ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রীতি ম্যাচে আবাহনীর কাছে জাতীয় দলের পরাজয়ের জের, পুরো দলকে বিকেএসপি থেকে ডেকে না হলো বাফুফে ভবনে, ফুটবলাররা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে সেমিতে খেলার প্রতিশ্রুতি দিলেন সভাপতিকে

নাখোশ সালাউদ্দিন- ক্যাম্প থেকে ফুটবলারদের তলব

প্রকাশিত: ০৩:১০, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

নাখোশ সালাউদ্দিন- ক্যাম্প থেকে ফুটবলারদের তলব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘২০১৫ যেন ২০১৪ সালের চেয়ে ভাল হয়। গত বছর আমরা বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ও প্রীতি ম্যাচ খেলেছি। ওই ম্যাচগুলোর আলোকে বলতে পারি আমাদের দলের শক্তিমত্তা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। এর সুফলই হয়ত বা আমরা পেতে পারি আসন্ন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে।’ কথাগুলো সাইফুল বারী টিটুর। নতুন বছরের প্রথম দিনে বাফুফে ভবনে বসে এমনটাই বলেছিলেন তিনি। আসন্ন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য সেদিন ছিল জাতীয় দলে ডাক পাওয়া ফুটবলারদের রিপোর্র্টিং ডে। একটি খেলার উন্নতির জন্য কী কী দরকার? ভাল খেলোয়াড়, মাঠ, কোচ, সংগঠক, ক্রীড়া সরঞ্জাম এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন চেষ্টা করেছেন জাতীয় দলকে সবকিছুই দিতে। তারা এখন সাভারের জিরানির বিকেএসপিতে অনুশীলনরত। চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার আগে সব দলই অনুশীলন ম্যাচ খেলে। বাংলাদেশ জাতীয় দলও খেলেছে সোমবার। বিকেএসপিতেই অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচটি। প্রতিপক্ষ ছিল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। ফুটবলপ্রেমীরা সবাই ধারণা করেছিলেন জাতীয় দল অনায়াসেই হারিয়ে দেবে আবাহনীকে। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল পরাজিত হয়েছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের কাছে! জাতীয় দলকে ২-০ গোলে হারারে লজ্জা উপহার দেয় অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটানের আবাহনী। দুটি গোলই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে (৬৫ ও ৭৫ মিনিটে)। দুটিই করেন হাঙ্গেরিয়ান ফরোয়ার্ড সাবোলোস সার্বা। আরও বড় ব্যবধানে হারতে পারত জাতীয় দল। জোড়া গোল করা সার্বা একাই মিস করেছেন আরও গোটা তিনেক সহজ সুযোগ। এর মধ্যে দুবার তিনি গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল বাইরে মারেন। সুযোগ নষ্ট করেছে জাতীয় দলও। উইঙ্গার জাহিদ একটি সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে হারের ব্যবধান কমত মামুনুল বাহিনীর। আন্তর্জাতিক আসর খুব কাছে হলেও ফিটনেস ঘাটতিটা রয়েই গেছে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে। স্বীকার করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ সাইফুল বারী টিটুও, ‘দলের খেলোয়াড়দের ফিটনেস শতভাগ নেই। কিছুটা ক্লান্তিও ছিল। আর আমরা এই ম্যাচটাতে নেমেছিলাম কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই। আবাহনীর বিদেশী খেলোয়াড় কিংবা পুরো দল সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল না। তারপরও আমাদের গোল খাওয়া উচিত হয়নি। আমরা বেশকটি ভাল সুযোগ পেয়েও সেগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। তবে আশা করছি গোল্ডকাপের আগেই পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারব আমরা।’ এ ম্যাচে সব খেলোয়াড়কেই মাঠে নামিয়েছিলেন টিটু। তবে আবাহনীর তিন হাঙ্গেরিয়ান এবং ঘানার এক ফুটবলার সম্পর্কে ধারণা ছিল না তাদের। সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায় আবাহনীর বিদেশীরা। তবে আবাহনীর এই চার বিদেশী যে ভাল খেলেছেন, তা নির্দিধায় স্বীকার করেন টিটু, ‘ম্যাচের পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছেন আবাহনীর বিদেশীরা। তারা বেশ ভাল খেলেছেন।’ বঙ্গবন্ধু কাপ শুরুর আগে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে আবাহনীর কাছে হারের কারণে জাতীয় দলের ফুটবলার এবং ম্যানেজমেন্টের ওপর দারুণ নাখোশ হয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। এ জন্য তিনি মঙ্গলবার বিকেএসপিতে ক্যাম্পে থাকা দলের ফুটবলার, কোচসহ পুরো ম্যানেজমেন্টকে ঢাকায় ডেকে পাঠান জরুরী ভিত্তিতে। সভাপতির নির্দেশ পেয়ে সকালেই বাফুফে ভবনে এসে হাজির হন ফুটবলার, কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্ট। দুপুরে পুরো দলের সঙ্গে জরুরী সভায় মিলিত হন সালাউদ্দিন। ৬ জাতির টুর্নামেন্টটি সিলেটে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ২৯ জানুয়ারি। বাংলাদেশ ছাড়াও এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং বাহরাইন। বাফফুফে সভাপতির চাওয়াÑ বাংলাদেশ ফাইনাল না খেলতে পারুক, অন্তত সেমিফাইনাল খেলুক। তবুও বহুদিন পর নিজ দেশে অনুষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্টে খেলার সম্মানটুকু রক্ষা হবে বাংলাদেশের। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচেই যখন আবাহনীর কাছে ২-০ গোলে হেরে যায় জাতীয় দল, তখন এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে বাফুফে সভাপতির। এ প্রসঙ্গে কথা হয় জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক-মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম এবং দুই ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি এবং ওয়াহেদ আহমেদের। তাঁরা যা বলেন, তার সারমর্ম একই, ‘আবাহনীর সঙ্গে হারার কারণে সালাউদ্দিন দারুণ আপসেট হয়েছেন। কেন আমরা হারলাম, তা জানতে আমাদের ঢাকা তলব করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা বঙ্গবন্ধু কাপের সেমিতে খেলবেÑ এটা আমার স্বপ্ন, এভাবে প্র্যাকটিস ম্যাচেই যদি হার, তাহলে কিভাবে হবে? আমরা তাঁকে জানিয়েছি, হার্ড ট্রেনিংয়ের কারণে আমরা সবাই ম্যাচের আগেই ক্লান্ত ছিলাম। তাই ম্যাচে আশানুরূপ ভাল খেলতে পারিনি। সেই সঙ্গে আমরা প্লেয়াররা সবাই সালাউদ্দিন ভাইয়ের কাছে কমিটমেন্ট করেছি এবং তাঁকে আশ্বস্ত করেছি এই বলেÑ বাকি প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে এমন রেজাল্ট আর হবে না এবং আমরা যেভাবেই হোক বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিতে খেলবই।’ অনেকদিন ধরে চলছে ক্রুইফ-নাটক। তিনি আসবেনÑ এমনটাই মোটামুটি ঠিক হলেও এখনও আসেননি। আদৌ আসবেন কিনা, এ নিয়ে অন্ধকারে আছেন দলের খেলোয়াড়রাও। শেষ পর্যন্ত লোডভিক ডি ক্রুইফ আসবেন কি না তা মঙ্গলবার পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি বাফুফে। কোচের বিষয়টি দেখাশুনা করা বাফুফের সহ-সভাপতি এবং ন্যাশনাল টিমস কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ক্রুইফের সঙ্গে কথা বলেও তাঁর ঢাকা আসার দিনক্ষণ জানতে পারেননি। বরং ক্রুইফ নাকি একটু গড়িমসি করেছেন আসার ব্যাপারে! দায়িত্ব নিলে চুক্তিটা কেমন হবে তাবিথ আউয়ালের কাছে তা জানতে চেয়েছেন ক্রুইফ। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ উপলক্ষে এক মাসের জন্য ক্রুইফকে আনার সিদ্ধান্ত ছিল বাফুফের। সে হিসেবে আরও আগেই এসে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু আজ-কাল করতে করতে সময় পার করেছেন ক্রুইফ। বাবা মারা যাওয়ার পর ক্রুইফের আগমন আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ক্রুইফ যেমন বলছেন না ঠিক কবে আসবেন, তেমন বলছেন না আসবেনও না। কথায় কথায় ঝামেলা তৈরি করার কারণেই তাঁকে ইতোপূর্বে বিদায় করে দিয়েছিল বাফুফে। এখন তাঁকে বঙ্গবন্ধু কাপের দায়িত্ব দিতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন ঝামেলা। ‘ক্রুইফ ফোনে বলেছেন, আসতে তো দেরি হবে। এখন আসলে আমার সঙ্গে চুক্তিটা কেমন এবং কিভাবে হবে? আমি বলেছি আগে আসুন, তারপর বসে সিদ্ধান্ত। কিন্তু তিনি এখন কেমন যেন গড়িমসি করছেন। তাই বলতে পারছি না ক্রুইফ ঠিক কবে আসবেন।’ তাবিথের ভাষ্য। আসবেন না, সে কথাও বলছেন না- তাবিথ আউয়াল নিজেও অনেকটা বিরক্ত কোচের ওপর। তবে তিনি বলেন, ‘ক্রুইফত এ দলটিকে অনেকদিন পরিচালনা করেছেন। কোচিংও চলছে তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী। এখনও সময় আছে। আমার বিশ্বাস ক্রুইফ আসবেন এবং এসে কয়েকদিন কাজ করলেই ঠিক হয়ে যাবে।’
×