ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাড়া-মহল্লায় গড়া হচ্ছে কমিটি

রংপুরে নাশকতার বিরুদ্ধে শান্তি মিছিল, সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

রংপুরে নাশকতার বিরুদ্ধে শান্তি মিছিল, সমাবেশ

মানিক সরকার মানিক, রংপুর ॥ হরতাল-অবরোধের নামে দেশজুড়ে বোমাবাজি সন্ত্রাস আর আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারার প্রতিবাদ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় রংপুর অঞ্চলের মানুষ এখন সংগঠিত হচ্ছে। থানা উপজেলা ছাড়াও পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠছে শান্তি কমিটি। দোকানিরা রাখছে আড়াই হাতি লাঠি। যেখানেই সন্ত্রাস সেখানেই গণপ্রতিরোধ। সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এমনই কর্মসূচী নিয়েছে ‘জাগো রংপুর’ এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশন। গত সোম ও মঙ্গলবার বিশাল দুটি শান্তি মিছিল এবং সমাবেশের মাধ্যমে এমনই কর্মসূচী ঘোষণা করেছে তারা। এসব কর্মসূচীতে সংহতি জানিয়ে যুক্ত হয়েছে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পাশাপাশি জেলার উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তারাও। ক্রমেই দৃঢ় হয়ে উঠছে সন্ত্রাস ও নাশকতা বিরোধী মুষ্টিবদ্ধ হাত। মঙ্গলবার সকালে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিশাল এক শান্তি মিছিল ও সমাবেশের। হাড়কাঁপানো তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে সকালেই বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারী-পুরুষ সিটি কর্পোরেশনের সামনে জমায়েত হয়। এরপর সেখান থেকে বের হয় শান্তি মিছিল। নগর পরিভ্রমণ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে তারা। সেখানে নগরপিতা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু ছাড়াও কর্মসূচীর সঙ্গে সংহতি জানাতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় জেলাবাসীর সহায়তা চেয়ে নিজ কার্যালয় ছেড়ে সমাবেশস্থলে ছুটে আসেন জেলা প্রশাসক ফরিদ আহম্মেদ ও পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক পিপিএম। এখানে নগরপিতা বলেন, দেশ যখন নানামুখী উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলছে তখন বিশেষ একটি রাজনৈতিক দল হরতাল অবরোধের নামে গোটা দেশে অশান্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর এই অশান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় শান্তি কমিটি গঠনের আহ্বান জানান তিনি। তিনি শান্তি কমিটির সদস্য এবং দোকানিদের আড়াই হাতি লাঠি রাখার পরামর্শ দিয়ে বলেন, কেউ সন্ত্রাস আর নৈরাজ্য সৃষ্টি করলেই তাদের লাঠি দিয়ে প্রতিরোধ করবেন। আর এ জন্য মামলা হলে এর মূল আসামি হব আমি। অন্যদিকে ‘আর নয় নৈরাজ্য, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, মানুষ হত্যা, এবার চাই শান্তি ও নিরাপত্তা’ এমন সেøাগানে গত বুধ ও সোমবার ‘জাগো রংপুর’ নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠনও আয়োজন করে শান্তি সমাবেশ ও শোভাযাত্রার। স্থানীয় পাবলিক লাইব্রেরীর মাঠে জমায়েত হয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ জাতীয় পতাকা ফেস্টুন ব্যানার নিয়ে শান্তি মিছিল করে নগরজুড়ে। সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু ও সদস্য সচিব ডাঃ সৈয়দ মামুনুর রহমান জানান, সারাদেশে রাজনীতির নামে ক্ষমতালিপ্সু, দুষ্টুচক্র কেন্দ্রিক ষড়যন্ত্রকারীদের কর্মকা-ে এদেশের কৃষক শ্রমিকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। মনে হচ্ছে ’৭১ এর ঘাতক আর এদেশের গুটি কয়েক ক্ষমতাশ্রয়ী লুটেরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিকৃত মানসিকতার কাছে দেশের আমজনতা আজ জিম্মি। কক্সবাজারে ফের অবরোধে উদ্বেগ ॥ এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে জানান, টানা ১২ দিন ধরে অযৌক্তিক অবরোধ-হরতালে দেশের মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের পর সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়া অবরোধ প্রত্যাহার করে না নেয়ায় সচেতন মহল ও নিরীহ লোকজনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন সংস্থা, কর্মজীবী, খেটে খাওয়া মানুষ দিনমুজুর ও ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, অবরোধ চলবে কথাটা না বলে এতদিন ধরে দেশের সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য ক্ষমা চাওয়াই তাঁর জন্য বেটার ছিল। তা না করে তিনি অবরোধ চলবে বলে ঘোষণা দেয়ায় দেশের মানুষকে আরও বেশি দুর্ভোগে ঠেলে দিয়েছেন। কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে এসব অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ পালন করেছে বলে যে বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, তা রীতিমত হাস্যকর। কেননা অবরোধ মানে তো দেশের মানুষকে অবরোদ্ধ করে রাখা। শহরের বাহারছড়ার মুক্তিযোদ্ধা বাদশা মিয়া জানান, দেশের উন্নয়ন ও শান্তি চায় দেশবাসী। কারণ যে যাই করুক দেশের সাধারণ জনগণ সস্তা চালের ভাত খেয়ে বাঁচতে চায়। চায় শান্তিতে ঘুমোতে। এখন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। কনজ্যোমার এ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কক্সবাজারের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, দেশের সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে না আসা পর্যন্ত অতীতে কোন সরকারের পতন ঘটান সম্ভব হয়নি। ওই অযৌক্তি অবরোধে মানুষের সাপোর্টত মিলেনি। গফরগাঁওর মানুষ শান্তি চায় ॥ শেখ আব্দুল আওয়াল, গফরগাঁও থেকে জানান, সাধারণ মানুষ মাঘ মাসে তীব্র শীতে যতটা না কষ্ট পাচ্ছে তার চেয়েও বেশি কষ্ট পাচ্ছে ২০ দলীয় জোটের গণতন্ত্রের নামে আন্দোলন দেখে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে আন্দোলনকারীরা তো দেশের মানুষের উন্নয়ন চায় না। দেশের ভাল চায় না। যদি ভাল চাইত উন্নয়ন চাইত তবে কেন গাড়িতে আগুন দিয়ে, পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে? ম্যাডাম খালেদা জিয়া এই প্রতিহিংসার রাজনীতির শেষ কোথায়? সাধারণ মানুষ শান্তিতে আছে থাকতে দিন কথাগুলো বলছিলেন আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহঅধ্যাপক গোলাম মোঃ ফারুকী। তিনি বলেন, গত ১৫ দিনে মঙ্গলবার পর্যন্ত অবরোধকারীরা চোরাগোপ্তা হামলা, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, রেলের সিøপার উৎপাটন যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের সম্পদের সঙ্গে মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা থেমে নেই। প্রশ্ন হচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ কেন? সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এই নৃশংতার, প্রতিহিংসার শেষ কোথায়? মানুষ স্বস্তি চায়।
×