ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রুখিয়া দাঁড়াও বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০১:৪৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৫

রুখিয়া দাঁড়াও বাংলাদেশ

এটা হতে পারে না। এ রকম চলতে পারে না। সংবাদপত্রের খবর, রাস্তায় দুধ ঢেলে ফেলে খামারিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভ! নাকি অসহায়ত্বের কষ্ট। পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার একদল খামারি স্থানীয় মিল্কভিটা সমবায় সমিতির কাছে নিয়মিত হাজার হাজার লিটার দুধ বিক্রি করতেন। হরতাল-অবরোধের ফলে গাড়ি ঠিকমতো না আসার কারণে সমবায় সমিতি দুধ কিনতে অস্বীকৃতি জানানোর পর খামারিরা সমস্ত দুধ রাস্তায় ঢেলে ফেলেন। সড়ক মহাসড়কে নির্বিঘেœ গাড়ি চলাচল না করতে পারায় গ্রামাঞ্চলে খেটে খাওয়া কৃষকদের উৎপাদিত শাকসবজি, তরিতরকারি পচে যাচ্ছে। পোল্ট্রির মালিকদের মাথায় হাত। মফস্বলের গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ঢাকায় আনার জন্য টাকা পয়সা ধারদেনা করে যাওবা এ্যাম্বুলেন্স যোগাড় করা গেল। কিন্তু লম্বা মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে নিরাপদে ঢাকার হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে তো! পেট্রোলবোমা অথবা কেরোসিনের আগুন কেড়ে নেবে না তো গুরুতর অসুস্থ রোগী এবং সহযাত্রী স্বজনদের! উত্তর নেই। ব্যবসায়ী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বললে বিভিন্ন সেক্টরে শত সহস্র কোটি টাকা ক্ষতির কথা শুনি। তারা অসত্য, অবাস্তব কিংবা অলৌকিক হিসাব দেন না। শ্রমিকদের চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়েছে। পর্যটন শিল্পের বারোটা বেজে যাচ্ছে। কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনস্্, কুয়াকাটার হোটেলগুলো পর্যটকশূন্য। দিন কয়েক দেশের বাইরে ছিলাম। নিয়মিতভাবেই দেশের খবর রাখার চেষ্টা করেছি। স্বস্তিতে থাকতে পারিনি। দেশে নৈরাজ্য, আমি তো আর বিদেশে স্বস্তিতে থেকে নীরো হয়ে বাঁশি বাজাতে পারি না। দেশে ফিরে বাসায় জমে থাকা একগাদা খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে বুঝলাম বিদেশে বসে যেটুকু জেনেছি তার চেয়েও বহুগুণ বেশি নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতকারীরা। দেশজুড়ে যত্রতত্র ব্যবহার হয়েছে পেট্রোলবোমা। পুড়েছে বাস-ট্রাক অটোরিকশা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সাধারণ মানুষ। ছোট্ট শিশুও বাদ যাচ্ছে না পেট্রোলবোমার আগুন থেকে। বিশ্ব এজতেমার কারণে ধারণা করা গেছিল যে হয়ত দুষ্কৃতকারীরা অপকর্ম করবে না। ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ব এজতেমার শেষ দিনে রবিবার দিনে-দুপুরে রাজধানীর জনবহুল খামারবাড়ী এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে আগুনে দগ্ধ হয়েছে দুই কলেজ ছাত্রী। কোনদিন যেন শুনতে না হয় যে বিবেকহীন পশুরা স্কুল-কলেজের ভেতরে ঢুকে পেশোয়ারী কা- ঘটিয়েছে। পেট্রোলবোমা আতঙ্কে মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। ব্যক্তি নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এটা হতে পারে না। এ রকম চলতে দেয়া যায় না। আমি রাজনৈতিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যাব না। তবে এটা তো সত্য যে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ হরতাল আহ্বান করার ফলেই দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা, রেলে নাশকতা, পুলিশের ওপর আক্রমণ পেট্রোলবোমা মেরে শিশু-নারীসহ নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া, জননিরাপত্তা বিঘিœত করাÑ এসব তো অবরোধের কারণেই। নৈরাজ্যের দায় তো তবে যারা অবরোধ কর্মসূচী দিয়েছে তাদেরকেই স্বীকার করতে হবে। স্বীকার না করলেও মানুষ তো এটাই সত্য বলে জানছে যে যারা অবরোধ ডেকেছে অর্থাৎ বিএনপি নেতৃত্বের জোটের কর্মীরাই এইসব অমানবিক কা- ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জামায়াতে ইসলামীর কথা না হয় ছেড়ে দিলাম। কারণ একাত্তর এবং পরবর্তী সময়ে তারা এ ধরনের অপকর্ম করেই চলেছে। কিন্তু বিএনপি তো দাবি করে যে তারা গণতান্ত্রিক দল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে যা চলছে তাতে যদি তাদের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকেন তবে কি বিএনপিকে গণতান্ত্রিক দল বলা যাবে? অবশ্যই নয়। চোরাগোপ্তা হামলায় জনজীবন বিপন্ন করায় তো গণতান্ত্রিক চরিত্র থাকে না। যাক গে এ সব নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করা ভুল না সঠিক, মেয়র ইলেকশনে অংশ নেয়া এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে জয়ী হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে রাজনীতিবিদরা ভাববেন। রাজনীতিক বিশ্লেষকরা সে সবের ব্যাখ্যা নিয়মিতই দিয়ে চলেছেন এবং ভবিষ্যতে আরও দেবেন। তবে এটা সত্য যে, বর্তমানে দেশে যা ঘটছে তা কোনক্রমেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চরিত্র হতে পারে না। এটা নাশকতা এটা পৈশাচিকতা। এটা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করতে নীল নক্সার ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতেই এই মুহূর্তে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রতিরোধ। সকল প্রগতিশীল সংগঠন ও ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাশ্রিত সংগঠন শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-শিক্ষকদের একযোগে নাশকতার বিরুদ্ধে, পৈশাচিক বর্বরতার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় বীরেরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে একজোট হন তবে আমি নিশ্চিত যে দেশের সর্বস্তরের শুভবাদী মানুষ তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে পাশে এসে দাঁড়াবেন। অতীতে এ রকম দৃষ্টান্ত আমি দেখেছি। এবারের প্রতিরোধ হোক সন্ত্রাস রুখে দেয়ার জন্য। প্রিয় বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটা কোন রাজনীতি নয়। লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
×