ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বার্ন ইউনিটে হত আর দগ্ধের মিছিল ॥ অনলের রাজনীতি

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

বার্ন ইউনিটে হত আর দগ্ধের মিছিল ॥ অনলের রাজনীতি

রশিদ মামুন ॥ দুই মাসের অবোধ সামিয়া প্রথম বুলিতেই হয়তো আর চার মাস পরে বা বা বা বা...বাবা বলে ডেকে উঠবে। কিন্তু কেউ সেই ডাকে সাড়া দেবেন কি-না তা ক্রমেই অনিশ্চয়তায় আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে। সহিংস আর অনাচারের রাজনীতি সামিয়ার পোশাক শ্রমিক বাবা বিলাল হোসেনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে। এখানের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বেশিরভাগ পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে বেলাল মৃত্যুকে পরাজিত করতে অবিরাম লড়াই করছেন। জীবন মৃত্যুর প্রান্তবিন্দু থেকে ফিরে আসা বেলালের জন্য সহজসাধ্য নয়। বেলাল যদি হেরে যান সামিয়ার ভবিষ্যতটা রঙ হারাবে। কেউ ভালবেসে মা বলে ডাকবে কি কখনও? সামিয়া কার কাছে আবদার করবে? ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো মনের আড়ালে ডুকরে কেঁদে আপনা থেকে মিলেয়ে যাবে। মলিন মুখটা হাসিতে খুশিতে ভরিয়ে দিতে কেউ হয়তো মাথায় হাত রেখে কিংবা গাল টিপে আদর দিয়ে বলবে না আমি আছিতো মা। এমন আশঙ্কা, হতাশা আর দীর্ঘনিশ্বাস এখানের সকলের। সন্তান সম্ভাবা শিল্পী, আগামী মাসেই নতুন অতিথির আলোর মুখ দেখার দিনক্ষণ ঠিক রয়েছে। এর মধ্যেই ট্রাকচালক স্বামী আরমান পেট্রোল বোমায় ঝলসে গেল। শান্ত আর শাহিনের পর আরও একজন আসছেন। তিনজনকে নিয়ে কীভাবে চলবেন শিল্পী। সরকার না হয় এখন চিকিৎসা ব্যয়টা দিচ্ছে কিন্তু সংসারের খরচটা। বাড়িভাড়া, দুবেলা দুমুঠো খাবার, ওষুধ পথ্য মিলিয়ে খরচ কী কম! আরমান যতদিন পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে উঠবেন, যতদিন কাজে না যেতে পারবেন ততদিন চলবে কী করে? হরতাল আর অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বিচারে মানুষ পুড়িয়ে মারার খেলায় মেতেছে। এভাবে এই দেশে প্রতিনিয়ত মাধারণ মানুষ পুড়িয়ে অতীতে কোন দল রাজনীতি করেনি। যদিও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এর দায় সরকারের উপর চাপিয়ে বলছেন এটা তাঁদের কারসাজি। সম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয় বিরোধীদলের অবরোধ ডাকার সঙ্গে সঙ্গে দেশে সহিংস ঘটনা ঘটছে। কাজেই এর দায় তার ওপরও বর্তায় কি না। প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বিএনপি নেত্রী তড়িঘড়ি ওই সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন। অন্যদিকে সরকারপক্ষ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট কঠোর না হওয়ায় দুর্বৃত্তপনা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর কেউ কেউ বলছেন, সরকার এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণই করছেন। আর কতজন মানুষ মরলে তাঁদের এ পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম শেষ হবে। শেষমেষ বুধবার সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিলে অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তাও ২৯টি প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর। অন্যদিকে অভিযোগের পর অভিযোগ করে আসলেও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর এই সন্ত্রাস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছেন বলে জানা যায়নি। সন্ত্রাস প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ পাড়ায়-মহল্লায় কমিটি করার কথা বললেও এখনও তার বাস্তব প্রতিফলন নেই। একপক্ষের ছুঁড়ে মারা লেলিহান আগুনের শিখা আর অন্যপক্ষের পদক্ষেপ গ্রহণে ক্ষিপ্রতার অভাবে বার্ন ইউনিটের প্রায় সকলের জীবনই গন্তব্য