ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাস দমনে ৬৪ জেলায় যৌথবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৫

সন্ত্রাস দমনে ৬৪ জেলায় যৌথবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ অনির্দিষ্টকালের অবরোধের নামে সহিংস সন্ত্রাস দমনে দেশের ৬৪ জেলার প্রতি জেলায় যৌথবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। যৌথবাহিনীর ক্যাম্প থেকে চালানো হবে কম্বিং অপারেশন। যতদিন পর্যন্ত অবরোধের নামে সহিংস সন্ত্রাস চলবে ততদিন জেলায় জেলায় যৌথবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করার কর্মকৌশল গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্র জানান, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে যেসব ‘জ্বালাও পোড়াও’ স্পর্শকাতর জেলা ও থানা এলাকা হিসেবে তালিকাভুক্ত সেসব জেলা ও থানায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছে বিজিবি। অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে রাতের বেলায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে বিজিবির সদস্যরা। অবরোধের নামে সহিংসতা অনির্দিষ্টকাল অব্যাহত থাকলে ক্রমান্বয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এসব ক্যাম্পগুলোকে যৌথবাহিনীর ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে সহিংস সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এজন্য প্রতিটি জেলা, শহর ও থানা এলাকায় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তা যৌথবাহিনীর ক্যাম্প অধিনায়কের হাতে তুলে দেয়া হবে। সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের তালিকা নিয়ে প্রতি রাতে কম্বিং অপারেশন চালাবে যৌথবাহিনী। সূত্র জানান, অনির্দিষ্টকাল অবরোধের নামে সহিংস সন্ত্রাস মোকাবেলায় সারাদেশের প্রতিটি থানার পুলিশ প্রশাসনে দৈনন্দিন কার্যক্রমের ওপর যে চাপ পড়ছে তা স্বাভাবিক ও সচল রাখার জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের কাজও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অব্যাহত কর্তব্যরত থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর যাতে বাড়তি কর্মঘণ্টার চাপ না পড়ে এবং দৈহিক ও মানসিকভাবে মনোবল অটুট ও সুদৃঢ় রাখার জন্যও এ ধরনের পরিকল্পনা নেয়ার কথা আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীকে ধরিয়ে দিলে যে পুরস্কার ঘোষণা করা হবে শুধু তাই নয়; বরং যেসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে দুঃসাহসিক ভূমিকা রাখবে সেজন্য তাদেরও পুরস্কার দেয়া হবে। সূত্র জানান, অনির্দিষ্টকালের সহিংস সন্ত্রাস মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার কথাও আলোচানা হয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সমন্বয়ে প্রতিটি পাড়ায়, মহল্লায়, থানায় ও জেলায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে। এরমধ্যে রাজধানীর বাইরে বেশকিছু জেলাধীন এলাকায় এ ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসবিরোধী কমিটির কাজ হবে কোন এলাকায় কারা সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতা করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে সাহায্য করা। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট যে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়েছে এবং তার সঙ্গে হরতাল আহ্বান করছে তাতে সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতা ঘটানো হচ্ছে। যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, বোমাবাজি, ভাংচুর করে নাশকতা ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে মানুষজনের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। গত ১৫ দিনের টানা অবরোধের নামে সহিংস সন্ত্রাসের আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে ৩০ জনকে। আগুনে পুড়িয়ে আহত করা হয়েছে শতাধিকজনকে। পাঁচ শতাধিক যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। টানা অবরোধের নামে এ ধরনের সহিংস সন্ত্রাস মোকাবেলায় নানা ধরনের কলাকৌশল ও পরিকল্পনার বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানান, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য ক্লিনহার্ট অপারেশন চালু করে। ক্লিনহার্ট অপারেশন চালু করার জন্য তখনও যৌথবাহিনী জেলায় জেলায় ক্যাম্প স্থাপন করে। তখন যৌথবাহিনীর নেতৃত্বে ছিল সেনাবাহিনী। এবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলে দিয়েছেন, এবারের যৌথবাহিনীতে সেনাবাহিনী থাকছে না। বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী ইতোমধ্যেই অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। চাঁপাইনবাবগগঞ্জ এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানে পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ক্লিনহার্ট অপারেশন ছাড়াও গত ১৫ বছরে একাধিকবার যৌথবাহিনী অভিযান পরিচালনা করেছে। পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, পুলিশ রেগুলেশন বুক (পিআরবি) ও ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড (সিআরপিসি) অনুযায়ী আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে গুলি করার আইনগত অধিকার রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ধরনের আইনগত অধিকার পালন করে যাবে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গুলিবিনিময়ে অর্থাৎ বন্দুকযুদ্ধে দু’জন নিহত হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীর অভিযোগে মামলা আছে এবং অবরোধের নামে সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বে সম্প্রতি সহিংস সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিশেষ করে ফ্রান্সের দুই ভাইকে গুলি করে হত্যা, আমেরিকায় পুলিশের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে ধরা এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে গুলি করে হত্যা করার ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনির্দিষ্টকাল অবরোধের নামে সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতা অব্যাহত রাখা হলে যৌথবাহিনী প্রতিটি জেলা ও থানা এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করবে। দীর্ঘমেয়াদী সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতা দমনে প্রতিটি জেলায় যৌথবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করে কম্বিং অপারেশন পরিচালনার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এছাড়ও সরকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সামাজিক শক্তির সমন্বয়ে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের অবরোধের নামে সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতা অব্যাহত থাকলে তার মোকাবেলায় আরও নানা ধরনের কর্মকৌশলের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
×