ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল

রাজধানীতে চার আইএস জঙ্গী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

রাজধানীতে চার আইএস জঙ্গী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক সমন্বয়কসহ রাজধানী থেকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) চার জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে জিহাদী বই, লিফলেট, জঙ্গী প্রশিক্ষণের ভিডিওসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। গ্রেফতারকৃতদের পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় মারাত্মক হামলা করার পরিকল্পনা ছিল গ্রেফতারকৃতদের। রবিবার রাত ৩টার দিকে যাত্রাবাড়ীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় সাখাওয়াতুল কবির (৩৫), আনোয়ার হোসেন বাতেন (৩২) ও রবিউল ইসলামকে (৩৫)। পরে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে খিলক্ষেত থেকে গ্রেফতার করা হয় সমন্বয়ক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামকে (৪০)। সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, গ্রেফতারকৃতদের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম। আর বাকি তিনজনের মধ্যে প্রধান কবির। গ্রেফতারকৃতরা জেএমবির সদস্য। আইএসআইয়ের নিকট থেকে অর্থ ও মারাত্মক অস্ত্র সংগ্রহ করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। গ্রেফতারকৃত আনোয়ার হোসেন ইতোপূর্বে খিলক্ষেত থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় তিন বছর জেল খেটে জামিনে ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ও ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, কবিরের পিতার নাম আব্দুল হাকিম। তিনি সেনাবাহিনীর অনারারি ক্যাপ্টেন ছিলেন। তারা তিন ভাই এক বোন। এক ভাই প্রকৌশলী। আরেক ভাই চিকিৎসক। একমাত্র বোন একটি কলেজের প্রভাষক। কবিরের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানা এলাকায়। কবিরের জন্ম ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। রাজধানীর মহাখালী সরকারী তিতুমীর কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে অর্নাস পাস করেন। এরপর ২০০৬ সালে জেএমবির কারাবন্দী আমির জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরের মেয়ের জামাই ইজাজের হাত ধরে জিএমবিতে যোগ দেন। ইজাজের মাধ্যমেই ২০০৯ সালে তিনি পাকিস্তান চলে যান। সেখানে আল কায়েদায় যোগ দেন। মতবিরোধের কারণে আল কায়েদা ছেড়ে আইএসে যোগ দেন। আইএসের মতাদর্শ বিধর্মীদের দাওয়াত দেয়া। ইসলামের ছায়াতলে না এলে তাদের হত্যা করাই আইএস জঙ্গীদের আদর্শ। এমন আদর্শ বুকে ধারণ করেই কবির আইএসের হয়ে কাজ করছিলেন। ডিবির সূত্রটি আরও জানায়, সম্প্রতি পাকিস্তানের একটি স্কুলে হামলা করে অন্তত শতাধিক স্কুলছাত্রকে হত্যা করে জঙ্গীরা। এরপর থেকেই পাকিস্তানে জঙ্গীদের গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত ৮ জানুয়ারি অভিযানে পাকিস্তানের ওয়াজিরস্থানে পুলিশের অভিযানে নিহত আইএস জঙ্গীদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশী রয়েছেন। এরা হলেনÑ গ্রেফতারকৃত কবিরের ভায়রা সাজ্জাত ওরফে ইজাজ ওরফে কারগিল, কবিরের ভাগ্নি-জামাই অভি, গ্রেফতারকৃত বাতেনের বোন পাকিস্তানে অবস্থানরত ফাতেমার স্বামী সায়েম ও সায়েমের দুলাভাই শামীম। এছাড়া বাতেন ও রবিউল দু’জনই আইটি বিশেষজ্ঞ। আর গ্রেফতারকৃতদের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম বহুতল ভবনে মই সরবরাহের ব্যবসা করেন। তিনি মূলত গাজীপুরে বসবাস করেন। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে সামিউর রহমান ইবনে হামদান (২৪) নামে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেফতার করে ডিবি। তার বিরুদ্ধে আইএসের জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হয়। হামদান বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল কায়েদা নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং বাংলাদেশে ইসলামী শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে কাজ করছিলেন। এছাড়া আইএস সদস্য সংগ্রহে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকা থেকে মোঃ হিফজুর রহমান (২২) নামে একজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। তিনি সিলেটের শাহজালাল উপশহর এলাকার সরকারী তিব্বিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। হিফজুর নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সদস্য। এছাড়া ওই সময় রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও রমনা এলাকা থেকে মোঃ আসিফ আদনান (২৬) এবং মোঃ ফজলে এলাহী তানজিল (২৪) নামের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ দু’জন আইএসে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছিল। আসিফ ও তানজিল জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। আদনান সুপ্রীমকোর্টের সাবেক এক বিচারকের ছেলে। আর তানজিলের মা ওএসডি এক যুগ্ম-সচিবের ছেলে। সম্প্রতি কয়েকজন মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকের শিরñেদ করে ইন্টারনেটে ভিডিও প্রকাশ করে। বিশ্বের অন্তত ৮০টির বেশি দেশে ১৫ হাজারের বেশি আইএস যোদ্ধা রয়েছে বলে আমেরিকার ধারণা।
×