হারিয়েছে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটা হিংসা আর ক্ষমতা লিপ্সার ভয়ঙ্কর রাজনীতির আগুনে পুড়ে খাঁক হয়ে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে খেটে খাওয়া মানুষের সুখের সংসারটাও। ভাল হয়ে বাড়ি ফিরলেও আগের মতো চলাফেরা কাজ-কর্ম করতে পারবেনতো? না সারাজীবন বয়ে বেড়ানোর জন্য জীবনটাই বড় যন্ত্রণার হয়ে উঠবে। এই সভ্য সমাজে কারা নির্মমভাবে মানুষের গায়ে পেট্রোল ছুঁড়ে মারছেন। আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছেন শরীরে। বিবেক কী এদের তাড়িত করে না, না সকলের বিবেক এক সঙ্গে মরে গেছে? মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পেট্রোল বোমায় দগ্ধ নিতাই সরকারের ছোট ভাইয়ের বউ ববিতা ধর এর প্রশ্ন এ রাজনীতির মানে কী? আমাদের মতো গরিবের লাশ পেরিয়ে কেন ক্ষমতায় বসতে হবে। বিভৎস্য আর মানবতাহীন রাজনীতিকে যখন ধিক্ জানাচ্ছিলেন ববিতা ঠিক তখন বড় জা সন্ধ্যা রানীর চোখে মুখে দুশ্চিন্তা, কি হবে মানুষটার? ছুঁড়ে মারা পেট্রোল বোমায় ঝলসে যাওয়া মানুষটার কিছু হয়ে গেলে হয়তো সিঁথির সিঁদুর এতক্ষণে মুছে যেত। ছেলেমেয়ে দুটোকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতেন, সন্ধ্যার জীবনটা শেষমেশ আঁধারে ছেয়ে যেত। সন্ধ্যার উচ্চরণ ভগবানের বড় দয়া মানুষটাকে রেখে গেছেন। অকোটেক্স গ্রুপের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নিতাই সরকার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন সাভার নন্দনের কাছে। সন্ত্রাসীদের ছুড়ে মারা পেট্রোল বোমা মাথায় লাগলে হাত দিয়ে সরাতে গিয়ে মাথার সঙ্গে হাতটাও পুড়েছে। বার্ন ইউনিটের নিচ তলায় অবজারভেশন ইউনিটের নিতাইয়ের পাশের বিছানাতে কাতরে চলা রাজিব কর্মকারের অবস্থা আরও সঙ্কটাপন্ন। কালিয়াকৈর পরিবহনের একই গাড়িতে থাকা রাজিবের মুখের বেশিরভাগ পুড়ে গেছে। ঢাকার মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রাজিবের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে। পাশের বিছানাতে রাজিবের বন্ধু পৃথ¦ীরাজ চক্রবর্তীরও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ব্যান্ডেজ। একই প্রতিষ্ঠানের হিসাববিজ্ঞানে সম্মান শ্রেণীর ছাত্র পৃথ¦ী। সুস্থ হয়ে উঠলেও আগের মতো আর স্বাভাবিক হবে কি-না হাতখানা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে তার। সারাজীবনই হয়তো রাজনীতির লাগিয়ে দেয়া আগুনের এ ক্ষত বইতে হবে পৃথ¦ীকে। রাজিবকে সঙ্গে নিয়ে কালিয়াকৈরে মঙ্গলবার বোনের বাড়িতে যায় পৃথ¦ী। ফেরার পথে সন্ধ্যায় অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় ঝলসে যায় দুই বন্ধ্।ু পৃথ¦ী বলল, আমার শরীরের যন্ত্রণা আমি টের পাচ্ছি। যারা এ বোমা মারে তাদের কারোর এ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না। নির্বিচারে এভাবে মানুষ পুড়িয়ে যাবে, মানুষের কোন নিরাপত্তা থাকবে না এমনটা চলতে পারে না। পৃথ¦ীর মা ঝর্ণা চক্রবর্তী ভীষণ ক্ষুব্ধ। কেন, কেন তাঁদের মতো খেটে খাওয়া মানুষকেই সব সময় বলি হতে হবে। সমাজের উঁচুস্তরের মানুষ যাঁরা ক্ষমতার স্বাদ নেন তাঁদেরতো কোন সময় এ আগুন স্পর্শ করে না। সব সময় তাঁদের মতো গরিব মানুষকে নিয়ে কেন এ খেলা চলে। এভাবে আর কতদিন। কত দিন চলবে। অবজারভেশন ওয়ার্ডের শেষ প্রান্তের বিছানায় বসে থাকা রাহেলা বেগমের কান্না যেন থামছেই না। আর্তনাদের ভাষায় নিজের জীবনের বিনিময়ও করে ফেললেন তিনি। অটোরিক্সাচালক স্বামী রশিদকে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফেরত চাইলেন নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও। সঙ্কটাপন্ন রশিদ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যখন অপারেশন থিয়েটারে তখন বাইরে প্রিয়তমা স্ত্রীর আর্তনাদে চারপাশের বাতাস ভারি হয়ে আসছে। চার বছরের অবোধ শিশু রাহাত বাবার পুড়ে যাওয়া জীবনটা