ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এসএসসি পরীক্ষার সময় অবরোধ দিলে ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগ

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

এসএসসি পরীক্ষার সময় অবরোধ দিলে ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার সময় বিএনপি জোটের অবরোধ অব্যাহত থাকলে প্রশাসন ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগ করবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষা দেবে। নতুন বছরে ক্লাস শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়ার বেরহম কর্মসূচী এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ কয়েক কোটি ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। তিনি বলেন, ১৪ দল, আওয়ামী লীগ, জাসদ কখনই নির্বাচন ছাড়া ভিন্ন কোন পথে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। নির্বাচনই ক্ষমতা বা সরকার বদলের একমাত্র পথ। ভবিষ্যতেও নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার বদল হবে। সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাচনী আইন অনুসারেই নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন অস্বাভাবিক অসাংবিধানিক সরকার দিয়ে নির্বাচনের কোন সুযোগ নেই। তাই সংবিধানের অধীনে নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো ব্যবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকার প্রস্তাবনার চেয়ে আরও গ্রহণযোগ্য বাস্তবসম্মত প্রস্তাব যদি কেউ উত্থাপন করতে পারেন, তা নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে। কিন্তু কখনই কোনভাবেই অসাংবিধানিক অস্বাভাবিক সরকার গঠনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হবে না। আর এডহক বেসিসে এক মেয়াদের জন্য কোন প্রস্তাব নয়, স্থায়ী ব্যবস্থার প্রস্তাব হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরীক্ষার সময় এই কর্মসূচী বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, স্থগিত করা না হলে প্রশাসন সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। কী ধরনের ক্ষমতা প্রশাসন প্রয়োগ করবে জানতে চাইলে ইনু বলেন, আইনে যা আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে, গ্রেফতার করা হবে। সেক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। দশম সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তির দিন গত ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ কর্মসূচী পালনে কার্যালয় থেকে বের হতে বাধা পেয়ে লাগাতার অবরোধ ডাকেন ২০ দলীয় নেত্রী খালেদা। রবিবার রাতে তার গুলশানের কার্যালয় ঘিরে থাকা পুলিশ ও ট্রাক সরিয়ে নেয়া হলেও সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি নেত্রী। তিনি বলেন, অবরোধ কর্মসূচী চলছে, অবরোধ কর্মসূচী চলবে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত। এই অবরোধের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন লক্ষ্য করে প্রতিদিনই নাশকতা ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে, যা নিয়ে জাতিসংঘও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ৫ জানুয়ারি থেকে নাশকতায় ও সহিংসতায় এ পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ২৭ জন মারা গেছেন। প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার কথা ভাবতেই হবে। নাশকতা ও চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধে সরকার কী পদেক্ষেপ নিচ্ছে- এমন প্রশ্নে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন জাসদ সভাপতি ইনু। তিনি বলেন, চোরাগোপ্তা হামলা একটি কঠিন সমস্যা। তবে প্রশাসন এ বিষয়ে দক্ষতা রাখে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে, চোরাগোপ্তা হামলা বন্ধ করতে আমরা সমর্থ হব। লিখিত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়া সোমবার রাতে তার গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তথাকথিত ‘অবরোধ’ কর্মসূচী অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে শুধু হতাশই করেনি, ৫ জানুয়ারির পূর্বে দেশবাসী, আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম তা প্রমাণ করছেন। প্রমাণ হলো, তিনি যে ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি এবং ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার পরিকল্পনা করেছিলেন সে পরিকল্পনা ও পথ থেকে তিনি সরে আসেননি। আগেই বলেছিলাম, ৫ জানুয়ারি বেগম জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান গ্রহণ করে সন্ত্রাস-সহিংসতা-নাশকতা পরিচালনা করবেন। তাই তাকে নিবৃত্তমূলক করার জন্য সরকার বেশ কিছু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। সরকারের এই নিবৃত্ত পদক্ষেপের প্রতিবাদে তিনি যে ‘অবরোধ’ এর নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা-নাশকতা-জ্বালাও-পোড়াও এর কর্মসূচী দেননি, তা গত পরশু সরকারের নিবৃত্তমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করার পর সোমবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো। গত ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে সন্ত্রাস-নাশকতা-সহিংসতার তা-ব ঘটানো হবে, সরকারের পতন করা হবে, এরকম গুজব ও আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল। দুইদিন আগে থেকেই প্রকাশ্যে উস্কানি দেয়া হতে থাকে। দুইদিন আগ থেকেই বোমাবাজি ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু করা হয়। এমনকি তার পুত্র তারেক রহমান লাদেনীয় কায়দায় ভিডিও বার্তায় ‘দেশের এক অংশ থেকে আরেক অংশ’, ‘ঢাকার এক অংশ থেকে আরেক অংশ’ বিচ্ছিন্ন করার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রকাশ্যেই নির্দেশ দেন। এ রকম পরিস্থিতি তৈরি করা না হলে, বেগম খালেদা জিয়া শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর নিশ্চয়তা প্রদান করলে, সরকার নিবৃত্তমূলক প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করত না। তিনি সমাবেশ করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারতেন। কারন তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসভা করে আসছিলেন। সরকার তাতে কোন বাধা দেননি। দেশে সভা-সমাবেশ করার অধিকার নিশ্চিতই রয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে সন্ত্রাস-নাশকতা-সহিংসতা-জ্বালাও-পোড়াও করা গণতান্ত্রিক অধিকার না। কোন সরকারই জেনে শুনে বুঝে কাউকেই জনগণের জান-মালের ক্ষতি করা, সন্ত্রাস-নাশকতা-সহিংসতা-জ্বালাও-পোড়াও করার সুযোগ করে দিতে পারে না। বেগম জিয়া সোমবার রাতে সাংবাদিক সম্মেলন করে ‘অবরোধ’ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে প্রমাণ করলেন তিনি সন্ত্রাস-নাশকতা-সহিংসতা-জ্বালাও-পোড়াও এর পথ থেকে একচুলও সরে আসেননি। মানুষের মৃত্যু, স্বজন হারানোদের কান্না-আহাজারি, বার্ন ইউনিটে অগ্নিদগ্ধ মানুষের কাতরানি-ছটফটানি তার মনে এতটুকু দয়া-মায়া-করুণা সৃষ্টি করেনি। আল্লাহ উনাকে কি দিয়ে তৈরি করেছেন? উনার দিলে একটুও রহম নেই কেন? বিশ্ব এজতেমায় আসা লাখ লাখ মুসল্লিকে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে ফেলতেও তার সামান্য ভাবান্তর হয়নি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এখন তাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময়। জানুয়ারি মাস, স্কুলগুলোতে নতুন ক্লাস শুরু হয়েছে। বেগম জিয়ার বেরহম অবরোধ কর্মসূচী লাখ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ কয়েক কোটি ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। কৃষকের ফসল খেতে নষ্ট হচ্ছে। রফতানি পণ্যের শিপমেন্ট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ যেন ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক শ্রমিক, শিল্প উদ্যোক্তা, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার যুদ্ধ। খালেদা জিয়া মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে, মানুষকে কষ্ট দিয়ে, দেশকে ধ্বংস করে পৈশাচিক আনন্দ করছেন। বেগম জিয়ার ভুল রাজনীতি জনগণ গ্রহণ না করায় তিনি এখন জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, সকলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ এর কথা বলা হচ্ছে। দেশের সংবিধান ও নির্বাচনী আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল, এমনকি অনিবন্ধিত দল বা যে কোন ব্যক্তি স্বতন্ত্র হিসাবেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে কোন বাধা নেই। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা বা কাঠামো নিয়ে কয়েকটি অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি। এর মধ্যে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর বিচারবিভাগকে সম্পৃক্ত করে কোন ধরনের নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠনের সুযোগ নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একটি ঐকমত্য তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিএনপি প্রত্যাখ্যানের মুখেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে সংসদীয় দলগুলোর মধ্যে যারা সম্মতি দিয়েছিল তাদের নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করেছিলেন। খালেদা জিয়া দুই পক্ষের ৫ জন করে নির্দলীয় ব্যক্তির সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তার কোন বাস্তব গ্রহণযোগ্য রূপ উনি নিজেও দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আলোচনার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, গণতন্ত্রের নামে সন্ত্রাস-নাশকতা-সহিংসতা-অন্তর্ঘাতের রাজনীতিকে প্রশ্রয়-বৈধতা দেয়া বা যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধীদের দল, জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীদের গণতন্ত্রে বৈধতা দেয়া হবে কী না ? বিএনপিকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট অবস্থান ঘোষণা করতে হবে। যারা ‘সংলাপ’ এ সমাধান চান-তাদেরও এ ব্যাপারে মুখ খুলতে হবে। খালেদা জিয়া-তারেক-বিএনপি-জামায়াত-যতক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাস-নাশকতা-অন্তর্ঘাত-সহিংসতা-ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পথ পরিত্যাগ না করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গীবাদীদের সঙ্গে দোস্তি না ছাড়ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত সরকারকে গণতন্ত্র ও সংবিধান সমুন্নত রাখতে, জনগণের জানমালে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সংবিধানের নির্দেশ অনুযায়ী যা যা করার তাই তাই করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের চুলমাত্র ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। ওয়াসার ঠিকাদার ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব অবহেলায় পরিত্যক্ত পাইপের মধ্যে পড়ে শিশুর মৃত্যুর জন্য যদি হত্যা মামলা হয়, তাহলে প্রকাশ্য ঘোষণা ও উস্কানি দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা, জনগণের জানমাল ধ্বংস করার জন্য খালেদা জিয়া-তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হবে না কেন? তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে সন্ত্রাস-নাশকতা-অন্তর্ঘাত-সহিংসতা-ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পথ ছেড়ে এবং যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গীবাদীদের সাথে দোস্তি ছেড়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য ‘গণতন্ত্রের গেট পাস’ সংগ্রহ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আগুন নিয়ে খেলা বন্ধ করে জনগণের জন্য একটু মায়া-করুণা-রহম আনার আহ্বান জানাচ্ছি।
×