ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদাকে গ্রেফতারের দাবিতে সংসদ ফের উত্তপ্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২২ জানুয়ারি ২০১৫

খালেদাকে গ্রেফতারের দাবিতে সংসদ ফের উত্তপ্ত

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবিতে বুধবারও সংসদ অধিবেশন ছিল উত্তপ্ত। এ নিয়ে অনির্ধারিত বিতর্কে তরুণ সংসদ সদস্যরা শুধু গ্রেফতারের দাবিই নয়, অবিলম্বে খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে তল্লাশি করে লুকিয়ে থাকা জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং কূটনৈতিক জোন থেকে বিএনপির কার্যালয় উচ্ছেদেরও দাবি জানান তাঁরা। বলেছেন, একটা নির্দেশ পেলে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি লাগবে না, আওয়ামী লীগের কোটি কোটি নেতাকর্মী, সমর্থকই বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী-জঙ্গীদের নির্মূল করতে যথেষ্ট। খালেদা জিয়া সংলাপ চাইলে ৩০ মানুষকে হত্যা, অন্তঃসত্ত্বা মা, দিনমজুরকে হত্যার জবাব দিতে হবে, অবরোধের নামে জঙ্গীবাদ-সহিংসতা-মানুষ হত্যার রক্তের হোলি খেলা বন্ধ করতে হবে, তখনই তা বিবেচনা করা হবে সংলাপ হবে কি-না। বুধবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হলে পয়েন্ট অব অর্ডারে এ অনির্ধারিত বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে এ বিতর্কে মঙ্গলবারের মতো সিনিয়র নেতারা নন, অপেক্ষাকৃত তরুণ সরকারী দল, বিএনএফ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানান। সবশেষে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনার সময়ও সংসদ সদস্যরা খালেদা জিয়ার সমালোচনায় মুখোর ছিলেন। পয়েন্ট অব অর্ডারে সরকারী দলের সংসদ সদস্য শামিম ওসমান বলেন, খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয়ে স্ব-ইচ্ছায় অবরুদ্ধ থেকে মানুষ হত্যার হুকুম দিচ্ছেন, আর কাপুরুষের মতো বিএনপি-জামায়াতরা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে। তবে কেন খালেদা জিয়াকে মানুষ হত্যার হুকুমের আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দিলে তাঁর নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়, আর গ্রেনেড হামলায় মানববর্ম রচনা করে আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন। এটাই হলো আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে পার্থক্য। তিনি বলেন, পুলিশ-বিডিআরের দরকার নেই, দল থেকে একটা নির্দেশ দিলে আওয়ামী লীগের কোটি কোটি নেতাকর্মী-সমর্থকরাই খালেদা জিয়ার নাশকতা-সহিংসতা, ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ এবং তাদের সন্ত্রাসীদের নিঃশ্বেষ করতে যথেষ্ট। তিনি বলেন, সংসদে খালেদা জিয়াকে নিয়ে এতো আলোচনার কিছু নেই। উনি এমন কী গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী যে তাঁকে নিয়ে এতো সময় নষ্ট করতে হবে? তিনি বলেন, এরশাদ সাহেব যদি পাঁচ বছর জেলে থাকতে পারেন, তবে খালেদা জিয়া কেন জেলে যাবেন না? খালেদা জিয়ার উচিত রাজনীতি ছেড়ে নির্বাসনে যাওয়া। তারেক রহমানের মতো সন্ত্রাসী পুত্র আর যেন কারও না হয়। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সভাপতি আবুল কালাম আজাদ অবিলম্বে খালেদা জিয়ার বাসভবনে অপারেশন সার্চলাইট চালানো এবং গুলশান-বনানী কূটনীতিক জোন থেকে সকল রাজনৈতিক দলের কার্যালয় উচ্ছেদের দাবি জানান। তিনি বলেন, গুলশানের মতো অভিজাত এলাকা থেকে বোমাবাজরা ধরা পড়েছে। খালেদা জিয়া যে কার্যালয়ে অবস্থান করছেন ওখানে অপারেশন সার্চ লাইটের মতো অভিযান চালানো উচিত। কেননা ওই কার্যালয়েও সন্ত্রাসী-জঙ্গী-বোমাবাজরা লুকিয়ে থাকতে পারে। কারণ ওই কার্যালয় থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করা হচ্ছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, জনগণকে পাশ কাটিয়ে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোন আন্দোলন সফল হয় না। যারা নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও করছে তাদের বলবো এসব বন্ধ করতে। আর সরকারকে বলবো, দেশ যখন অস্থিতিশীল তখন দেশবাসী সরকারের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। তাই দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন, এজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিন। আরেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমও মানুষ হত্যার নির্দেশ দেয়ার জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার অবরোধ-হরতালে দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকের ঋণ পর্যন্ত শোধ করতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা ঋণখেলাপী হয়ে পড়বে, ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মধ্যে পড়বে। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যত কঠিন পদক্ষেপই হোক তা নিতে হবে। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দীন খান বাদল বলেন, খালেদা জিয়া যে আন্দোলন করছেন তা গণতান্ত্রিক নয়, সন্ত্রাসী কর্মকা-। খালেদা জিয়া তাঁর প্রচ- অহমিকা, ঔদ্ধত্ব ও অহংকার নিয়ে নির্বাচনে না এসে একটি দলের (বিএনপি) অপমৃত্যু ঘটাচ্ছেন, সন্ত্রাসীদের রানীতে পরিণত হয়েছেন। খালেদা জিয়া কোন বিষয়ে সংলাপ করবেন? কেন জাতিকে উনি ও তাঁর সন্ত্রাসী পুত্র বিভ্রান্ত করছেন? খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইলে নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এসে পরিবর্তন করুক। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করতে চেয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কেন সংলাপ হবে? ৩০ মৃত্যুর জবাব না দিলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না। অন্তঃসত্ত্বা মাকে পুড়িয়ে হত্যার, কর্মজীবী ও পুলিশ হত্যার আগে খালেদা জিয়াকে জবাব দিতে হবে। খুনী আর খুনের শিকার পরিবারের সদস্যরা এক রাস্তা ব্যবহার করতে পারে না। তাই খুনী ও খুনের নির্দেশদাতা গণদুশমনদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, খালেদা জিয়া কী আইনের উর্ধে? উনি কী সুপার সিটিজেন? কুইন ভিক্টোরিয়া যে তাঁকে নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না? খালেদা জিয়া সংলাপ চাইলে অবরোধ, হত্যাযজ্ঞ, বোমাবাজি করে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে, তখনই সিদ্ধান্ত হবে সংলাপ হবে কী হবে না। খালেদা জিয়াকে গান্ধীবাদী রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সুস্থ রাজনীতির ধারায় আসুন। আগামী ২০১৯ সালে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন। জাতিকে রক্তাক্ত করার জন্য খালেদা জিয়াকে অবশ্যই একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আর বিলম্ব নয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩০ জনকে খুনের জন্য ৩০টি হত্যা মামলা হওয়া উচিত।
×