ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তপোন্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তপোন্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ঠিক কেন অবরোধ? কতদিন চলবে? কারও জানা নেই। তবে চলছে। অবারোধ অব্যাহত রেখেছেন রাজনীতির লোকেরা। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অনড়। তাঁর গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। নেত্রী তবু ঘরের দরজা খুলে একবার বাইরের আলো দেখেননি। ওখানে থেকেই ‘আন্দোলন’ জারি রেখেছেন। ভয়ঙ্কর সেই আন্দোলনের বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকাতেও চলন্ত গাড়ি লক্ষ্য করে ছোঁড়া হচ্ছে পেট্রোল বোমা। চোখের সামনে জলজ্যান্ত মানুষের শরীরে আগুন ধরে যাচ্ছে! গাড়ি জ্বলছে দাউ দাউ। নারী শিশু পর্যন্ত এ ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। অথচ যারা এ বর্বরতম হত্যাকা- পরিচালনা করছেন তারা টেলিভিশনের সামনে দাঁড়িয়ে প্রেসকনফারেন্স করে লিখিত ও কথ্য ভাষায় গুছিয়ে বলছেন, দায়ি সরকার! অথচ, বুধবারও রাজধানীর মহাখালীতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটি মেস থেকে ১৩০টি হাতবোমা, দুই লিটার পেট্রোল, বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ জঙ্গী সংগঠনের পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই দিন লালবাগে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে আহত হয় নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের সভাপতি বাপ্পী। লালবাগে ভগ্নিপতির বাড়িতে বসে বোমা বানাচ্ছিল সে। অন্যের প্রাণ নিতে তৈরি বোমার আঘাতে বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে অপরিণামদর্শী বোমাবাজের। এদিকে, নির্মম নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যার তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে ঢাকায়। ফুঁসে ওঠছে মানুষ। এখন প্রতিদিনই বিক্ষোভ সমাবেশ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজনীতির নামে স্বাধীনতাবিরোধীদের মানুষ পোড়ানোর প্রতিবাদ জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সকালে অপরাজেয় বাংলার সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষক সমিতি। কাছাকাছি সময়ে শাহবাগে প্রতিবাদ জানায় বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ। জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন তাঁরা। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরাও কয়েকদিন আগে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই দাবিতে আজ শুক্রবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সারাদেশের শহীদ মিনারে এ প্রতিবাদ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিশেষ দৃষ্টি কাড়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচী। অবরোধে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বৃহস্পতিবার এ কর্মসূচী পালন করে। কার্যালয় অভিমুখে যাওয়ার পথে পুলিশের বাঁধায় গুলশান-২ নম্বরে সমাবেশ করেন তাঁরা। সেখান থেকে অবরোধ তুলে নিতে খালেদা জিয়াকে শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন। অবরোধে গাড়িতে আগুন দিয়ে চালক-শ্রমিকদের হত্যার ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারেরও দাবি জানানো হয়। তা না হলে ২৫ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন শুরু করবে পরিবহন শ্রমিকরা। অব্যাহত প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় শনিবার বার্ন ইউনিটের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করবে অনলাইনে সংগঠিত হওয়া তারুণ্য। একই দিন ‘থামাও সহিংসতা’ শিরোনামে প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি প্রতিবাদ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে। সব মিলিয়ে অচিরেই অন্ধকার কেটে যাবে বলে আশা করছেন রাজধানীর সাধারণ মানুষ।
×