ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী থেকে বিরত থাকুন

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী থেকে বিরত থাকুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ২৩ জানুয়ারির সংখ্যালঘু-আদিবাসী জনতার মহাসমাবেশ স্থগিত করেছে আয়োজক বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ। এ সমাবেশ আগামী ১৩ মার্চ দুপুরে একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দেশব্যাপী ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর অব্যাহত হুমকি-হামলা বন্ধ এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় মানববন্ধন হবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সম্প্রসারিত মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের নেতারা এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এ সময় সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, সাবেক সচিব ও পরিষদের উপদেষ্টা হীরালাল বালা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য নিখিল মানখিন, বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী ফোরামের সভাপতি সঞ্জীব দ্রং উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করে দেশ সঙ্কটের মুখে পড়ে এমন সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী প্রদান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, পাকিস্তানী আমলের মতো স্বাধীন বাংলাদেশে এখনও রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে সংখ্যালঘুরা। তাই অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পরিষদ ২৩ জানুয়ারি মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু চলমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে পরিষদ বাধ্য হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, স্বাধীনতার পরে চার দশকের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও দেশ আজও সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বৈষম্যমুক্ত হতে পারেনি। ধর্মের বেড়াজাল ছিন্ন করে এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। রাষ্ট্রধর্ম আজও বহাল রয়েছে। ‘আদিবাসী’ পরিচয়ে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি মেলেনি। দেড় দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। বিগত সরকারের আমলে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণসহ হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের অধিকার সুরক্ষায় হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণীত হলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না বলে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়। বলা হয়, মহলবিশেষের অহেতুক বাধার কারণে এসব সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব আইনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারী পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে সম্মেলনে বলা হয়, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বহুমুখী সঙ্কটের মুখোমুখি। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ১৯৪৭ সালের ২৯.৭% থেকে ২০১১ সালে ৯.৭%-এ নেমে এসেছে। একই সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হার ৯৮.৬% থেকে বর্তমানে ৪৮%-এ এসে ঠেকেছে। রাজনীতির মাঠে সংখ্যালঘুরা বর্তমানে ‘দাবার ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন- এমন অভিযোগ তুলে বলা হয়, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদে একজনও পূর্ণমন্ত্রী নেই। ৩০০ সংসদীয় আসনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্ব মাত্র ১৭, সংরক্ষিত ৫০টি মহিলা আসনে এ সংখ্যা মাত্র একজন। ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও ইসলাম ধর্ম ভিন্ন অপরাপর ধর্মের শিক্ষার জন্য আজ পর্যন্ত দেশের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকের নিয়োগ নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ বিগত কয়েক বছরে দেখা গেলেও তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি করা হয়। তবে প্রধান বিচারপতি হিসেবে সুরেন্দ্র কুমার সিন্হার (এস কে সিন্হা) নিয়োগ সাম্প্রতিক এ বিষয়ে একধাপ অগ্রগতি বলেও উল্লেখ করা হয়। এজন্য পরিষদ নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর হামলা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা, লুটপাট, প্রতিমা ভাংচুরের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
×