ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সহপাঠী দগ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে ইডেন ছাত্রীদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

সহপাঠী দগ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে ইডেন ছাত্রীদের বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধে সহপাঠীদের পেট্রোল বোমায় দগ্ধ করার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে ইডেন কলেজের ছাত্রীরা। বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকরাও। ছাত্রীদের ওপর পেট্রোল বোমা হামলা ও আন্দোলনের নামে নাশকতার প্রতিবাদে সোমবার কলেজের মূল ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ইডেনের ছাত্রীরা। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আগুনে পুড়িয়ে মারার রাজনীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এদিকে বিক্ষুব্ধ ইডেন কলেজ পরিদর্শন করে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর আগে রবিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় দিনে-দুপুরে একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুন দেয়া হয়েছে, যাতে আহত হয়েছেন ইডেন কলেজের চার ছাত্রী। এদের মধ্যে সাথী আক্তার (১৯) ও যুথি আক্তার (১৯) নামে দুজন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। বাস থেকে নামার হুড়োহুড়িতে পায়ে আঘাত পেয়েছেন মাইমুনা বেগম (১৮) ও মুক্তি (১৯) নামের অপর দুই শিক্ষার্থী। আহতরা ইডেন কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণ করে তারা মিরপুরে বাসায় ফিরছিলেন। চার শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পেয়ে রবিবারই ঢাকা মেডিক্যালে ছুটে যান শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই আন্দোলন শুরু করেছে আহত ছাত্রীদের সহপাঠীরা। ঘটনার প্রতিবাদ ও অপরাধীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবিতে সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে। যেখানে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরাও যোগ দেন। এক পর্যায়ে ছাত্রীরা কলেজের মূল ফটকের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ঘটনা জানতে পেরে ছাত্রীদের শান্ত করতে সেখানে ছুটে যান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাকে পেয়ে ছাত্রীরা বলেন, অবিলম্বে মানুষ পোড়ানোর রাজনীতি বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিন। আমাদের নিরাপত্তা দিন। ছাত্রীদের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মা, তোমরা ভয় পেওনা। আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। তোমরা নির্ভয়ে চলাফেরা করবে। তোমাদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া হবে। অবরোধকারীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, কোন দাবি থাকলে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তা উপস্থাপন করুন। সহিংসতা করে প্রাণহানি ঘটিয়ে অপরাজনীতি করবেন না। আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চাই। শিক্ষার নিশ্চয়তা চাই। তিনি বলেন, বোমাবাজ-জঙ্গীবাজরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে। পশু এবং অমানুষরাই এ ধরনের কাজ করতে পারে। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যাচ্ছে বলেই কি তাদের পোড়াতে হবে? বাসে অগ্নিসংযোগ করে তাদের শরীর ঝলসে দিতে হবে? জনগণের কল্যাণে ও অধিকারের কথা বলে যারা অবরোধ করছেন, যদি সত্যিই বিষয়টি তা হতো; তবে মানুষ মেরে তারা আন্দোলন করতেন না। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, দেশে সকল পরীক্ষার তারিখ আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে। ছয় বছর ধরে একইভাবে কলেজে ফরম পূরণের তারিখ নির্ধারণ করা হচ্ছে। ইডেন কলেজের ওই ছাত্রীরা ফরম পূরণের জন্যই কলেজে যায়। এ সময় তারা অগ্নিদগ্ধ হলো। এদিকে পেট্রোল বোমায় দগ্ধদের দেখতে সোমবার ঢাকা মেডিক্যালে যান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। তিনি ঘটনার বিমর্ষতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবরোধের নামে এমনি নৃশংস কর্মকা- ও মানুষ হত্যা অনতিবিলম্বে বন্ধ করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আবেদন জানান।
×