ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিছক মিছেই নাচে রাজনৈতিক মানুষ

প্রকাশিত: ০১:৫২, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

নিছক মিছেই নাচে রাজনৈতিক মানুষ

(গতকালের পর) তাই বহুকাল চেঁচিয়ে বেড়িয়েছেন বিএনপি নেত্রী, আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে। এইসব অর্বাচীনসুলভ প্রচারণা করে মূলত নিজেই বিদেশীদের কাছে দলিল-দস্তাবেজসহ ক্ষমতায় বসিয়ে দেবার জন্য এখনও দেনদরবার করে যাচ্ছেন। ভারতবিরোধিতা যার রাজনীতির প্রধান অংশ, দেশ ভারত নিয়ে যাবে বলে যে জুজুর ভয় বিশ শতকে দেখিয়ে এসেছেন, তা একুশ শতকে যে ভোঁতা হয়ে গেছে, সে বিএনপি নেত্রী নিজেই প্রমাণ করছেন বার বার। বড় জিনিসকে সহ্য করা কঠিন বলেই তাকে ছোট বানিয়ে নিরাপদবোধ করতে চাইছেন। ‘দুর্নীতির মাতাপুত্র’ নামে একজন সাংবাদিকের লেখা একটি গ্রন্থ বেরিয়েছিল ২০০৬ সালে ক্ষমতা ত্যাগের পর। যাতে সবিস্তারে বর্ণনা রয়েছে বেগম জিয়া ও তদীয় পুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির বয়ান। আর এসব দেশবাসীও জানেন। তাঁদের তিন দফা শাসনকালে কিভাবে ধনাঢ্য হয়ে উঠেছিলেন। ফিলিপিন্সের মার্কোসের পতনের পর তাঁর স্ত্রীর সহস্রাধিক দামী জুতো মিলেছিল প্রেসিডেন্ট ভবনে। আরও কত কি। সেসব বিশ্ববাসী জানেন। আমাদের জানার পরিধি হাওয়া ভবন থেকে অন্যান্য ভবন। লন্ডনে নির্বাসিত জীবনে বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য ব্রিটিশ সরকার কোন অর্থ সাহায্য দেয় না। ব্রিটিশ ব্যবসায়ী বা ধনকুবেররাও নয়। দাউদ ইব্রাহীম বা অন্য মাফিয়ারা কিংবা জঙ্গীবাদীরাও তো অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অর্থলগ্নী করে নানা সেক্টরে। ভারতে চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে দাউদ ইব্রাহীমের দাপট যেমন দেখা গেছে, তেমনি মুম্বাইয়ে জঙ্গী হামলায় তারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ২০০১-২০০৬ শাসনকালে তারেক রহমান গোয়েন্দা সংস্থা প্রধান রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সফরকালে দাউদের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। এবং তা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে ও পরে। যা পরে প্রকাশিত হয়েছে। ব্যর্থকাম মানুষ অনেক সময় অনেক অনর্থ ঘটান। তাই বিরোধী দলের অবস্থান থেকে বিএনপি উচ্ছৃঙ্খলার প্রশ্রয়, বিশৃঙ্খলা-অশান্তি সৃৃষ্টি করছে। দেশ যেহেতু পণ্য, তাই বিরোধিতা তাদের দেশের সঙ্গেই। ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তান সমর্থক (১৯৭১ অর্থেও) বেগম জিয়া দেশের স্বার্থ ক্ষুণœ হতে পারে এমন কাজ থেকে কখনও ফিরে এসেছেন, এমন দৃষ্টান্ত মেলে না। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা করতে ব্যর্থকাম হয়ে দেশজুড়ে অনর্থ ঘটিয়ে আসছেন। গণবিরোধী কর্মসূচী দিয়ে জনজীবনকে অস্থির করে তুলছেন। কারণ, দেশ ও জনগণের চেয়ে বড় বুঝি যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। আর এই কাজটি করার জন্য বিএনপি পাশে পেয়েছে অনন্তকালের মিত্র যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন খাঁটি পাকিস্তানপন্থী জামায়াতকে। যাকে তাঁরা পরিবারের সদস্য হিসেবে মর্যাদা দিয়ে আসছেন। বিএনপির নিজের রাজনীতি তথা গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠার প্রচেষ্টাকে টুঁটি চেপে হত্যা করেছে তারেক রহমানরা। কালোবাজারি, মুনাফাখোরী, লুটেরাসহ নানা অপকর্মের হোতাদের নিয়ে যে হাওয়া সাম্রাজ্য গড়েছিলেন, তা ফিরে পাবার স্বপ্ন পূরণে বিভোর হয়ে নাশকতা চালিয়ে যাবার যে নির্দেশাবলী দিয়ে যাচ্ছেন তা কোন দেশপ্রেমিক, দেশবাসীর প্রতি সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের কাজ নয়। দেশটাকে বারোভূতের কারখানায় পরিণত করতে কী কসরতই না তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই দেশ ও জনগণের সঙ্গে শত্রুসুলভ আচরণ করতে তাঁদের বিবেকে বাধে না। মিত্রতার চর্চা তাঁরা কখনও করেননি, করতে পারেনও না। জনতার মধ্য হতে দলটি বিকশিত না হবার কারণে জনগণ তাঁদের কাছে স্রেফ প্রজা ও ক্রীতদাস যেন। তাই নেতাকর্মীহীন দলের নেত্রী জনণকেই আহ্বান করছেন যেন জনগণ নিজেরাই নিজেদের অবরোধ করে। এটাতো বাস্তব, ক্ষমতার কেন্দুবিন্দুতে বসে রাজাকার পুনর্বাসনকারী জেনারেল জিয়া গদি রক্ষা ও ক্ষমতা বিস্তারের জন্য সেনা ছাউনিতে বসে নানা মিশ্রণের লোকদের নিয়ে যে দল গঠন করেছেন, সেই দলের পক্ষে জনগণমন হবার কোন কার্যকারণ নেই। তাই দেশকে উচ্ছন্নে নিয়ে যেতে তাঁরা কসুর করছেন না। দেশের প্রতি বিন্দুমাত্র ভালবাসা থাকলে তাঁরা জ্বালাও-পোড়াও, হত্যাযজ্ঞের পথ বেছে নিতেন না, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনদাবি আদায় করতেন। ভোগান্তির শিকার হতো না জনগণ। কিন্তু তাঁদের এই কথিত অবরোধ আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। দেশ ও সমাজের চাইতে দল বা সম্প্রদায়কে বড় করে দেখলে দেশও টিকে না, সমাজও নয়। সমাজ টিকে থাকলে তবে মানুষ টিকে থাকে। রাজনীতির প্ররোচনায় হোক, সন্ত্রাসবাদের প্ররোচনায় হোক সমাজ যদি ভেঙ্গে যায়, তা হলে তাকে নীতিবিরুদ্ধ কাজ বলতে হবে। এমনিতেই পুরো বিএনপিরই চিন্তা-ভাবনা দৃষ্টিভঙ্গি বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আর সে কারণেই কার্যকলাপও আজ বিকৃত। যুক্তি যে সবচেয়ে বড় শক্তি, সেটা ভুলে গিয়ে জঙ্গীপনা ও সন্ত্রাসকে বড় শক্তিতে পরিণত করতে যাচ্ছে। মতবিরোধ ঘটলে যুক্তি বিচারের দ্বারা বিরোধ মেটানোর পথে তারা নিজেরাই কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে। এখন যুক্তির আর ধারও নেই, ভারও নেই। সব ব্যাপারের রফা এখন নাশকতা, সহিংসতায় পরিণত। বোমা, অগ্নিসংযোগ না হলে উন্মাদনা বৃদ্ধি পায় তাদের। গায়ের জোর যখন মাথার জোরকে ছাড়িয়ে যায়, তখন বুঝতে হবে মনুষ্য সমাজে ঘোর দুর্দিন উপস্থিত। এটা শুধু বিশেষ কোন দেশের কথা নয়, সমস্ত পৃথিবীতেই এটা ঘটেছে। বিএনপি সে পথই ধরেছে। হিংসাকে অবলম্বন করে বাঙালী জাতির ওপর খড়গহস্ত হয়ে উঠেছে। দেশের প্রতিটি মানুষকে তার নিত্যদিনের অত্যাবশক প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান সম্পর্কে নিশ্চিন্ত করার কাজটি যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সেই পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, তা ধ্বংস করার জন্য দেশজুড়ে অস্থিরতার, অশান্তির, সন্ত্রাস ও জঙ্গীপনার বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। অথচ তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ফোন করে আলোচনার আহ্বান জানালেও প্রত্যাখ্যান করে। তারপরও সন্ত্রাসের পথ ছাড়েনি বিএনপি। শেখ হাসিনা যদিও তাঁর দরজা খোলা রেখেছেন এখনও বিএনপি নেত্রীর জন্য। কিন্তু তিনি ফোনও করেন না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে তাঁর অফিস বা বাসভবনে কিংবা সংসদ ভবন কার্যালয়ে যেতে পারতেন, কথা বলতে পারতেন, যদি যৌক্তিক থাকত তবে তিনি ঠিকই দেখা করতেন। যেহেতু দাবিগুলো অযৌক্তিক এবং গণদাবি নয় তাই বোধ হয় সাহসে বুক বেঁধে খোলা দরজায় অনায়াসে প্রবেশে বিব্রত তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করতে পারেন বিএনপি নেত্রী তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে। কিন্তু তিনি কেন যে তা করছেন না, তা স্পষ্ট নয়। বেগম জিয়া মধ্যবর্তী নির্বাচন চান। সেই দাবি তিনি তাঁর দলের নেতাদের মাধ্যমেও কিংবা নিজে সরকারী দলের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। ‘কেন মধ্যবর্তী নির্বাচন দরকার’- যুক্তি দিয়ে তা তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু এই দাবি নিয়ে যে তিনি খুব আগ্রহী, তা নয়। আগ্রহটা মূলত যুদ্ধাপরাধী রক্ষা এবং পুত্র ও নিজে দুর্নীতির মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার পথ ও পন্থা বের করা। সশস্ত্র সন্ত্রাস চালিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির যে নারকীয় পথ বেছে নিয়েছেন, সেখান থেকে দ্রুত ফিরে না গেলে তাঁর আম ও ছালা যতটুকু অবশিষ্ট আছে তার সবটুকুই যাবে। এখন তো বিএনপি নামক দলটি মূলত জামায়াত নিয়ন্ত্রিত। অর্থ, অস্ত্র, লোকবল জামায়াতেরই। বিএনপির সিনিয়র ও মধ্যম সারির এমনকি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয়। মহিলা দল, ছাত্রদল আর কর্মচারী ছাড়া পাশে কেউ নেই। বেগম জিয়ার ডাকে তাঁর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কেউ মাঠে নামছে না। যেমন সাড়া দেননি বেগম জিয়াও তাঁর স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের ডাকেও। দলের অধিকাংশ নেতাই সে সময় জিয়ার আহ্বান অবজ্ঞা করেছেন। আর সে কারণেই বেগম জিয়া তাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই দিয়েছিলেন হয়তো। বেগম জিয়া যে সহিংসতার চর্চা করছেন, মানুষ হত্যায় বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী কালী মাতা বা শ্যামাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। ‘নৃৃমুন্ডমাল্য’ বেগম জিয়ার গলায় শোভিত হোক-এমনটা কেউ না চাইলেও তিনি কিন্তু তাই-ই চাইছেন। নতুবা রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবেলা না করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে, প্রাণ হরণ করে সন্ত্রাসের মাধ্যমে কার্যসিদ্ধি ‘আত্মঘাতী’ পথ ছাড়া কিছু নয়। বিএনপি নামক দলটি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরে এখন হারাকিরিতে (আত্মহনন) মত্ত হয়েছে। জিঘাংসাবৃত্তি নামক ‘ফোবিয়া’ আক্রান্ত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটটি প্রকৃতিস্থ অবস্থায় রয়েছে এমনটা বলা যাবে না। কে তাদের সামলাবে, কে দেখাবে পথ? দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ন্তা আবারও হতে চাওয়া বিএনপি-জামায়াত জোট শক্তিমদে মত্ত হাতির মতো আচরণ করতে চাইলেও মূলত সহিংসতার, নাশকতার মাধ্যমে মানুষকে ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। যে