি দিয়ে। আগ্রহ নিয়ে এসব ছবি দেখেন রাষ্ট্রপতি। ছবি মেলার এবারের বিষয়বস্তুÑ অন্তরঙ্গ বা ইন্টিমেসি। বিষয়ের ওপর ২২ দেশের ৩০ জনের অধিক শিল্পী কাজ করেছেন। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, রাশিয়া, ইউক্রেন, স্পেন, সিঙ্গাপুর, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ইতালি, ইরান, তুরস্ক, নাইজেরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ইজিপ্ট, এস্টোনিয়া ও গুয়াতেমালা। স্বনামধন্য আলোকচিত্রীরা আর্টিস্ট টক, পোর্টফোলিও রিভিউ পর্বে অংশ নেবেন। সঞ্চালনা করবেন বিভিন্ন কর্মশালা। শিল্পকলা একাডেমি প্রধান ভেন্যু হলেও, উৎসব মোটামুটি সারা ঢাকায় ছড়িয়েছে। একযোগে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে দৃক গ্যালারি, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, আলিয়ঁস ফ্রসেজ, চারুকলার বকুলতলা, বিউটি বোর্ডিং, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, বৃত্ত আর্টস ট্রাস্ট, ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসঙ্কট ও নর্থব্রুক হলে। গ্যালারির বাইরেও ছড়িয়ে দেয়া হবে প্রদর্শনী। খোলা রাস্তা ও প্রধান সড়কে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আয়োজন। ১০টি রিক্সাভ্যানে করে বিশেষ ব্যবস্থায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। রাজধানী ঢাকার ব্যস্ত রাজপথ, শপিংমল, অফিস, অলি-গলি সর্বত্র ঘুরে বেড়াবে আলোকচিত্রে সাজানো ভ্যান। আয়োজকরা জানান, ছবিমেলা চলাকালীন সময় দশটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। ‘শেপিং এ্যা ভিশন’ শীর্ষক কর্মশালা পরিচালনা করবেন ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর বিচারক এবং ভারতীয় বিজ্ঞাপনী আলোকচিত্রে তথ্যচিত্রের নন্দনতত্ত্বর অগ্রণী ব্যক্তিত্ব স্বপন পারেখ। এ কর্মশালায় অংশ নিয়ে তরুণ আলোকচিত্রীরা আলোকচিত্রের ব্যাপারে তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। অপর কর্মশালা ‘দ্যা ফটোবুক : গোয়িং বিয়ন্ড দ্যা ফর্ম’ পরিচালনা করবেন হেইডেনস কারওয়াইয়ের টিউন ভ্যান ডার হেইডেন। আলোকচিত্রের বই তৈরির ওপর কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হবে। সব মিলিয়ে বড় ও সমৃদ্ধ একটি আয়োজন। ব্যক্তিগত উদ্যোগ হলেও, এ উৎসব বাংলাদেশের হয়ে ওঠেছে। ছবিমেলা-২০১৫ চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
×