ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাঘের শীতে কাঁপছে দেশ ॥ জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

মাঘের শীতে কাঁপছে দেশ ॥ জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাঘের শীতে কাঁপছে দেশ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। রবিবার দিনভর বয়ে যায় ঠা-া বাতাস। অব্যাহত থাকে ঘন কুয়াশা। হ্রাস পায় দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শীতজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৭৫ ছাড়িয়ে গেছে। গত কয়েকদিনে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘন কুয়াশায় নৌ ও সড়কপথে যান চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সূর্যের মুখ দেখছে না দেশবাসী। এতে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকছে ধানের চাতালগুলো। দাম বেড়েছে শীতবস্ত্রের। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত। আজ সোমবার রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দু’ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। রবিবারও রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘলা। দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। দিনভর বইতে থাকে ঠা-া বাতাস। নগরবাসীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা ছিল গরম কাপড়ে। তীব্র শীতে অনেকেই কাঁপতে থাকে। ফ্যাশন করে হালকা কাপড় পরার সুযোগ পায়নি কেউ। শোয়েটার বা জ্যাকেট পরার পরও অনেক মহিলা চাদর ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন। শাহবাগ মোড়ে জাতীয় জাদুঘরের বিপরীত পাশে হাতে-পায়ে মোজা লাগিয়ে বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করছেন মোঃ আব্দুল। হাতে মোজা দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাত খোলা রাখাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শীতের কারণে ক্রেতার সংখ্যাও কমেছে। খুব তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে চলে যাব বলে তিনি জানান। একটি গেঞ্জি, একটি ফুলহাতা শার্ট ও একটি শোয়েটারের পাশাপাশি একটি চাদর গায়ে দিয়েছেন শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাথের গরম কাপড় বিক্রেতা আব্দুল করিম। তিনি বলেন, সারাদিন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বা বসে আছি। আর সারাদিন ধরেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। পাশাপাশি বয়ে যায় ঠা-া বাতাস। প্রথমে গেঞ্জি, শার্ট ও চাদর পরেছিলাম। শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে দোকানের একটি গরম কাপড় পরে নেন বলে জানান আব্দুল করিম। শুধু আব্দুল করিম নন, রবিবার শীতের তীব্রতা অনেক নগরবাসীকেই দুয়ের অধিক গরম কাপড় ব্যবহার করতে বাধ্য করে। গরম কাপড় বিক্রেতাদের আনন্দের সীমা ছিল না। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগে মাথাব্যথা নেই তাদের। চলতি মাসের প্রথমদিকে সামান্য গরম অনুভূত হওয়ায় লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করেছিলেন তারা। কিন্তু গত শনিবার থেকেই জমে উঠেছে তাদের ব্যবসা। শীতার্ত মানুষ শীতের তীব্রতা কমে যেতে দোয়া চাইলেও গরম কাপড় বিক্রেতারা এখানে নির্দয়ের পরিচয় দিচ্ছেন। তারা শীতের আরও বেশি তীব্রতা কামনা করছেন। ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশের মার্কেট ও ফুটপাথে গরম কাপড় বিক্রি জমে ওঠে। সব প্রকার গরম কাপড় চড়া দামে বিক্রি হয়। হিড়িক পড়ে গরম কাপড় কেনার। ফুটপাথে শিশুদের ৩০ টাকার হাত মোজা বিক্রি হয় ৪৫ টাকায়। প্রতিটি সাধারণ গরম টুপি বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। কয়েকদিন আগেও ওই টুপির দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। প্রতিটি কম্বল দেড় থেকে ২শ’ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়। ফুটপাথের গরম কাপড় বিক্রেতা মকবুল হোসেন জানান, এভাবে ক’দিন চলতে থাকলে ৮০ ভাগ গরম কাপড় বিক্রি হয়ে যাবে। এতে সন্তোষজনক লাভ থাকবে বলে তিনি মনে করছেন। ফার্মগেট, গুলিস্তান, কৃষি মার্কেটসহ নগরীর অধিকাংশ এলাকাতেই এই চিত্র দেখা গেছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টির পর হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। তবে বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। মাঘ মাসে তীব্র শীত অনুভূত হয়েই থাকে। তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। বয়ে যাচ্ছে ঠা-া বাতাস। হ্রাস পেয়েছে তাপমাত্রা। আর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্যও অনেক হ্রাস পেয়েছে। অধিকাংশ জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৫ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে অবস্থান করছে। ঢাকায় এ পার্থক্য রেকর্ড হয় মাত্র ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা তীব্র শীতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঘন কুয়াশা এখনও রয়ে গেছে। কুয়াশার কারণে জলীয়বাষ্প উপরে উঠতে পারছে না। ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ শুকানোর সুযোগ পাচ্ছে না। এ সব কারণে শীত অনুভূত হবেই বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। এদিকে, রাজধানীতে বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। সর্দি-কাশি-জ্বর, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। শিশু ও বয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর আগমন তিনগুণ বেড়েছে। রোগীরা হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়া, সাধারণ সর্দি, জ্বর, সাইনোসাইটি (প্রচ- মাথাব্যথা), রাইনাইটিসে (নাক দিয়ে অনরবত পানি পড়া) আক্রান্ত হচ্ছে। আর ঠা-ায় শরীরের তাপমাত্রা মারাত্মক কমে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে হাইপোথারমিয়ায়।
×