ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদের উদ্বোধনী ভাষণে রাষ্ট্রপতি

উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রেখে সরকার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রেখে সরকার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ স্বাধীনতা সমুন্নত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করতে বাঙালী জাতিকে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলনের নামে কতিপয় রাজনৈতিক দলের জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, খুন-জখমসহ ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মধ্যে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রেখে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েই বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি, উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রেখে সরকার তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদে চলতি দশম জাতীয় সংসদের শীতকালীন পঞ্চম অধিবেশনের শুরুর দিনে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে বর্তমান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। গত মহাজোট সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে দেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বর্তমান সরকারের দক্ষ পরিচালনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক সূচকসমূহের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতের চেয়েও এগিয়ে গেছে। বিশ্ব পরিম-লে বাংলাদেশ আজ একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, সমস্যা নিরসনে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষাকে বাস্তব রূপ দিতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণের প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদে গঠনমূলক ও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য তিনি সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমেই আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে পারব। এই সুমহান প্রয়াসে আমাদের অবশ্যই পরিপূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে হবে। বিকেল চারটায় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে পঞ্চম অধিবেশন শুরু হয়। তবে এর আগেই সংসদ ভবনে প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতিকে সংসদে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। নতুন বছরের প্রথম অধিবেশন হওয়ায় পুরো সংসদ অধিবেশন ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ প্রায় সকল সংসদ সদস্যই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটায় বিউগলে আগমনী ধ্বনির মাধ্যমে সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় সবাই দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান জানান। এরপর জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। পরে সাংবিধানিক রেওয়াজ অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম অধিবেশন হওয়ায় রাষ্ট্রপতি দীর্ঘ ৭৬ পৃষ্টার ভাষণে বর্তমান সরকারের সাফল্য, উন্নয়ন এবং আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। নির্ধারিত ডায়াসে দাঁড়িয়েই রাষ্ট্রপতি তাঁর দীর্ঘ ভাষণ দেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় ভিভিআইপি গ্যালারিতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সচিববৃন্দ, কূটনীতিক, তিন বাহিনীর প্রধানগণসহ সামরিক-বেসামরিক উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় সংসদ সদস্যরা মাঝে মধ্যেই টেবিল চাপড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানাতে দেখা যায়। রাষ্ট্রপতি ৪টা ৩০ মিনিট থেকে ভাষণ শুরু করে ৫টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা ভাষণ দেন। ভাষণ শেষে পুনরায় জাতীয় সঙ্গীতের মূর্ছনায় রাষ্ট্রপতিকে সংসদ অধিবেশন থেকে বিদায় জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির প্রস্থানের পর স্পীকার সংসদের অধিবেশন আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রেখে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েই বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনা করছে। গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সুদৃঢ়করণ এবং সামাজিক শান্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিক চর্চা ও অনুশীলন জাতির বিভিন্নমুখী সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষমÑ এ বিশ্বাস সরকারের সকল কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়। গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার রূপকল্প-২০১৪, দিনবদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের জ্ঞানভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধিশালী ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ব্যাপকভাবে সাফল্য অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে ২০৪১ সালের দিকেÑ বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিসিক্ত হওয়ার মানসে। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি, উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রেখে সরকার তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী পলাতক খুনীদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। জেলখানায় চার জাতীয় নেতার নৃশংস হত্যা বিচার নিশ্চিত করতে সুপ্রীমকোর্টের আপীল চলমান আছে। সরকার কর্তৃক গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করছে এবং বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা ও অর্জনের চিত্র তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরও বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধির এমন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, যেখানে দারিদ্র্য ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসবে, সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে, মানুষের সৃজনশীলতা ও উৎপাদন ক্ষমতার বিকাশ ঘটবে, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত হবে, সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনা হ্রাস পাবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই সরকার তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। সমুদ্রসীমা জয়ে সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণসংক্রান্ত মামলায় আন্তর্জাতিক সালিশী আদালত বাংলাদেশের পক্ষে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণসংক্রান্ত মামলায়ও বাংলাদেশের পক্ষে ঐতিহাসিক রায় হয়। ফলে বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমায় নিরঙ্কুশ সার্বভৌম অধিকার অর্জন করে। