ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লবণাক্ততা

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

লবণাক্ততা

সংবাদটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আবাদযোগ্য কৃষি জমিতে চাষ করা হচ্ছে চিংড়ি। এতে কৃষি জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি একটি ইংরেজী দৈনিকের প্রথম পাতায় কৃষি জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কী বৃদ্ধি পাচ্ছে তার একটি তুলনামূলক চিত্র দেখানো হয়েছে। এই জরিপই বলে দিচ্ছে লবণাক্ততার করাল গ্রাসে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জনপদ ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে অকৃষি ভূমিতে। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার আঘাতে দু’দফা বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় এই জনপদের আবাদী জমি দ্রুত লবণাক্ত হয়ে আবাদযোগ্যতা হারাচ্ছে। জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিক্সের এক জরিপে দেখানো হয়েছে কীভাবে দ্রুততার সঙ্গে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। দেখা যায়, মংলা উপজেলায় ১৯৯৬ সালে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ২১,৩৫০ একর, ২০০৮ সালে ১৪,৯২৫ একর ও ২০১৩ সালে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় মাত্র ৫,০২০ একরে। অতিদ্রুত এসব এলাকায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে গিয়ে কৃষি ক্ষেত্রে তৈরি করছে এক ভারসাম্যহীনতার। মংলা উপজেলায় লবণাক্ততার ফলে কৃষি জমি কমে যাওয়ায় সেখানে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাদের পেশা পরিবর্তন করছে। পেশা বদলে তাদের জীবনযাপনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি আরও এক জরিপে লবণাক্ততার ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে বছরে ২০ শতাংশ কৃষি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের ৮০ লাখ একর ফসলী জমি। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে যদি লবণাক্ততার ফলে এভাবে কৃষি জমি কমতে থাকে তাহলে ২০২০ সালের মধ্যে সারাদেশে মোট কৃষি জমির এক-চর্তুথাংশ হ্রাস পাবে। ইন্টার গবার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন শতকরা ১০ এবং গমের উৎপাদন শতকরা ৩০ ভাগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। লবণাক্ততা যে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় মানুষদের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে তা নয়, দেশের মধ্যাঞ্চলেও লবণাক্ততা তার বিপজ্জনক থাবাকে বিস্তৃত করছে। কেন এই লবণাক্ততা? অনুসন্ধানে জানা যায়, উপকূলীয় এলাকার পানিতে মূলত তিনটি কারণে লবণাক্ততার প্রাধান্য দেখা যায়। প্রথমটি হলো উজান থেকে আসা নদীগুলো থেকে পানিপ্রবাহ ক্রমাগতভাবে হ্রাসের ফলে ৬০ শতাংশ লবণাক্ততা সৃষ্টি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ভূগর্ভস্থ পানির যথেচ্ছ উত্তোলন ও তৃতীয়ত, বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মেরুঅঞ্চলে বরফ এবং পার্বত্যাঞ্চলে হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লবণাক্ত পানি দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই নেতিবাচক দিকটির প্রতি দেশে দেশে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। এই অবস্থা মোকাবেলায় আমাদের দেশ এখন পুরোপুরি প্রস্তুত নয় লবণাক্ততার কবল থেকে আবাদযোগ্য ভূমি রক্ষাসহ এ অঞ্চলে মানুষের জীবনযাপন নিরাপদ রাখতে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।
×