অনুভব করতে পারছেন না। আপন মনে খেলে চলেছে। কিন্তু ছোট্ট শিশুও জানে না বাবা বলে ডাকলে আব্দুর রশিদ আর সাড়া দেবেন কি-না। গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে প্রথম যে পেট্রোল বোমা ছুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল অবরোধকারীরা। তাদের হিংসার আগুনে এখনও কাতরাচ্ছেন হাতিয়া মডেল পাইলট স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা শামসুন্নাহার। নিজের জন্য দুঃখ নেই। ছেলের জন্য বড় কষ্ট তাঁর। ছেলে তানজিমুল হক অয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র। ছয় তলার ৬০২ নম্বর কেবিনে একপাশে অয়ন অন্যপাশে শামসুন্নাহার। মা ছেলে দুজনেই মারাত্মক দগ্ধ। চিকিৎসকরা এখনও বলছেন না অনিক পুরোপুরি আশঙ্কামুক্ত। শামসুন্নাহারের একটাই চাওয়া অনিকের উন্নত চিকিৎসা। তার শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত তিনি। হাসি-খুশিতে ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখা অনিকের বন্ধুরা পালা করে হাসপাতালে অনিককে সঙ্গ দিচ্ছেন। এদের একজন প্রিয়াঙ্কা জানালেন, তাঁদের ক্লাসের ৩১ জনই পালা করে সকাল বিকেল বন্ধুর সঙ্গে থাকছেন। দুজন করে আসছে আবার দুজন করে চলে যাচ্ছেন। সব থেকে সঙ্কটাপন্ন চারজনকে রাখা হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। এদের চারজনের অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকরা এখনও কোন মন্তব্য করছেন না। এদের শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশ দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন। যত নির্দয় মানুষই হোক না কেন একবারের জন্য হলেও বলবেন ইস্ কি নির্দয় ওরা। পাবনা থেকে নিজের স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য আবু তাহের গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকা আসছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঢাকার রাস্তায় পেট্রোল বোমার আঘাতে ছেলে আবু বক্করের সঙ্গে তিনিও মারাত্মক আহত হন। এখন স্ত্রীর ভাঙ্গা হাড়ের চিকিৎসার বদলে তিনিই মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঢামেক বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। আবু তাহেরের বড় ছেলের স্ত্রী রেহানা বেগম জানালেন, আগে শাশুড়ি একাই অসুস্থ ছিলেন। শ্বশুর আর দেবর আগুনে ঝলসে গেছে। আরেক দেবর লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে পা ভেঙ্গেছে। তার শ্বশুর বাঁচবে কি-না তাও বলতে পারছেন না ডাক্তাররা। শরীরের ১৪ ভাগ পুড়ে গেছে। একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেশের উত্তরের জেলা সিরাজগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের ছুড়ে মারা পেট্রোল বোমায় মারাত্মক দগ্ধ হন ট্রাকচালক সিদ্দিক। স্বামীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করতে চাইলেও তারা কেউ রাখেনি। তাদের পরামর্শেই স্ত্রী পারভিন স্বামীকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ছেলে পারভেজ আর মেয়ে শিরিনকে নিয়ে সুখের সংসারটা এখন বিষাদে ছেয়ে গেছে। একমাত্র রোজগারের মানুষটা আগুনে ঝলসে হাসপাতালে ভর্তি এখন ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় কাজ করছে না, এখন শুধু একটাই চাওয়া মানুষটা সেরে উঠে বাড়ি চলুক। এ হানাহানির পরিত্রাণ কোথায় উদাস নয়নে একটাই জিজ্ঞাসা রেহানার। রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে পুলিশের গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করলে আগুনে দগ্ধ হন গাড়িচালক মোরশেদ আলম। গত ১৭ জানুয়ারি রাত আটটায় এ ঘটনা ঘটে। মোরশেদ আলমের স্ত্রী মাহমুদা নাজনীন জানানÑ হাত, বামপাশ এবং চোখের পাতা পুড়ে গেছে তার স্বামীর। অবস্থা খুব বেশি খারাপ হওয়ায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। পাঁচ তলার সাধারণ ওয়ার্ডে হরতাল অবরোধে দগ্ধ আরও সাতজন রয়েছেন। দেশর বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত অগ্নিকা-ের ঘটনায় এদের বার্ন ইউনিটে আনা হয়েছে। কারও মুখ পুড়েছে তো কারও হাত, কারও বুক পেট শ্বাসনালী সবখানে ক্ষত চিহ্ন। মা পেয়ারা বেগম বাসের হেলপার মাসুমের পাশে বসে জানালেন, নরসিংদীতে গত ১৪ তারিখে বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়লে আহত হয় মাসুম। সংসারের জোয়াল কাঁধে নেয়ার বয়স না হলেও দুই বোন আর মায়ের সংসারের ভারটা মাসুমের ওপরই ছিল। এখন সেই কিশোর মাসুম এখানে পড়ে আছে। কিভাবে চলবে সংসারটা মা পেয়ারা বেগম চোখে অন্ধকার দেখেন। গত ১০ তারিখে চাঁদপুর থেকে ট্রাকে বালু নিয়ে কুমিল্লা যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা শক্তিশালী টর্চের আলো ফেল্ল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন লেগে গেল শরীরে। তারপর এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বলছিলেন বৃদ্ধ ট্রাকচালক পিয়ার আহমেদ। তিনি তো কোন রাজনীতি করেন না। ট্রাক চালান নিজে আয় করে চলেন। তাকে কেন রাজনীতির তাপ সইতে হবে। পিয়ার আহমেদের এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে। ফেনীর ধানমুনিয়ার কাপড় ব্যবসায়ী মাইনউদ্দিন ২০ তারিখ রাত্রে সিএনজিতে শ্বশুরবাড়ি দুধমুখা যাওয়ার পথে অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় আহত হন। স্ত্রী শেফালি জানান, সেখানে আগুনে পোড়া রোগীর কোন চিকিৎসা নেই। রতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যন্ত্রণাকাতর স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। একমাত্র ছেলে আব্দুল্লাহ আল আজিজ বাবাকে দেখার জন্য ভীষণ বায়না করছিল। ছেলের জন্য ফলও কিনেছিলেন মাইন উদ্দিন কিন্তু সেই ফল আর খাওয়া হয়নি। এখন মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মাইন উদ্দিন। গত ৫ তারিখে পাঁচটা-২০ তে ময়মনসিংহে অটোচালক সিদ্দিকুর রহমান, ১০ তারিখ সকাল সতটায় ঢাকা থেকে রিক্সাচালক অমূল্য চন্দ্র বর্মণ রাজধানীতে, ১১ তারিখ সন্ধ্যায় লেগুনাচালক সেলিম রাজধানীর মতিঝিলে, ১৭ তারিখ ট্রাকচালক আরমান, ২০ তারিখে অন্তঃসত্ত্বা মনোয়ারা বেগম, দুই মেয়ে নুসরত এবং নাদিয়া ইডেনের ছাত্রী হ্যাপি চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই তালিকাটি ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকা মানুষ জানে না এই তালিকায় কখন তার নিজের নামটি যোগ হয়। সঙ্গত কারণে শঙ্কা আর ভীতি নিয়েই জীবন চলতে হচ্ছে। এভাবে আগুনের রাজনীতিতে পুড়ে মারা যাওয়া মানুষগুলো একদিন না একদিন গ্রিক মাইথোলজির (পৌরাণিক কাহিনীর) ফনিক্স পাখির মতো পুনরুত্থান ঘটবে। এবং তারা ঘাতকদের বিচারে সোপর্দ করবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডাঃ পার্থ শংকর পাল জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা হরতাল অবরোধের সহিংসতার শিকার মানুষকে ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। হাসপাতালে আসা থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানোর সকল খরচ সরকার বহন করছেন। সব ধরনের ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকে দেয়া হচ্ছে। হাসপাসালে কোন ওষুধ না থাকলে রোগীর আত্মীয়স্বজন বাইরে থেকে কিনে আনলেও আমরা বিল জমা দিতে বলেছি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রত্যেক রোগীর আত্মীয়কে হাত খরচের জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হচ্ছে। বিত্তবানদের সহায়তায় এখানে একটা পৃথক তহবিল করা হয়েছে। চাইলে যে কেউ এ তহবিলে অর্থ সহায়তা দিতে পারেন। এ অর্থও রোগীদের পিছনে ব্যয় করা হবে। জাতীয় সংসদের স্পীকার, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ অগ্নিদগ্ধ এসব মানুষের খোঁজখবর নিতে বার্ন ইউনিটে যাচ্ছেন।
×