স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ সরকরী ওষুধ এখন বাজারে। বিক্রি হচ্ছে দেদারসে মফস্বল এলাকার বিভিন্ন ফার্মেসিতে। দিনে দুপুরে হাঁকডাক করে বিক্রি করছে। অথচ ওষুধের প্যাকেট ও পাতায় লিখা রয়েছে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ’ বিক্রির জন্য নহে। আর সেই ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ফার্মেসিতে। একটি সূত্র হতে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় স্টোর হতে কিংবা টেন্ডারের মাধ্যমে যে সব ওষুধ কেনা হয় তার সিংহভাগ এখন পাওয়া যায় বিভিন্ন ফার্মেসিতে। একটি সিন্ডিকেট এই অবৈধ ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত। এদের অধিকাংশ স্বাস্থ্য বিভাগের তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। তবে নেতৃত্ব ও দলনেতা হিসাবে রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক ডাক্তার। কোন কোন ক্ষেত্রে পর্দার আড়াল থেকে মদদ দিচ্ছে সিভিল সার্জন পদমর্যাদার ব্যক্তিরাও। সরকারী ওষুধ পাচারের এই সিন্ডিকেটে রয়েছে একাধিক জেলার ব্যক্তি। তবে এদের সকলেই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মচারী ও কর্মকর্তা। একটি অভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তারা ওষুধ পাচার করছে। আর এই অভিন্ন কৌশলের অংশ হচ্ছে এক জেলার ওষুধ অন্য জেলায় পাঠিয়ে বিক্রি করা।
বর্তমান সরকারের গণমুখী স্বাস্থ্য সেবার অংশ হিসাবে সরকারী ওষুধ সরবরাহ করছে প্রচুর পরিমাণে। সরবরাহের তালিকায় রয়েছে হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, স্বাস্থ্য কমিউনিটি, পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র, দুস্থ শিশু মাতা কল্যাণ কেন্দ্রসহ জনগণের স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন মানের স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এইসব কেন্দ্রে নিয়মিত বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। বিশেষ করে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সে সব পুরুষ ও মহিলা স্বাস্থ্য সেবা নিতে হাসপাতালে আসে তাদের ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে এসব ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে ওষুধের চিরকুট হাতে তুলে দেয়। চিরকুট নিয়ে স্টোরে যাওয়ামাত্র ওষুধ সরবরাহ করার নিয়ম রয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্টোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা চিরকুটটা হাতিয়ে নিয়ে বলে থাকে ওষুধ নেই। আবার এইসব স্টাফ নানান ধরনের মিথ্যা বলে কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছ থেকে চিরকুট নিয়ে ওষুধ বাইরে পাচার করে। পাশাপাশি ডাক্তারসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও চিরকুটের মাধ্যমে পুরো প্যাকেজ তুলে নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের হাতে তুলে দেয়। বর্তমানে ওষুুধ সরবরাহের তালিকায় খুবই মানসম্পন্ন সর্বোচ্চ মূল্যমানে এ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করছে। এইসব নানান পদের ও শক্তির দামী এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের একটিও সাধারণ গরিবের হাতে না দিয়ে এর পুরোটাই পাচার করে থাকে। সম্প্রতি একটি অভিযান থেকে বেরিয়ে এসেছে অভিযোগের সত্যতা। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যমানের সরকারী ওষুধ উদ্ধার করেছে একটি ফার্মেসি থেকে। ২৮ প্রকারের এইসব দামী ওষুধের মধ্যে রয়েছে সিপ্রোফ্লাক্সসিন, লিভোফ্লাক্সসিন, ফ্লকাসিন, ফ্লুকোন ১৫০ মিঃ গ্রাম, এ্যাজিথ্রোমাইসিন ট্যাবলেট, ফ্লুক্সো ক্যাপসুল, ক্লাসিমিন ক্যাপসুল ও সেফাট্রিয়াক্সন ইনজেকশন। এইসব ক্যাপসুলের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার বলে জানা গেছে। ফার্মেসিটির অবস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: