ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ববাজারে চিংড়ির মূল্যহ্রাস

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

বিশ্ববাজারে চিংড়ির মূল্যহ্রাস

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ সাদা সোনা খ্যাত বাগদাচিংড়ির দাম বাজারে অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি চাষী বিপাকে পড়েছেন। বাজারে বাগদাচিংড়ির দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ শ’ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। দাম কমে যাওয়ায় ডিপো মালিকরা চিংড়ি কিনতে অনীহা প্রকাশ করছেন। ফলে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো চাষীরা বাকিতে চিংড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় চিংড়ির ওপর নির্ভরশীল এ অঞ্চলের হাজার হাজার চাষী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) দাবি করেছে আন্তর্জাতিক বাজারে বাগদাচিংড়ির দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কবে নাগাদ চিংড়ির বাজার স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিন চিংড়ির দাম ওঠা-নামার বিষয়টি তদারকি করতে চাষীরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নতুবা দেশের দ্বিতীয় রফতানি খাত চিংড়ি শিল্পে আরও বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। লাখ লাখ চাষী পড়বেন মহাসঙ্কটে। এ অঞ্চলের চিংড়ি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত চিংড়িচাষী, মৎস্য আড়তদার, ডিপো মালিক ও রফতানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি মৌসুমে বাগদাচিংড়ির বাজারদর (বর্তমানে ১৫ গ্রেড ৮০০ টাকা, যা তিন মাস আগে ছিল ১৩০০ টাকা), ২০ গ্রেড ৭০০ টাকা যা আগে ছিল ১১০০ টাকা, ৩০ গ্রেড ৬০০ টাকা যা আগে ছিল ৮৫০ টাকা, ৪৪ গ্রেড ৪০০ টাকা যা আগে ছিল ৬০০ টাকা এবং ৬৬ গ্রেড ২০০ টাকা যা আগে ছিল ৪৫০ টাকা)। বাগেরহাট সদর উপজেলার বারাকপুর মৎস্য আড়তে বাগদাচিংড়ি বিক্রি করতে আসা বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের বড় দুর্গাপুর গ্রামের চিংড়ি আলম বলেন, চলতি মৌসুমে আমি তেরো বিঘা জমিতে বাগদাচিংড়ির চাষ করেছি। মৌসুমের শুরুতে ঘেরে যে রেণু পোনা ছেড়েছিলাম তা ভাইরাস সংক্রমিত ছিল। পরে আবার নতুন করে পোনা ছাড়ি। সেই পোনায় বাগদাচিংড়ির উৎপাদন ভালই হয়েছে। প্রথম দিকে বাগদাচিংড়ি বারো শ’ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি করেছি। সেই চিংড়ি এখন ৬ থেকে ৭শ’ টাকায় বিক্রি করছি, তাও আবার বাকিতে। ডিপো মালিকের কাছে বর্তমানে আমার লক্ষাধিক টাকা পাওনা। এই টাকা কবে নাগাদ দিতে পারবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বারাকপুর মৎস্য আড়তের শাহ জালাল আড়তের ডিপো মালিক ইউসুফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) দাবি করেছে আন্তর্জাতিক বাজারে বাগদাচিংড়ির দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারে বাগদাচিংড়ির দাম কমে গেছে। গত সেপ্টম্বর থেকে নতুন করে কোন শিপমেন্ট হচ্ছে না। গত চার মাসে আমি চাষীদের কাছ থেকে ত্রিশ লাখ টাকার চিংড়ি বাকিতে কিনেছি। আমি যেমন চাষীদের কাছ থেকে বাকিতে চিংড়ি কিনেছি তেমনি এজেন্টের কাছে বাকিতে চিংড়ি বিক্রি করেছি। তারা আমার পাওনা টাকা দিলে আমিও চাষীদের পাওনা দিয়ে দেব। বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম বলেন, চিংড়ি উৎপাদনে দেশের অন্যতম জেলা বাগেরহাট। এই জেলার শতকরা সত্তরভাগ মানুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত। মৌসুমের শুরুতে চিংড়ি ঘেরে ভাইরাস সংক্রমিত হয়। ঘের মালিকরা ভাইরাসের প্রকোপ কাটিয়ে উঠে ঘেরে চিংড়ির উৎপাদন ভাল পায়। ঘেরে উৎপাদিত চিংড়ি মৌসুমের প্রথম দিকে বাজারে দামও পায় আশানুরূপ। কিন্তু তিন মাস আগে হঠাৎ করে বাজারে বাগদাচিংড়ির দাম অস্বাভাবিকহারে কমে যায়। গত চার মাস আগে চাষীরা যে চিংড়ি ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে তা এখন ৬ থেকে সাত শ’ টাকায় বিক্রি করছে। কেজিপ্রতি চার থেকে পাঁচ শ টাকা কম। একদিকে চিংড়ির দাম কম অন্যদিকে তা আবার ডিপো মালিকদের কাছে বাকি রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই জেলার চাষীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
×