ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন মুদ্রানীতিতে উৎপাদনশীল খাত অগ্রাধিকার পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৫

নতুন মুদ্রানীতিতে উৎপাদনশীল খাত অগ্রাধিকার পাচ্ছে

রহিম শেখ ॥ উৎপাদনশীল খাতকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে চলতি অর্থবছরের শেষার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ২৮ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান নতুন এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঘোষিত ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জন না হওয়ায় পূর্বঘোষিত ঋণ প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত রেখে নতুন করে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় আমদানি বাড়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় বাড়বে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার উর্ধগতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এসব বিবেচনায় রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, নিয়মানুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ছয় মাস অন্তর আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। প্রতি বছরের জানুয়ারি এবং জুলাই মাসে এটি ঘোষণা করা হয়। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে তার একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। মুদ্রানীতি চূড়ান্ত করতে অন্যান্য বছরের মতো এবারও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যাংকার, সাবেক গবর্নর, সাবেক মন্ত্রী, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট, সাবেক অর্থ উপদেষ্টা, সাবেক সচিবসহ মুদ্রানীতি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী ২৮ জানুয়ারি বুধবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে গবর্নর ড. আতিউর রহমান (জানুয়ারিÑজুন) ছয় মাসের মুদ্রানীতির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৪ শতাংশ। তবে বিদেশী ঋণকে যুক্ত করে তা সাড়ে ১৬ শতাংশ করা হয়। কিন্তু ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তাই ঘোষিত ঋণ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত রেখেই মুদ্রানীতি ঘোষণার কাজ চলছে। মুদ্রানীতি প্রণয়নে জড়িত এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করার কাজ চলছে। বিশেষ করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এতে এসএমই, কৃষি, ১০ টাকার হিসাব, গ্রিন ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন নতুন উদ্যোগকে প্রাধান্য দেয়া হবে। ব্যাংকগুলোকে এসব দিকে আরও বেশি জোর দিতে বলা হবে। বড় অপেক্ষা ছোট গ্রাহকের দিকেই বেশি মনোযোগী হতে হবে ব্যাংককে। এভাবে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জনই এখন প্রধান লক্ষ্য। বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ কমিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা ব্যক্ত করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে। তবে বিদেশী ঋণকে যুক্ত করে বেসরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা একই ধরা হয়েছে, যাতে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার আশা করা হয়। এতে বলা হয়, মুদ্রানীতির ভঙ্গি আগের মতো সতর্ক ও বিনিয়োগবান্ধব। এর লক্ষ্য অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় জোরালো করা। তবে ডিসেম্বরে জাতীয় পর্যায়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ, নবেম্বরে যা ছিল ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এ মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মুদ্রানীতিতে আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হার যাতে সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা যায় এবং মোট দেশজ উৎপাদনের হার যাতে সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে থাকে সেদিকেও নজর দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখাটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কেননা সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। মুদ্রানীতিকে উৎপাদনমুখী খাতের দিকে মনোনিবেশ করে এটি মোকাবেলার চেষ্টা করা হবে। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জনকণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অর্থের কোন অভাব নেই, অভাব চাহিদার। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোক্তাদের ঋণ সুবিধা সহজতর করে তদারকি জোরদার করতে হবে। ব্যাংকগুলোয় সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এর মাধ্যমে সুদের হার কমে আসতে পারে। সুদের হার কমানোটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ, এতেই ঋণপ্রবাহের লক্ষ্য অর্জন হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেভাবে শুরু হয়েছে তাতে নতুন মুদ্রানীতি যাই হোক বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।
×