ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোন মুদ্রাই বিলুপ্ত করবে না সরকার

প্রকাশিত: ০২:৫৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

কোন মুদ্রাই বিলুপ্ত করবে না সরকার

রহিম শেখ ॥ স্বাধীনতার পর থেকে অনেক ধাতব মুদ্রাই বাজারে ছাড়া হয়েছে। উচ্চমূল্যের কারণে গত ১০ বছরে ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সা অনেকাংশেই কমে গেছে। কিন্তু কোন পয়সাই এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়নি। চাহিদার কারণে বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি প্রচিলত রয়েছে ১ ও দুই টাকার কয়েন ও নোট । সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর এক বক্তব্যে এসব নোট ও কয়েনের ভবিষ্যত নিয়ে সব মহলেই আলোচনা চলছে। সরকার চাইছে একমাত্র সরকারি নোট হবে পাঁচ টাকা। যাতে সই থাকবে অর্থসচিবের। অন্যদিকে দুই টাকার নোট ছাপাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গবর্নর স্বাক্ষরিত দুই টাকার নোট পরিচিতি পাবে ব্যাংক নোট হিসেবে। এর নিচে সবগুলো ধীরে ধীরে ধাতব মুদ্রা হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কয়েকটি আইন পরিবর্তন করার পাশাপাশি কোন মুদ্রাই বিলুপ্ত করবে না সরকার। অর্থমন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, গত রবিবার অর্থমন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, বাজারে প্রচলিত এক ও দুই টাকার নোট থাকবে না। অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্য গণমাধ্যমের অনলাইনে প্রকাশিত ও টেলিভিশনে প্রচারিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সব শ্রেণী পেশার মানুষ। পরদিন সোমবার এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক টাকা ও দুই টাকার মুদ্রা বাজার থেকে এখনই তুলে নেয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, যে টাকাটা আছে বাজারে, সেটা তো আছেই। জোর করে তো সেটা তুলে দেয়া যাবে না। মানুষ ব্যবহার না করলে সেটা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার দুই টাকার নোট ছাপানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, কোন মুদ্রা তুলে নেয়ার পরিকল্পনা আপাতত নেই। তবে চাহিদার আলোকে সরবরাহ কমানো হতে পারে। যেমনটি এখন ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সা খুব একটা পাওয়া যায় না। যদিও এর কোনটিই বাজেয়াপ্ত বা বাতিল করা হয়নি। কেউ চাইলে এসব মুদ্রা সংগ্রহ বা বিনিময় করতে পারেন। তিনি জানান, পাঁচ টাকার নোটকে সরকারি মুদ্রা করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন বদলাতে হবে। জানা যায়, যেকোন দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় কম মূল্যমানের মুদ্রা বেশি থাকে। কারণ সাধারণ খুচরা কেনাকাটায় ভাংতির প্রয়োজন হয় বেশি। তাই স্বাধীনতার পর কয়েক বছর ধরে বিপুল পরিমাণ কয়েন বাজারে ছাড়া হয়। বিভিন্ন সময় এসব ধাতব মুদ্রার আকৃতি ও নকশা বদল হয়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এক টাকার নিচে থাকা কয়েনের সংখ্যা দিন দিন কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের ভল্টে এমন ৩০ লাখ পিস এক পয়সার কয়েন এখনও জমা আছে। এগুলোর বাজারমূল্য ৩০ হাজার টাকা। পাঁচ পয়সার মুদ্রা এখন ভল্টে জমা আছে ৪০ লাখ পিস, যার বাজারমূল্য দুই লাখ টাকা। তিন লাখ ৭০ হাজার পিস ১০ পয়সার কয়েন রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৩৭ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সবচেয়ে বেশি পড়ে আছে ২৫ পয়সার ধাতব মুদ্রা। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ২৫ পয়সার কয়েন মজুদ রয়েছে, যা সংখ্যায় ৫৪ লাখ। কোন কোন পণ্য কিনতে বা লেনদেনে এখনও ৫০ পয়সার প্রয়োজন হয়, কিন্তু দেনাদার বা পাওনাদার উভয়ের কাছেই এর তেমন কদর নেই। তবে দাফতরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ভাংতি ফেরত দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় ৫০ পয়সার বদলে এক টাকা দিতে হচ্ছে ভোক্তা বা গ্রাহককে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ১০ হাজার পিস ৫০ পয়সার কয়েন জমা রয়েছে, যার বাজারমূল্য পাঁচ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত রয়েছে এক ও দুই টাকা মূল্যমানের নোট ও কয়েন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে সবারই প্রয়োজন এসব নোট ও কয়েন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে বাজারে এক টাকার নোট রয়েছে ৪২ কোটি ৪৬ লক্ষ, এক টাকার কয়েন রয়েছে ২০৪ কোটি ৭৩ লাখ পিস। অন্যদিকে ২ টাকার নোট রয়েছে ১৭১ কোটি ৭১ লাখ, ২ টাকার কয়েক রয়েছে ৮০ কোটি ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৭শ’ পিস। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে এক থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা মূল্যমানের মুদ্রা রয়েছে। এর মধ্যে এক ও দুই টাকার কাগজের মুদ্রা বের করে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা ‘সরকারি নোট’ হিসেবে পরিচিত। প্রচলিত এ দুটি কাগুজে মুদ্রায় সই থাকে অর্থসচিবের। পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে অন্য সব নোট বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নরের স্বাক্ষরিত এগুলোকে বলা হয় ‘ব্যাংক নোট’। জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোঃ হুমায়ূন কবীর বলেন, আলাদাভাবে মুদ্রণ করা হলেও এর ব্যবহারিক কোন পার্থক্য নেই। সরকারি নোট বা ব্যাংক নোট উভয়ই বিনিময়ের উদ্দেশে বাজারে ছাড়া হয়। তিনি আরও বলেন, ঐতিহ্যগতভাবেই এক ও দুই টাকার নোট সরকারি নোট হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ আমল থেকে উপমহাদেশে এ প্রথা চলে আসছে। ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ বেশিরভাগ দেশেই এ প্রথা দেখা যায়।
×