ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতা নাশ হবে কবে?

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

নাশকতা নাশ হবে কবে?

‘অবরোধে সারাদেশে বিচ্ছিন্ন বোমাবাজি, ভাংচুর, আগুন’- শনিবার জনকণ্ঠের একটি সংবাদের শিরোনাম। বিগত বারো দিন ধরে শিরোনামের শব্দের অদলবদল হলেও মূল খবর ওই একটাই। দেশজুড়ে জনদুর্ভোগ চলছে। প্রতিদিনই মানুষ খুন করা হচ্ছে। লক্ষণীয় হলো এই কাজের জন্য বিএনপি-জামায়াত বিশেষভাবে বেছে নিচ্ছে রাতের সময়টা। বারো দিনের হিসাব সেটাই বলে। চলছে নৈশনাশকতা। এমনকি দ্বিতীয় দফা বিশ্ব এজতেমা শুরুর দিন, যেদিনটি ছিল পবিত্র শুক্রবার, সেদিনও সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় নাশকতা চালানো হয়েছে। তারা ধর্মের নাম করে রাজনীতি করে, বলা ভাল অপরাজনীতি করে। যার অপর নাম সন্ত্রাস। শুক্রবার ফেনী, সিরাজগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরে পণ্যবাহী ট্রাকে ককটেল, বোমা হামলা চালিয়ে চালক ও চালকের সহকারীর জীবনবিপন্ন করে তোলা হয়েছে। মঙ্গলবার রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী বাসে দুর্বৃত্তদের পেট্রোলবোমায় বাসের ভেতরেই পুড়ে অঙ্গার হয়েছে একটি শিশুসহ চারজন। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়েছে অন্তত ১০ জন। পুলিশ-বিজিবি পাহারায় চলা ৩০টি যানবাহনের একটি বহরকে লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারলে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় যে কোন বিবেকবান মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দেবেইÑ আমরা কোন্ দেশে বাস করছি? এ কেমন বীভৎসতা? কোন মানুষ কি এভাবে মানুষ হত্যা করতে পারে? এ ধরনের সহিংসতা দিয়ে কি কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিল করা সম্ভব? অবরোধের এগারো দিনে বিএনপি-জামায়াত দ্বারা সংঘটিত সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২৪ জন। আহত হয়েছেন কয়েক শ’ ব্যক্তি। রেলে নাশকতা চালানো হয়েছে চার দফা। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে পাঁচ শ’র ওপরে। জনগণের রাজনীতি তথা গণতন্ত্রের রাজনীতির সঙ্গে এ ধরনের বর্বরতা চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভিত্তি হলো জনসমর্থন, লক্ষ্য হলো জনকল্যাণ। জনগণকে অগ্নিদগ্ধ করে, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আর যাই হোক জনসমর্থন অর্জন করা যায় না। সন্ত্রাস গণতন্ত্রের মহাশত্রু। রাজনৈতিক দল হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহন। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ্য ও চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালালে সেই রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসী দলই বলতে হয়। বিএনপি দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে তার কর্মকা- বিশ্লেষণ করলে তাকে ‘সন্ত্রাসী’ দল আখ্যা দেয়াটাই সমীচীন। এই ধরনের অপরাধ কি মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে না! জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তও দাবি করা হয়েছে। এসব সহিংসতার শেষ কবেÑ এ প্রশ্ন আজ সর্বত্র। জনমনে প্রশ্ন- কিভাবে মুক্তি পাবে মানুষ এই ক্রমাগত সন্ত্রাস থেকে? বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় প্রায় দেশকেই অশান্ত করে তোলা হয়েছে। জঙ্গীবাদ তথা সন্ত্রাসবাদের ছায়া হুমকিস্বরূপ, বিরাজ করছে প্রায় সর্বত্র। বাংলাদেশকে সেই একই ধারায় নেয়ার নীলনক্সা বাস্তবায়নেরই কি চেষ্টা করা হচ্ছে? দেশকে যে কোন মূল্যে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে হবে। নাশ করতে হবে নাশকতা।
×