ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবরোধে আমাগো মাজা ভাইঙ্গা দিছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

অবরোধে আমাগো মাজা ভাইঙ্গা দিছে

হাসান ইমাম সাগর, জবি সংবাদদাতা ॥ কোন বোউনি বাট্টা নাই কী করুম বহে আছি। সেই সকাল থেক্যা অহনও একটা কাস্টমারও আহে নাই। হরতাল-আবরোধ আমগোর মতো মানসের পথে বহায় দিতাছে। পোলা মাইয়া লোয়া ভালোই চোলতাছিলাম। কিন্তু দ্যাশের এই পরিস্থিতি আমাগো মাঞ্জা ভাইঙ্গা দিছে। লোন লইয়া দোকানে মাল তুলছিলাম। অহন বেচাকিনাও করতে পারতাছি না। লোনও শোধ করতে পারতাছি না। এমন হয়ছে দোকান ছাইড়া পালাতে হইব। রবিবার বেলা ১২টার দিকে এমনটায় বলছিলেন পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলিভবনের রিফাত ফেব্রিক্স দোকানের মালিক মোঃ বাবুল শেখ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হরতাল-আবরোধে ধস নেমেছে ব্যবসা বাণিজ্যে। অবরোধের মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ব্যবসায়ী, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের দুঃখ দুরদশা। দোকানপাট খোলা থাকলেও কার্যত ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। পুরান ঢাকার ইসলামপুর, পাটুয়াটুলি, গুলিস্থান, বঙ্গবাজার এবং নিউমার্কেটের অধিকাংশ মার্কেটগুলোতে এমন চিত্র দেখা যায়। জীবন ও টাকার ঝুঁকির কারণে মফস্বল পাইকারী ক্রেতাদের আনাগোনা প্রায় শূন্যের কোটায়। ওডারি মালের ডেলিভারি না দিতে পারায় নতুন কোন ওডার নিতে পারছে না দোকানী। ইসলামপুরের কয়েকজন বস্ত্র ব্যবসায়ী জানকণ্ঠকে বলেন, পার্টির সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। টাকাও পাঠায়। কিন্তু আমরা তো মাল পাঠাতে পারি না। অবরোধের আগে আমরা বিক্রিত মাল ট্রান্সপোর্ট কম্পানির কাছে বুঝে দিতাম। তাঁরা সেটা নিজেদের দায়িত্বে পৌঁছে দিত। কিন্তু বর্তমান ট্রান্সপোর্ট কম্পানি এবং পাইকারী ক্রেতা আমাদের রিক্সে মাল দিতে বলে। এজন্য মালের ডেলিভারি দিতে পারছি না। তাই দেশে আর এক দিনের জন্যও হরতাল অবরোধ দেখতে চায় না আমরা। ব্যবসার বর্তমান হালচাল সম্পর্কে জিসান বস্ত্রবিতানের কর্মচারী সুমন বলেন, অবরোধের পূর্বে বাজার বুঝে প্রতিদিন প্রায় ৭০Ñ৮০ হাজার টাকার বেচাকেনা হতো। কোনদিন কম হলেও আশা থাকত আগামিকাল ভাল হবে। অথচ দুই সপ্তা হতে গেল কোন কাস্টমার নেই। এমন দিন আছে বোউনি করতে পারি না। আরব বোরকা স্টোর দোকানের কর্মচারী নজরুল বলেন, দোকানে আসি আর যায়। কোন দিন দুই এক পিচ মাল বেচি, কোন দিন একপিচও বেচতে পারি না। বাংলাদেশ বস্ত্রবিতানের দোকানী ফরহাদ রকিব বলেন, অবরোধের সময় দোকান খোলা রাখা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে মাঝে মধ্যে হরতাল থাকায় মালিক সমিতির নির্দেশে দোকান বন্ধ রাখা হয়। এখন ব্যবসা করে জীবন চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। হরতাল-অবরোধ আমাগো পেটে লাথি মারে। ইসলামপুরের হাজী আহমেদ মার্কেটের পাকিজা গ্রুপের সাধারণ নির্বাহী পরিচালক খন্দকার মোছাদ্দেক হোসেন কিরোন জানান, বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা শহরে আমাদের পণ্য বিক্রি হয়। আমরা পাকিজা থ্রি-পিচ, শাড়ি, লুঙ্গি, ভয়েল পপলিন প্রিন্টিং থান কাপড়, বেডশিট পাইকারী বিক্রি করি। তবে হরতাল-অবরোধে শতকার ২৫ ভাগ পণ্যও সেল হয় না। কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করতে অনেক কষ্ট হয়। বরগুনা ও পিরোজপুর থেকে স্বপন দেবনাথ ও পিজুস দেবনাথ নামের দুইজন ক্রেতা লঞ্চযোগে ঢাকায় আসছে। উদ্দেশ্য ইসলামপুরে পাইকারী কাপড় ক্রয় করা। কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। তাঁদের ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে ইসলামপুর বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান সোহেল জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসায় আমরা প্রচুর লসে আছি। এই লস আগামী ৬ মাসের মধ্যেও পূরণ করা সম্ভব হবে না। কেবল আমাদের জিম্মি করে এক মহল তাঁদের উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করছে। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।
×