কাজটা ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তার দোসররা করত। বাঙালী নিধনে তারা নানা পন্থা নিয়েছিল। তার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারাও ছিল। আজ বিএনপিতে এমন একজন মানুষ নেই যিনি বাক্যে চিন্তায় কর্মে দেশবাসীকে সর্বক্ষণ সচকিত রাখবেন। বিএনপির অভাব সম্পদের নয়, শক্তির নয়, সামর্থ্যের নয়, অর্থেরও নয়। বিএনপির অভাব মস্তিষ্কবান মানুষের, হৃদয়বান মানুষের, চরিত্রবান দেশপ্রেমিক মানুষের। দলটি পূর্ণ হয়ে আছে ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, সন্ত্রাসী, জঙ্গী, তালেবান, জেএমবির চেতনায় আর জামায়াতের বাহুবলে। বিএনপিতে বীরেরা নেই। আছে কাপুরুষেরা। এই কাপুরুষেরা দেশ ও দশের স্বার্থ ভুলে গিয়ে আপন স্বার্থে দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিতে সন্ত্রাসকে বেছে নিয়েছে। এরা কর্মসূচী দেয়, অথচ নিজেরাই তা পালন না করে জনগণকে তা পালনের জন্য নির্দেশ দিয়ে সেই জনগণকেই হত্যা করছে। গুপ্তহত্যা এ দেশবাসী দেখেছে সেই ১৯৭২ সাল থেকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে যখন গড়ে তোলার প্রয়োজন, সে সময়ে সমাজতন্ত্রের নামে, মুসলিম বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা চীনাপন্থী, পাকিস্তানপন্থী এবং আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসা একটি অংশ সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছিল। তারা শ্রেণীশত্রু খতমের নামে মানুষ হত্যা, ফাঁড়ি ও থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট, পুলিশ হত্যা, খাদ্য ও পাটের গুদামে আগুন, ব্রিজ, কালভার্ট ধ্বংস, খাদ্যবাহী নৌযান ডুবিয়ে দেয়ার মতো চরমপন্থা অবলম্বন করে দেশকে অরাজকতা, অস্থিতিশীলতা, দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আজ প্রকাশ্য দল বিএনপি ও একাত্তরপরবর্তী আত্মগোপনকারী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত মিলে আন্ডারগ্রাউন্ড দলে পরিণত হবার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। নেতারা সব আত্মগোপনে। আল কায়েদা, তালেবান নেতাদের মতো ভিডিও বার্তায় জনগণকে নির্দেশ পাঠান। প্রকাশ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে ২০০৬ সালে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন করার প্রক্রিয়ায় ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দু’বছর ক্ষমতায় থাকতে দিয়েছে। কিন্তু বেগম জিয়া নিজে শান্তিতে থাকতে পারেননি। আজকে তিনি দেশের জনগণকে শান্তিতে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না। কিন্তু কেন? বিএনপি কি কারণে চেঁচাচ্ছে, হাত-পা ছুড়ছে, আন্দোলন করছে, শোভন সুন্দর মার্জিত রুচির পরিবর্তে দানবিক চেহারায় রূপান্তরিত হয়েছে, তা তার একুশ শতকের গত ১৪টি বছরের খেরোখাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেই স্পষ্ট হয়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তারা পুরো দেশটাকে তছনছ করে দিয়েছিল। বহু মানুষকে ঘর, বাড়ি এমনকি দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। অন্যান্য রিরংসার প্রকাশও ঘটেছিল। ধর্ষণের মাত্রা ছিল পাকিস্তানী হানাদারদের আচরণের মতোই। দেশটাকে তারা ক্ষমতার বলে যেখানে নিয়ে গিয়েছিল