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ এই অসামান্য সাফল্য অর্জনে সমর্থ হয়েছে। এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে নতুন নতুন সম্পদ আহরণের পথ উন্মুক্ত হয়েছে, যা আগামীতে জাতির আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে মূল্যবান অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। বর্তমান সরকারের দক্ষ পরিচালনার ফলে বিশ্বসভায় দেশ ও জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, অতীতের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা কাটিয়ে উঠে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত দেশ গড়তে মহাজোট সরকার গত মেয়াদে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। দেশে সুশাসন সংহতকরণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে সরকার আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবেÑএটাই জাতির প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা পূরণের মাধ্যমেই দেশবাসী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে। রূপকল্প-২০২১ এর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই আমরা জাতীয় জীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি মাইলফলক সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে পারব। একইভাবে আমরা এগিয়ে যেতে পারব ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার লক্ষ্যে। রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ সব লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। দেশের শক্তিশালী অর্থনীতির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বমন্দার প্রভাব সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অব্যাহত প্রবৃদ্ধি, সহনীয় মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাজেট ঘাটতির সহনীয় মাত্রা, রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার মানদ- অক্ষুণœ রেখেছে। ২০০৮-০৯ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত গড়ে ছয় শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উদ্ভূত অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও সাময়িক হিসাব অনুযায়ী মাথাপিছু জাতীয় আয় বেড়ে এক হাজার ১৯০ মার্কিন ডলার হয়েছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ১৩৬ মার্কিন ডলার বেশি। মূল্যস্ফীতির হারও নিয়ন্ত্রিত ও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। বৈদেশিক সহায়তায় প্রতিশ্রুতি এবং অর্থ ছাড়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ এবং অন্যান্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্বাচন কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে প্রায় ৯ কোটি ২০ লাখ ভোটারের তথ্যভা-ার আছে। নির্বাচনে ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহারের ফলে স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। সমন্বিত খাদ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার নির্ভরযোগ্য জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার আপামর জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত করতে সর্বক্ষণিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে এবং ইতোমধ্যে খাদ্য রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশ এবং ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে জনগণের নৈতিক মান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সহকারী স্ব স্ব ধর্মচর্চা করতে পারে সে ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। গত ছয় বছরে সকল ধর্মের মানুষ নির্বিঘেœ ধর্মীয় উৎসব পালন করেছে। তিনি বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকারের গৃহীত নীতিমালা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং রেমিটেন্স প্রাপ্তির হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ গত কয়েক বছর স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকারের সাফল্যে তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ শীর্ষক প্রকল্পটি ইতোমধ্যে একনেক কর্তৃক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটÑ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করা যায় যে, আগামী তিন বছরের মধ্যেই এ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা ১১ হাজার ২৬৫ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। বিদ্যুতের সুবিধাভোগী জনগণের সংখ্যা শতকরা ৬৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সাল নাগাদ পদ্মা সেতু যানবাহন পারাপারের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই সেতু এশিয়ান হাইওয়েতে অবস্থিত বিধায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ছাড়াও এটি দক্ষিণ-এশীয় অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। তিনি বলেন, বিশ্ব পরিম-লে বাংলাদেশ আজ একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও কার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সরকার জনপ্রশাসনকে দক্ষ, জনমুখী, জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, আঞ্চলিক অখ-তা নিশ্চিতকরণ এবং যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সশস্ত্রবাহিনীর সহযোগিতা অনস্বীকার্য। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অধিকতর সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ‘ফোর্সেস গোল- ২০১৩’-এর আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও চৌকস বাহিনীতে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমগ্র বিশ্বে শান্তিরক্ষায় সর্বাধিক সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বজনবিদিত। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অংশ হিসেবে ডিজিটাল সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দুটি ট্রাইব্যুনালে মোট ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, একটি মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ এবং ১৫টি মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আসামিদের ১২টি মামলার রায়ে মৃত্যুদ-, একটি মামলায় যাবজ্জীবন, একটি মামলায় ৯০ বছর অথবা আমৃত্যু এবং অন্য মামলার একটিতে আমৃত্যু কারাদ-ে দ-িত হয়েছে। চলমান বিচার কার্যক্রমকে আরও গতিশীল সময়োপযোগী করতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের কার্যপ্রণালী বিধিমালা দুটিতে প্রয়োজনীয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের বিচারও শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি হতে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।
×