ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান গণজাগরণ মঞ্চের

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান গণজাগরণ মঞ্চের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লাসহ দেশজুড়ে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। সেইসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরসহ অন্যদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়েছে মঞ্চের পক্ষ থেকে। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যাসহ চলমান সহিংস রাজনীতির প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৩Ñ৫টা পর্যন্ত সারাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ও গণঅবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে সহিংসতা, মানুষ হত্যার প্রতিবাদে ও কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিতে শুক্রবার প্রজন্ম চত্বরে গণঅবস্থান ও আলোর মিছিলের আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ। এতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। সন্ধ্যায় প্রজন্ম চত্বর থেকে মোমবাতি হাতে আলোর মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রদক্ষিণ শেষে আবারও শাহবাগে ফিরে আসে। দেশের জেলা ও উপজেলাসমূহে, যেখানে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচী পাতিত হতো সেখানেই হবে মঙ্গবারের অনুষ্ঠান। এছাড়াও পাড়া-মহল্লা-উপজেলাও জেলা পর্যায়ে অন্যান্য সংগঠনের ব্যানারে স্ব-স্ব এলাকায় শহীদ মিনারে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ও গণঅবস্থান আয়োজনের আহ্বান করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান বলেন, সরকারের ছয় বছরে একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। অন্যদের বিচার ঝুলে আছে। পাঁচ জানুয়ারি থেকে রাজনীতির নামে মানুষ হত্যার মহোৎসব চলছে এ কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, পেট্রোল ঢেলে মানুষ জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। নির্মামভাবে হত্যা করা হচ্ছে শিশুদের। এ অবস্থা একটি স্বাধীন দেশে চলতে পারে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে; এখন ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা নেই। দেশের সর্বত্র এখন আতঙ্ক এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে আমরা দিন পার করছি। ক্ষমতাসীন দল ও সরকার জান ও মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শান্তি ও স্বস্তি নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যের হামলা হচ্ছে। নাশকতা চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ নিরাপত্তাহীন এ কথা উল্লেখ করে ইমরান এইচ সরকার বলেন, মানুষের নিরাপত্তা দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। তেমনি রাজনীতির নামে মানুষ হত্যা বন্ধের জন্য বিরোধী জোটকে বাধ্য করতে হবে। চলমান নাশকতারোধে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে একজনকে সমন্বয়ক করে পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। যারাই হত্যার কর্মসূচী ঘোষণা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজপথে অবস্থান নিতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে মঞ্চের পক্ষ থেকে বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে এ কথা উল্লেখ করে ইমরান বলেন, সকল গণতান্ত্রিক শক্তি, রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিদের সহিংসতারোধে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ো তোলা হবে। কর্মসূচীতে ভারত-নেপাল ও আমেরিকার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ড. আবুল বারকাত বলেন, আমরা আর হারানোর দলে থাকতে চাই না। সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে কাউকে হারাতে চাই না। তিনি বলেন, গ্রামে-গ্রামে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধের শক্তি গড়ে তুলুন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানান তিনি। রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে মানুষ হত্যার দায়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী বলেন, বর্তমান সরকারের একটি ব্যর্থতা হলো খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করা। তিনি বলেন, তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমরা এ সংকটকালের মুক্তি চাই। সকল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের এখন যে সকল হত্যকা- হচ্ছে তা সবই পরিকল্পিত। এর দায় খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। বাংলাদেশ হবে সন্ত্রাসমুক্ত। অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুজাতা দে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ মৌলবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। চেতনায় সরব। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না। মৌলবাদের বিরুদ্ধে এদেশের তরুণ সমাজ যে আন্দোলন গড়ে তুলেছে তা বিশ্বের মধ্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের দিকে সবাই তাকিয়ে। মৌলবাদ, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে এতবড় আন্দোলন-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এই দেশ; এ কথা অনেকের কাছে এখন বিস্ময়। তিনি বলেন, মৌলবাদ নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক নাসিমুন হক আরা মিনু, রওশন আরা প্রমুখ।
×