দস্যুপনাতেও, সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে দেশবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা, উন্নয়নের রথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ক্রমশ শেখ হাসিনা। দেশে-বিদেশে তিনি নিজস্ব অবস্থান তৈরির পাশাপাশি এশিয়ায় সাহসী নেত্রী হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। সবচেয়ে বড় কাজ স্বাধীনতার চারযুগ পরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাজা দানের মতো বাঙালীর দীর্ঘদিনের চাওয়াকে পূরণ করছেন। দেশী-বিদেশী সব চাপ উপেক্ষা করেছেন। আর বিএনপি নেত্রী দেশের এই উন্নয়ন ও অগ্রগতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে বলে তা মেনে নিতে পারছেন না। তাই অর্থনীতির চাকাকে অচল করে দিতে মানুষ হত্যার মতো ঘৃণিত ও অধর্মের কাজ করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর কোন ধর্মই এভাবে মানুষ হত্যার বিধান রাখেনি। ধর্ম ব্যবসায়ী দল বলেই জামায়াত-শিবির যেভাবে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে অবরোধ নামক সন্ত্রাসী কর্মসূচী দিয়ে মানুষ হত্যা করছে আগুনে পুড়িয়ে, তারা নিজেরা পরকালে এভাবে নরকের আগুনে প্রজ্বলিত হবে কি হবে না, সে পরকালের বিষয়। কিন্তু ইহকালে যে অপরাধ দিনের পর দিন তারা করে যাচ্ছে, আইনের শাসন বহাল রাখতে হলে এদের বিচারের কাঠগড়ায় সোপর্দ করতে হবে। দেশময় বোমাবাজি, মানুষ হত্যা করে নেতা হিসেবে যাঁরা আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন, মানবতার-মানবিকতার ও মনের আগুন নিবিয়ে দিয়ে আগুনেবোমা নিক্ষেপ করছেন যাত্রীবাহী বাসে, সাধারণ যাত্রীদের প্রাণনাশের জন্য রেলওয়ের ফিশপ্লেট খুলে ফেলছেন, জনপ্রতিনিধির অফিস, বাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বোমা লুকিয়ে রেখে প্রাণনাশের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাঁরা কোন নির্বাচনী রাজনীতির জন্য এসব করছেন না। তাঁরা মূলত দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে, অরাজকতা তৈরি করে একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্ত করতে চান। দেশকে পাকিস্তানী আইএসআই-এর অভয়ারণ্য করে সংখ্যালঘুদেরসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দেশত্যাগসহ বিনাশ করতে চান। আর এই চাওয়ার পথ ধরে বিএনপি নামক মাতা-পুত্রের দলটি ঢাকা ও লন্ডনে বসে যে ঘাতকের পথ বেছে নিয়েছে, তা তাদের একাত্তরের হানাদারদের উত্তরসূরির তকমাই শুধু দেয় না, মানুষ হত্যার জন্য দ-াদেশ ভোগ করার দিকেও নিয়ে যেতে পারে। বিএনপি নেত্রীসহ নেতাদের শুভবুদ্ধি হবে কিনা সে বিষয়ে ঘোর সন্দেহ আছে। একবার স্খলন হলে যে তা থেকে উঠে আসা সহজ নয়, তার নমুনা তো অজস্র। বিএনপি অতি সঙ্কীর্ণ এবং অদূরদর্শী পলিসি নিয়ে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পলিসি হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন। অতএব আওয়ামী লীগের পতন ঘটাতে পারলেই বিএনপির উত্থান হবে। আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে পারলেই বিএনপি সবল হবে। বিরামহীন বিরোধিতার ফলে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়েছে বৈকি। কিন্তু বিএনপি নিজেরা সফল হয়নি। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়েছিল বিচারপতি লতিফুর রহমান নামক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের আওয়ামী লীগ বিরোধিতা ও বিএনপিপ্রীতির জন্য ২০০১ সালে। বর্তমান পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে বিএনপির পক্ষে পুরনো ধারার রাজনীতির চর্চা করে ক্ষমতায় আসা দূরে থাক, রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকায় অনেক বেগ পেতে হবে। দলের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয়। জামায়াতের কাঁধে ভর করে জামায়াত পরিকল্পিত পথ ধরে চলতে হয় বেগম জিয়া ও তারেককে। জামায়াতীদের আর্থিক সহায়তা এক্ষেত্রে বেশ ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে বোমা তৈরির কারখানা খাতে বেশ ব্যয় করছে। এই বোমা তৈরির আর্থিক যোগানদাতা কারা তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর। এমনিতেই এরাও বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসবাদের লক্ষ্য। অনেক পুলিশ প্রাণ হারিয়েছে। অথচ হত্যাকারীদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়নি। এভাবে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। বিএনপি নামক দলটি জামায়াতের ক্রীড়নক হবার পর ক্ষমতায় গিয়ে যা করেছে তাতে জনগণ তাদের ওপর আর আস্থা রাখতে পারেনি, পারছেও না। সর্বশেষ জঙ্গীপনার বিস্তারসহ গ্রেনেড, বোমাবাজির যেসব মহড়া দিয়ে আসছে, তাতে তাদের সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার সময় এসেছে জনগণের। দেশবাসী চায় না বিএনপি-জামায়াত জোটের এই অব্যাহত নাশকতা ও সহিংসতা আর এই পথ ধরে পাকিস্তানের পেশোয়ারের স্কুলে ১৩৫ জন শিশুকে হত্যা করার মতো প্রচেষ্টা নিয়ে অবরোধ কর্মসূচী সফল করার পথে এগিয়ে না যায়। দেশবাসীর জন্য তাই সময় এসেছে অবরোধকারীদের প্রতিহত করে শান্তি, স্বস্তির পথ উন্মুক্ত রাখা। বনে-জঙ্গলে গিয়ে যেমন পশুশিকার করা হয়, তেমনি গ্রামগঞ্জ শহরে বন্দরে রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ শিকার করে বেড়াচ্ছে বেগম জিয়ার দলটি জামায়াতের সহায়তায়। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করার এই পথ ও পন্থা দ্রুত দুমড়ে-মুচড়ে না দিলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে বাধ্য। দেশজুড়ে যে নাশকতা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নেরও পরিপন্থী। এ অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে এদের কর্মকা-কে স্তব্ধ করে দিতে হবে। দেশের সাধারণ জনগণ এখন আর মূক নয়, তারা ক্রমশ মুখ খুলছে। কিন্তু দেশে যাঁরা সর্বজনশ্রদ্ধেয়, সুধীজন, তাঁরা এসব দেখেও নীরব। এসবের বিরুদ্ধে তাদের কণ্ঠ সোচ্চার নয়। দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে অনেকে অখুশি হলেও তাঁরা মুখ বুঁজে আছেন। শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ পেশাজীবীরা নির্বাক দর্শক আজ। অথচ নগর পুড়লে যে দেবালয় অরক্ষিত থাকে না সেটা তাঁরা ভুলে গেছেন। তাই অব্যাহত মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে জাতির বিবেকবান মানুষের বধিরতা দেশ ও জনগণের জন্য সুলক্ষণ নয়। যেমন নয় এই বধিরদের জন্য। সন্ত্রাসবাদের ধারক রাজনীতিকরা নৃত্য করবেন, আর জনগণ তা দর্শক সেজে দেখবেন- এমনটা বেশিদিন চলতে পারে না। কারণ জনগণ আজ সকরুণভাবে ভুক্তভোগী। তারা ঘুরে দাঁড়াবেই।
×