ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শনিবারের মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহারের আলটিমেটাম

খালেদার অফিস ঘেরাও করলেন দিনমজুর ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

খালেদার অফিস ঘেরাও করলেন দিনমজুর ক্ষুদে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে কোদাল, ঝুড়ি নিয়ে বেগম জিয়ার গুলশান অফিস ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেছে শ্রমজীবী খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষ। শুধু কোদাল-ঝুড়ি নয়, ফুলকপি, লালশাক, ডাঁটাশাক, টম্যাটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ কলি, মুলা হাতেও ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ীরা অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে বেগম জিয়ার অফিসমুখে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে সাধারণ শ্রমিকরা খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও ও বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে। এ সময় তারা অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে। এমনকি হরতাল-অবরোধে যে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তারও ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। বৃহস্পতিবার বেগম জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে অংশ নেয়া বাংলাদেশ শ্রমিক পরিবহন লীগের পক্ষ থেকে আগামীকাল শনিবারের মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দুদিনের মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহার করা না হলে ২৫ তারিখ থেকে বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের দাবিতে আমরণ অনশনের হুমকি দেয়া হয়। এ সময় তারা লাগাতার অবরোধ- হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দেয়Ñপেটে লাথি মেরো না, তুলে নাও অবরোধ, আমার বাবাকে পুড়িয়ে মারা হলো কেন। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের পক্ষ থেকেও বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মারার হুকুমের আসামি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয় এ সময়। সকাল ১০টা থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, খেটেখাওয়া নগরবাসী, গুলশান থানা ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যনারে মিছিল নিয়ে বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয় ঘেরাওয়ের চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশী বাধার মুখে তারা গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করে এবং হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে সেøাগান দেয়। দিনমজুরের বিক্ষোভ মিছিল ॥ বেলা ১টার দিকে খেটেখাওয়া নগরবাসীর ব্যানারে কয়েক শ’ দিনমজুরের একটি দল কোদাল- ঝুড়ি নিয়ে বেগম জিয়ার কার্যালয়ের কাছাকাছি চলে যায়। এ সময় তারা পুলিশের কাছে কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকার অনুমতি চায়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চান। পুলিশ তাদের বাধা দিলে এক পর্যায়ে তারা সেøাগান দিতে থাকেÑঅবরোধ কর্মসূচী মানি না, মানব না। বেগম জিয়া কেন এমন কর্মসূচী দিয়েছেন। এ কর্মসূচী প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে ভাত-কাপড় দিতে হবে। তারা জানান, ৬ জানুয়ারি অবরোধের পর থেকে খেটেখাওয়া মানুষ কোন কাজ পাচ্ছে না। খাওয়াদাওয়া এমনকি বাসা ভাড়া দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। অবরোধের পর থেকে মাত্র কয়েকদিন কাজ করেছেন। তারা নিজেকে শ্রমিক পরিচয় দিয়ে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে এখানে এসেছেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল ‘আমি কাজে যেতে চাই, আমার বাবাকে পুড়িয়ে মারলে কেন’ লেখা ব্যানারসহ কোদাল ও বাঁশের ঝুড়ি। মিছিলে অংশ নেয়া দিনমজুররা আরও জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে কাজ না থাকায় পরিবারের লোকজন না খেয়ে আছে। তাই তারা হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে এ মিছিল করছেন। তারা বলেন, এ মিছিল বিএনপি বা সরকারের বিরুদ্ধে নয়। উভয়ই পক্ষের কাছেই আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই। শ্রমিক সংগঠনের বিক্ষোভ ॥ এদিকে বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক লীগ ও গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠনের কয়েক শ’ নেতাকর্মী গুলশান গোলচত্বর থেকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশী বাধার মুখে তারা গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে থাকে। সমাবেশে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী বলেন, আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে খালেদা জিয়া অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহার না করলে তার গ্রেফতার দাবিতে ২৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণঅনশন কর্মসূচী পালন করা হবে। এর আগে বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক লীগ ও গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের নেতাকর্মীরা সকাল দশটা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে গোলচত্বরে জড়ো হতে থাকে। এছাড়াও বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় রিকশাভ্যান শ্রমিক লীগ, ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারেও বিভিন্ন শ্রমজীবী সাধারণ মানুষকে বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ সমাবেশে সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে বসে অবৈধ অবরোধে জ্বালাও পোড়াওয়ের হুকুম দিচ্ছেন। উনি এই পথ থেকে সরে না এলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের পক্ষ থেকে এ সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দেয়া হয়। এদিকে ঘেরাওয়ে অংশ নিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত গাড়ি চালক সমিতি, ওলামা লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা প্রেসক্লাব থেকে কাকরাইল হয়ে গুলশানের দিকে যাওয়ার পথে মালিবাগ মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এরপর নেতাকর্মীরা সেখানেই বসে পড়েন এবং খালেদা জিয়া ও তার কর্মসূচীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সবজি নিয়ে বিক্ষোভ ॥ এদিকে বেলা ২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সড়কে ফুলকপি, লালশাক, ডাঁটাশাক, টম্যাটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ কলি, মুলা হাতে বিক্ষোভ করেছেন ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর সড়কের উত্তর পাশে সবজি বিক্রেতারা সেখানে জড়ো হন। তারা সেখানে ফুলকপি, লালশাক, ডাঁটাশাক, টম্যাটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ কলি, মুলা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে সেøাগান দিতে থাকে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া সবজি বিক্রেতা ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা জানান, অবরোধের কারণে আমাদের সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনের কারণে আমাদের কোন কাজ নেই। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য আমরা খালেদা জিয়ার কাছে এসেছি ক্ষতিপূরণের দাবিতে। ক্ষতিপূরণ দিতে না পারলে অবরোধ তুলে নিতে হবে। এদিকে বিভিন্ন সংগঠনের বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয় ঘেরাও উপলক্ষে সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। জোরদার করা হয় গুলশান-২ ও ৮৬ নম্বর রোডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীকে পুলিশ গুলশান-২ গোলচত্বরে আটকে দেয়। পরে তারা পুলিশী বাধার মুখে সেখানে বসেই বিক্ষোভ সমাবেশ মিছিল করতে থাকে। গুলশান থানার পরিদর্শক ফিরোজ আহমেদ জানান, নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার সব ব্যবস্থায় নেয়া হয়েছে কর্মসূচী ঘিরে। গত ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে খালেদা জিয়া সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেন। অবরোধে সহিংসতার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাসে অগ্নিসংযোগ, জ্বালাওপোড়াওয়ের মতো কর্মসূচী অব্যাহত। অবরোধের মধ্যে পুলিশের দমনপীড়নের অভিযোগে বুধ-বৃহস্পতিবার ঢাকায় হরতাল পালন করেছে ২০ দলীয় জোট। এ অবস্থায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য বুধবার বেগম জিয়ার গুলশান কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
×