ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বক্তাদের অভিমত

অপশক্তিকে রুখতে হবে ॥ মৌলবাদই বড় শত্রু

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

অপশক্তিকে রুখতে হবে ॥ মৌলবাদই বড় শত্রু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলেচনা সভায় বক্তারা বলেন, মহাজোট সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। তারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। মহাজোট সরকারকে আমরা অভিনন্দন জানাই। জামায়াত-শিবিরের মূল লক্ষ্য ’৭১-এ পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া। তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল শক্তি এক না হলে ’৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া তাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে জামায়াত-শিবির নামক এই অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াতে হবে। অবরোধ-হরতালের নামে জামায়াত-বিএনপি দেশের সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর তারা আক্রমণ করেছে। জামায়াত-বিএনপির এই জিহাদ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তরুণ প্রজন্ম গত বছর শাহবাগে জাগরণ তৈরি করেছিল; মুক্তিযুদ্ধের সকল শক্তিকে সে রকম জাগরণ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করতে হবে। সোমবার রাজধানীর ধানম-িতে ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতিষ্ঠিত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াত-শিবির চক্র নিষিদ্ধকরণের আন্দোলন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ সব কথা বলেন। প্রথমেই মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাওয়া প্রয়াত সহযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির সূচনা বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শত্রু মৌলবাদ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি জানাতে প্রথমেই দরকার ছিল মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সহায়তা। সে সময় আওয়ামী লীগ আমাদের সর্বাত্মক সহায়তা করেছিল। যে ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে বর্তমান মহাজোট সরকার এ বিচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাই মহাজোট সরকারকে অভিনন্দন জানাতে চাই। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি এখনও নিষিদ্ধ করা হয়নি, আমাদের দাবি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র আর সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারকে জামায়াত নিষিদ্ধ করতে হবে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সহবাস করা যাবে না, বড় দলগুলো যদি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করত তাহলে বহু আগেই জামায়াত নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। নির্মূল কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বলেন, যুদ্ধাপরাদের বিচারে আমাদের অর্জন অনেক। বেশ কিছু মামলার মাধ্যমে শহীদ জায়া ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিশেষ সম্মান দেখানো হয়েছে। দল হিসেবে জামায়াতের বিচার এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, বাসায় ফিরলে ছেলেমেয়েরা জিজ্ঞেস করে তোমরা কেন মানুষ পোড়ানো বন্ধ করতে পারছ না। তখন উত্তর দেয়ার মতো কিছুই খুঁজে পাই না। বিএনপি নেতাকর্মীদের ছেলেমেয়েরা নির্বিঘেœ স্কুল-কলেজে যাবে, অথচ সাধারণ মানুষের ছেলেমেয়েরা আগুনে পুড়ে মরবে এটা হয় না। এর একটি বিহীত হওয়া উচিত। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির লক্ষ্যগুলোতে পৌঁছতে হলে রাজনৈতিক শক্তির সহায়তা প্রয়োজন, তা আমরা জানতাম। এ লক্ষ্যটি আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সবচেয়ে বড় সংগঠন। তাদের হাত ধরেই এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ অর্জিত হয়েছে। নির্মূল কমিটি গঠনের সময় আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে। তিনি বলেন, যদি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হতেন তাহলে কোন ক্রমেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতো না। এমনকি শেখ হাসিনা বাদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও এ ঘাতক দালালদের বিচার হতো না। তিনি আরও বলেন, জামায়াত-শিবির প্রতিরোধে ২০১৩ সালে অমরা পাড়ায়-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কথা বলেছিলাম; কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের কথায় কান দেননি। এখন তারাই পাড়ায়-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কথা বলছেন। বিচারপতি সৈয়দ আমীরুলের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শাহাদাত হোসেন, আমেনা আহমেদ এমপি ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী।
×