ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিষিদ্ধ গাইডে সয়লাব বাগেরহাট কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৩:১৬, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

নিষিদ্ধ গাইডে সয়লাব বাগেরহাট কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটে প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে নতুন বছরের ক্লাস শুরু হতে না হতেই নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে প্রকাশকরা। গাইড বই প্রকাশকদের পক্ষে নিয়োজিত মার্কেটিং বিভাগের প্রতিনিধিরা স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে বিক্রির জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কতিপয় শিক্ষকসহ স্থানীয় একাধিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে ডোনেশন চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এ ডোনেশন বাণিজ্য জেলার শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মংলা, রামপাল, চিতলমারী, মোল্লাহাট, কচুয়া, ফকিরহাট ও সদর উপজেলার প্রায় সর্বত্রই কম-বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। জেলাব্যাপী এ বাণিজ্যের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে, গাইড নির্ভরশীলতার ফলে সরকারের সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মনে করছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৯টি মাদ্রাসা ও ১১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাবর্ষের কয়েক হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে প্রাইম, জুপিটার, নিউটন, পাঞ্জেরী, ক্যাপিটাল, স্কলার, গ্লোবাল, নব পুথিঘর, ক্যাপ্টেন, রূপসি, গোল্ডেন এ প্লাস, কনকর্ট, সাইমা, আশার আলো, আলফাতা, আল বারাকা, আল বানার, আল ইত্তেফা, লেকচার, গ্লাক্সি, অনুপম, ইসলামিক পাঞ্জেরী, নবদূত, আলফালা ও আল সামাদ পাবলিকেশন্সসহ শতাধিক প্রকাশনী ব্যাপকভিত্তিতে প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত গাইড বই প্রকাশ করছে। এছাড়া বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি গ্রামার ও এসএসসি টেস্ট পেপারসহ স্ব স্ব বিভাগের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সুপারদের সঙ্গে ডোনেশনের নামে চলছে আর্থিক চুক্তি। স্কুলের ছাত্র সংখ্যার ভিত্তিতে এ ডোনেশন নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে স্কুলপ্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা আগাম ডোনেশন দেয়া হচ্ছে। শুধু ডোনেশন নয়; তার সঙ্গে সারাবছরের সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফ্রি দেয়ার চুক্তি হচ্ছে। উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারের এক বই বিক্রেতা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, যে গাইড বইয়ের দাম ৬৫০-৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বাস্তবে তার মূল্য ২০০-২৫০ টাকা। গাইডপ্রতি ২০-২৫ ভাগ কমিশন নেয়া হচ্ছে। প্রকাশকরা বইপ্রতি দুই থেকে তিনগুণ দাম বেশি ধার্য করেছে। বাড়তি টাকা অভিভাবদের পকেট থেকে কোম্পানিগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া সারাবছর বই বিক্রি করে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ করা গেলেও বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজি গ্রামারসহ বিষয়ভিত্তিক প্রতি শিক্ষক কমিশন পাবে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা।এছাড়া স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি ছয় লাখ টাকা, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি তিন লাখ টাকা ইতোমধ্যে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ডোনেশন নিয়েছে এবং মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে দর কষাকষি চালাচ্ছে। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, শিক্ষকরা আন্তরিক হলে ছাত্রছাত্রীদের গাইড বইয়ের প্রয়োজন পড়ে না। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, কোন বিদ্যালয়ে যেন গাইড বইয়ের ব্যবহার না হয় সেজন্য তিনি ইতোমধ্যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবহিত করেছেন।
×