ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিশু

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

গ্রামীণ উন্নয়ন ও শিশু

দারিদ্র্যের হার কমানো, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, শিক্ষাসহ সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশ ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। এতে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ কিলোমিটার পল্লী সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেসব অঞ্চলে দারিদ্র্য অন্য অঞ্চলের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। বিশ্বব্যাংকসহ দুটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পল্লী সড়কের তিনটি প্রকল্প এলাকায় এ সংক্রান্ত এক গবেষণা থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে দুটি প্রকল্পের ওপর প্রভাব নির্ণয়ের গবেষণা শেষ হয় ২০১১ সালে। একটি ২০০৯ সালে। এই সংবাদটির পাশাপাশি আরেকটি সংবাদও আলোচিত হওয়ার মতো। সম্প্রতি প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেছে, বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যু হারে শিক্ষণীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়েও বেশ এগিয়ে। বিশ্বব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতিহাজারে ১৮০ জন, সেটি কমে ২০১১ সালে দাঁড়িয়েছে ৫৩ জনে। উল্লেখ্য, ব্র্যাক ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। তারপর বিভিন্ন সংস্থা এর সঙ্গে যুক্ত হয়। এক সময় দেশে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি ছিল উদ্বেগজনক। ডায়রিয়া ছিল শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ। তখন শিশুদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে ওর‌্যাল রিহাইড্রেশন থেরাপি (ওআরটি) শুরু করে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওআরটি ব্যবহারকারী দেশ। একই সঙ্গে শিশুদের টিকা দেয়ার ক্ষেত্রেও সাফল্য লাভ করেছে। মানবসভ্যতার এক উন্নত স্তরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সেটা সামাজিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্যেও। গ্রামে এখন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রসার ঘটেছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে এই নীতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। তবে এখনও দেশে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। দেশের নারী ও শিশুদের একটি বড় অংশ রক্তস্বল্পতাসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা যায়, ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৩৩ শতাংশ শিশুই এ ধরনের সমস্যায় ভুগছে। তবে শহরে বস্তির শিশুদের মধ্যে এই হার বেশি। অপুষ্টিসহ নানা কারণে ঘন ঘন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। এতে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হয়। তারা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ে, খর্বাকৃতিসহ শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। একজন মা তার শিশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয়। তাই মা ও শিশুর পুষ্টিগত সম্পর্ক হয়ে থাকে নিবিড়। সন্তান মায়ের দেহ থেকে পুষ্টি উপাদান নিয়ে ক্রমে নিজের দেহ গঠন করে। তাই মা যেন সুস্থ ও নীরোগ সন্তান জন্ম দিতে পারেন সেজন্য পরিবারে খাদ্যের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে এবং খাদ্য সম্পর্কে কুসংস্কার বর্জনে মায়েদের সচেতন করতে হবে। তাদের পুষ্টি, শিক্ষা বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া জরুরী। এতে একটি কর্মক্ষম ও সুস্থ জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগও বাড়বে। দুটি প্রতিবেদনেই যে সফলতার কথা বলা হয়েছে তা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গঠনে সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়ক হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
×