ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরের ৫ কোটি মানুষ জ্বালাও পোড়াও অবরোধের শেষ চায়

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

উত্তরের ৫ কোটি মানুষ জ্বালাও পোড়াও অবরোধের শেষ চায়

সমুদ্র হক ॥ ‘অল কোয়াইট অন দ্য নর্দার্ন ফ্রন্ট’ বাক্যটি হলিউডের পুরনো ইংরেজী ছবি ‘অল কোয়াইট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ থেকে নেয়া। গত ১৩ দিনে (রবিবার পর্যন্ত) উত্তরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ শীতে যতটা না কাবুু হয়েছে তার চেয়ে বেশি কাবু এবং বাকরুদ্ধ হয়েছে বিরোধী দলের ‘গণতন্ত্রের’ নামের আন্দোলন দেখে। চিরচেনা মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্ট সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে রাখঢাক ছাড়াই বলতে শুরু করেছে, আন্দোলনকারীরা তো স্যান্ডইউচ বানিয়েই ছেড়েছে, আর কত চ্যাপ্টা করে পিষে মারবে! ওরা কি বুঝতে অক্ষম এভাবে মানুষকে ক্ষেপিয়ে কোন দিন ভোটে জিততে পারবে না! এই মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্ট সরকারকেও ছেড়ে কথা বলছে না। তাদের সাফ কথা, যত রকমের কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে হয় সরকার তা নিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ থেকে রেহাই দিক। কলেজের এক অধ্যাপক চরম ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, ১৮৬৩ সালের ১৯ নবেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গ শহরে ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন এভাবেÑ ‘দ্যাট দিস নেশন আন্ডার গড শ্যাল হ্যাভ এ নিউ বার্থ অব ফ্রিডম এ্যান্ড দ্যাট গবর্নমেন্ট অব দ্য পিপল বাই দ্য পিপল ফর দ্য পিপল শ্যাল নট পেরিশ ফ্রম দ্য আর্থ।’ এরপরই তিনি বলেছিলেন ‘মোর ড্যামেজ হ্যাজ বিন ডান টু হিউমেনিটি ইন দ্য নেম অব গড দ্যান ফর এ্যনি আদার রিজন’। গণতন্ত্রের সেই সংজ্ঞা বাংলাদেশে বর্তমানের বিরোধী দলের নেতাদের কাছে আজ এতটাই নিগৃহীত হয়েছে যে, গণতন্ত্রের সেই অমর বাণী নীরবে কাঁদছে। নির্বাচনে না গিয়ে জনগণের কথা না ভেবে যারা জনগণকে চরম দুর্ভোগে ফেলে দেয়, দেশের সম্পদ পুড়িয়ে দেয়, মানুষ হত্যা করে, মানুষকে পুড়িয়ে মারে তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা কিভাবে শোভা পায়! গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দেশের মানুষকে যেভাবে জোর করে জিম্মি করেছে তা সভ্য দেশে বিরল। এমনকি আফ্রিকার কালো মানুষের জঙ্গলেও এমনটি দেখা যায় না। যে আফ্রিকায় নেলসন মান্ডেলা জন্মে নির্যাতন সহ্য করে আফ্রিকার মানুষকে সভ্যতায় পৌঁছে দিয়েছেন, সেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বঙ্গীয় বদ্বীপে হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাসের মানুষ সভ্যতাকে অপমান করে সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলে কি পরিচয় দিচ্ছে! দেশের এই অবস্থা দেখে আর যাই হোক বহির্বিশ্ব সম্মানিত করছে না। বিদেশীরা যখন পর্যটক হয়ে আসেন তখন গ্রামের চিত্র দেখে অবাক হয়ে যান। কী করে এত দ্রুত গ্রামের পর গ্রামে পাকা সড়ক হয়েছে। পাওয়ার লাইনে বিদ্যুতায়িত ছাড়াও সোলার প্যানেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে আলোকিত উন্নয়নের ধারায় পৌঁছেছে। গ্রামে এখন বেশিরভাগ বাড়ি টিনের চালা আধাপাকা। গ্রামেও ইটের দালানে বাড়ি নির্মিত হচ্ছে বেশি। গ্রামে কেবল সংযোগে বহু চ্যানেলে রঙিন টিভি চলে। ফ্রিজ ওভেন আছে। গ্রামীণ জীবনেও সেল (মোবাইল) ফোন অপরিহার্য। দারিদ্র্য কমে শিক্ষার হার বেড়েছে। নারী উন্নয়নে অনেকদূর এগিয়েছে। মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। অস্বাভাবিক অগ্রগতি হয়েছে তথ্য প্রযুক্তিতে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এখন ল্যাপটপও পুরনো। তারা এখন ট্যাব ই ফোন আই ফোন স্মার্ট ফোনে বিশ্বকে পকেটে রেখে দেয়। ই প্রযুক্তির ডিজিটাল ডিভাইস ছাড়া তারা চলতে পারে না। মধ্যবয়সীরাও ই প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
×