ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে অন্ধকার দূর করেছে সৌরবিদ্যুত

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ২২ জানুয়ারি ২০১৫

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে অন্ধকার দূর করেছে সৌরবিদ্যুত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ২০ জানুয়ারি ॥ পদ্মা নদীবেষ্টিত ফরিদপুর জেলার সদর ও চরভদ্রাসন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে চরাঞ্চল জনপদ। এসব জনপদের সঙ্গে জেলা ও উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। বিদ্যুত ছিল এখানকার মানুষের কাছে স্বপ্নের মতোই। তবে হালে সৌর বিদ্যুতের প্রসার এখানকার মানুষের নিত্যদিনের রাতের আঁধার দূর করে দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে দুর্গম এই চরাঞ্চলের প্রায় দুই হাজারেরও বেশি পরিবার সৌর বিদ্যুতের সুবিধা নিয়ে তাদের ঘর আলোকিত করতে সক্ষম হয়েছে। জেলার সদর ও চরভদ্রাসন উপজেলার চরাঞ্চলের সাতটি ইউনিয়নের ১শ’টির বেশি গ্রামে এ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে সৌরবিদ্যুতের সুবিধা। এতে সুবিধা বঞ্চিত এসব মানুষের মুখে হাসি ফুটিছে। মোবাইল ফোনের চার্জ দেয়ার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেয়েছে। কেরসিনের কুপির বদলে বিদ্যুতের আলোতে এখন ওই অঞ্চলের শিশু-কিশোররা রাতের আঁধারকে জয় করতে পারছে। নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লিপি বেগম বলেন, আমরা চরের মানুষ কখনও ভাবিনি চরাঞ্চলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা হবে। সৌরবিদ্যুত আমাদের অন্ধকার দূর করেছে। নর্থ চ্যানেল চরের শারমিন জানান, ‘আগে একটু রাত হলেই পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হতো। এখন সোলার প্যানেল হওয়ায় সারারাত বিদ্যুত পাচ্ছি।’ একই গ্রামের নাসরিন বেগম বলেন, কেরোসিন তেল কিনতে না পারলে সন্ধ্যার আগে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সারা রাত অন্ধকারে শুয়ে থাকতে হতো। এখন তেল কিনতে হয় না। রাতে বাচ্চারা পড়াশোনা করতে পারছে, কাঁথা সেলাইসহ নানা ধরনের কাজও করা যাচ্ছে। মসজিদের ইমাম মাওলানা শরিফুল ইসলাম বলেন, শিশুরা রাতে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতে পারছে। নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ডাঙ্গি গ্রামের বিলকিস বেগম জানান, দুই বছর আগে বাড়িতে সোলার বিদ্যুত নেয়ার পর থেকে চোর-ডাকাত, সাপের ভয় নেই। রাইতে অসুস্থ মানুষ এক ঘর থেকে আরেক ঘরে আগে যেতে পারত না, সৌরবিদ্যুতের কারণে রাতে এখন চলাফেরায় কোন সমস্যা হয় না। মুদি দোকানদার শেখ বাদশা বলেন, সোলার বিদ্যুত নেয়ার পর এখন রাত ১১-১২টা পর্যন্ত দোকান করতে পারছি। আয়রোজগারও আগের থেকে অনেক বেশি হয়। ফরিদপুরের বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আমরা কাজ করি (একেকে) জার্মানির সহায়তায় দুইটি উপজেলার চরাঞ্চলে সোলার প্যানেল বসানোর কাজ করছে। এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫টি পরিবারকে সৌরবিদ্যুতের সংযোগ দিয়েছে সংস্থাটি। মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকায় সৌরবিদ্যুতের একটি ইউনিট দিয়ে দুটি পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। একেকের নির্বাহী পরিচালক আবদুল জলিল জানান, একটি সোলার সিস্টেমের পেছনে খরচ হয় ২৫ হাজার ৫শ’ টাকা। জার্মান দাতা সংস্থা আন্দ্রেরী হিলপির সহযোগিতায় মাত্র তিন হাজার ৫শ’ টাকার বিনিময়ে গ্রামের মানুষকে তারা এই প্যানেল দিচ্ছেন। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী বলেন, চর এলাকায় বিদ্যুত পৌঁছানো ব্যয়বহুল, তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারী ও বেসরকারী সহযোগিতায় পদ্মার চরের মানুষের মাঝে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে সকল পরিবার এখনও সৌরবিদ্যুতের সুবিধা পায়নি, শীঘ্রই তাদেরও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে।
×