ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলা একাডেমিতে চলছে গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক কর্মতৎপরতা

বর্ণাঢ্য রূপে নতুন আঙ্গিকে আসছে এবারের বইমেলা

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

বর্ণাঢ্য রূপে নতুন আঙ্গিকে আসছে এবারের বইমেলা

মনোয়ার হোসেন ॥ গত বছরই বাংলা একাডেমির আঙিনা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আর এবার সম্প্রসারিত বইমেলাটি অনুষ্ঠিত হবে আরও ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও নতুন আঙ্গিকে। পরিসর বৃদ্ধির পাশাপাশি এই প্রথম মেলার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে চার দিনের আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। দেশবরেণ্য সাহিত্যিকদের সঙ্গে এ সম্মেলনে যোগ দেবেন বিশ্বের নানা প্রান্তের ৪১ সাহিত্যিক, ভাষাবিদ ও গবেষক। একইসঙ্গে মেলায় প্রথমবার যুক্ত হচ্ছে প্যাভিলিয়ন। এছাড়াও একাডেমি আঙিনার মূল মেলা মঞ্চের পাশাপাশি এবার উদ্যানের মেলার অংশভুক্ত মুক্তমঞ্চেও চলবে মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে বর্ণাঢ্য রূপে আবির্ভূত হচ্ছে এ বছরের বইমেলা। বাঙালীর মননের এ মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমিতে এখন চলছে গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক কর্মতৎপরতা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সোমবার একাডেমির সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় মেলা আয়োজনের খুঁটিনাটি বিষয় উঠে আসে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী এবং তথ্য মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, সিটি কর্পোরেশন, দমকল বাহিনীসহ মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলা একাডেমি চত্বরের বাইরে নিয়ে যাওয়া মেলাটি এবার আরও সম্প্রসারিত হবে। পরিকল্পিতভাবে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হবে এবারের বইমেলা। পাঠক বা দর্শকরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে বইকেনার পাশাপাশি মেলায় ঘুরতে পারে সে বিষয়টিতে বিশেষভাবে নজর দেয়া হচ্ছে। আর এই প্রথম মেলায় থাকছে প্যাভিলিয়ন। মেলাকে বর্ণাঢ্য রূপ দিতে ব্যবহার করা হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চটি। এখানে অনুষ্ঠিত হবে মেলাকেন্দ্রিক নাট্যোৎসব। এর ফলে বদলে যাবে অমর একুশে গ্রন্থেমেলার চেহারা। এছাড়া বিদেশী বন্ধুদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের কারণে এবারের মেলাটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন প্রসঙ্গে একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, এর আগে ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির আয়োজনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও পল্লীকবি জসীম উদ্্দীন। একাডেমির ৬০ বছরপূর্তি উপলক্ষে এ বছর আবার এই সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। এর ফলে বিশ্বের দীর্ঘতম সময়ের এই বইমেলাটি আরও উজ্জ্বল ভাবমূর্তি সৃষ্টি করবে। একাডেমি সূত্র জানায়, এবারের মেলায় সব ধরনের স্টলেরই ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। প্যাভিলিয়ন থাকবে ৭ থেকে আটটি। প্রতিটি প্যাভিলিয়নের জন্য প্রকাশকদের ভাড়া দিতে হবে ১ লাখ টাকা। সঙ্গে যুক্ত হবে মূল্য সংযোজন কর। প্রাথমিকভাবে এ বছর ২৮৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৭৫ ইউনিট। এর মধ্যে এক ইউনিটবিশিষ্ট স্টল পেয়েছে ১৩৭টি প্রতিষ্ঠান। ১০৩টি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে দুই ইউনিটের স্টল। ৪৪টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে তিন ইউনিটের স্টল। এবার এক ইউনিটের স্টলেও মাপেও পরিবর্তন আসছে। ছয় বা আট ফুটের পরিবর্তে এই ইউনিটের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ হবে আট ফুট বাই আট ফুট। দুই, তিন ও চার ইউনিটের ক্ষেত্রে একইভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিসর। এক ইউনিটের স্টল ১২ হাজার টাকা ও তিন ইউনিটের স্টলের জন্য প্রকাশকদের ৪৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। এছাড়া একাডেমি আঙিনায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে প্রায় আড়াই শ’ ইউনিট। এগুলোর বেশিরভাগই সরকারী-আধা সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বরাবরের মতো নজরুল মঞ্চের বিপরীতে থাকছে শিশু কর্নার। একাডেমির বর্ধমান হাউজের দক্ষিণ পাশের বহেরাতলায় স্থাপিত হচ্ছে লিটল ম্যাগ কর্নার। রবীন্দ্র চত্বরের পাশে স্থাপিত হচ্ছে মেলার মূল মঞ্চ। এই মঞ্চে দুই ফেব্রুয়ারি থেকে মেলার শেষদিন পর্যন্ত চলবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবারও একাডেমির ভেতরেই থাকছে মিডিয়া কর্নার। আমতলার নিচে থাকবে নজরুল ইনস্টিটিউটের স্টল। এছাড়া অন্যান্য বছরের মতোই নজরুল মঞ্চে থাকবে বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিক আয়োজন। মেলাকে ঘিরে নান্দনিক করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুকুরঘাটটিও। এবারও একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকছে বাংলা একাডেমি এবং জাতীয় জাদুঘর, এশিয়াটিক সোসাইটি, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ সরকারী-বেসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্টল। আর সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল গত বছরের মতোই থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। পয়লা ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটায় প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জাদান নূর। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ॥ পয়লা ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই সঙ্গে গ্রন্থমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে চার দিনব্যাপী এ সম্মেলন। গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাহিত্য সম্মেলনে প্রতিনিধিদের মধ্যে বক্তব্য রাখবেন জার্মানির সাহিত্যিক হান্স হার্ডার, ফরাসী লেখক ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, বেলজিয়ামের সাহিত্যিক ফাদার দ্যতিয়েন এবং ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, গবেষক ও ভাষাবিদ ড. পবিত্র সরকার। এছাড়া সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইকুয়েডরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ভাষার ৪১ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাহিত্য সমালোচক অংশগ্রহণ করবেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, হান্স হার্ডার, ফাদার দ্যতিয়েন, মারিয়া বারেরা হেলেনা, তবিয়াস বিয়ানওনে, দাতু ড. আহমেদ কামাল আবদুল্লাাহ, জার্মেইন ড্রুগেনব্রুট, সিন্ডিলি ব্রাউন, পিটার নাইবার্স, জামি ঝু, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, নবনীতা দেবসেন, উদয় নারায়ণ সিংহ, কবি উৎপলকুমার বসু, কবি সুবোধ সরকার প্রমুখ। উল্লেখ্য, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের পাশাপাশি ত্রিপুরা, অসম এবং বিহারের মৈথিলি ও ভোজপুরি ভাষার কয়েক সাহিত্যিকও এ সাহিত্য সম্মেলনে অংশ নেবেন। দুই ফেব্রুয়ারি সকালের অধিবেশনে সৈয়দ শামসুল হক সাহিত্য সম্মেলনের ‘ধারণাপত্র’ উপস্থাপন করবেন। এছাড়া সৃষ্টিশীল সাহিত্যের তিনটি বিষয়ে তিন দিনব্যাপী দুটি করে অধিবেশনে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রথম অধিবেশন এবং বেলা আড়ইটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় অধিবেশন। ২ ফেব্রুয়ারি কথাসাহিত্য বিষয়ক অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ৩ ফেব্রুয়ারি কবিতাবিষয়ক অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করবেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং ৪ ফেব্রুয়ারি নাটকবিষয়ক অধিবেশনে প্রবন্ধ পাঠ করবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার।
×