ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫ হাজার সন্ত্রাসীর তালিকা নিয়ে মাঠে যৌথবাহিনী

‘সাতক্ষীরা মডেলে’ নাশকতা দমন অভিযান শুরু

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫

‘সাতক্ষীরা মডেলে’ নাশকতা দমন অভিযান শুরু

শংকর কুমার দে ॥ ‘এটা কোন রাজনৈতিক অবরোধ-আন্দোলন নয়। এটা পেট্রোলবোমা মেরে, আগুনে পুড়িয়ে নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ হত্যার সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতা।’ এই ধরনের সন্ত্রাস ও নাশকতা দমনে ‘সাতক্ষীরা মডেল’ কায়দায় অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারী এলাকায় দেয়া হচ্ছে ‘ব্লক রেইড’। জেলায় জেলায় চালানো হচ্ছে ‘গোয়েন্দা নজরদারি’। সন্ত্রাস, সহিংসতা, নাশকতার বিরুদ্ধে দেখানো হচ্ছে ‘জিরো টলারেন্স’। বিজিবি থাকবে ‘ক্রাইম জোনে’। নাশকতাকারী ও সন্ত্রাসীদের ইন্ধনদাতা, অর্থের যোগানদাতাকারীর তালিকা তৈরি করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব শান্তি ফিরিয়ে আনতে, দ্রুত সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীকে গ্রেফতারের জন্য যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে যৌথ বাহিনীতে সেনাবাহিনী থাকছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ২২ জেলা সহিংস ও সন্ত্রাস কবলিত এলাকা হিসেবে স্পর্শকতার জেলা চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। সারাদেশের প্রায় ৫ হাজার সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীর তালিকা নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। সাতক্ষীরা মডেলে সহিংস সন্ত্রাস ও নাশকতা দমনের প্রক্রিয়ায় জামায়াতÑশিবির ও জঙ্গী প্রাধান্য এলাকায় অভিযান পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে যৌথ বাহিনীকে। অবরোধের নামে যেসব এলাকা ইতোমধ্যেই পেট্রোলবোমা ও বোমাবাজি করে নিরীহ-নিরপরাধ পথচারী, যানবাহনারোহীকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা ও আহত করা হয়েছে সেসব এলাকার সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০১৩ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ও যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণার পরে সাতক্ষীরাসহ সন্ত্রাসকবলিত কয়েকটি জেলায় জামায়াত-শিবিরের তা-ব মোকাবেলায় সরকার যৌথ বাহিনীর অভিযান চালায়। পরে ওসব জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ওই সাফল্য কাজে লাগাতেই ফের যৌথ অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ২০১৩ সালে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীদের সরাসরি সংঘর্ষ শুরু হলে অনেক সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। সাতক্ষীরাসহ সন্ত্রাস ও নাশকতাকবলিত এলাকায় মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে অভিযান পরিচালনা করে স্বস্তি ও শান্তির সুবাতাস বয়ে আনার মতো সাফল্য এনে দিয়েছিল যৌথ বাহিনী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের নামে চলমান সহিংসতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবার যৌথ অভিযান শুরু করেছে; এতে প্রথমেই সন্ত্রাস ও নাশকতা কবলিত জেলাকে প্রাধান্য দিয়ে অভিযান পরিচালনার শুরু করা হয়েছে। সাতক্ষীরা মডেলে ইতোমধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাসহ সন্ত্রাসকবলিত জেলা থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। চলমান অভিযানের প্রধান টার্গেটই হচ্ছে সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকা-ে জড়িত দুর্বৃত্তরা। বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা অবরোধ-হরতালে দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর অব্যাহত থাকা দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, পাবনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সন্ত্রাসকবলিত বলে পুলিশ সদর দফতরের তালিকায় স্থান পেয়েছে। পুুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক সারাদেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসী ও নাশকতকারীদের জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। প্রতিটি পাড়া, মহল্লাভিত্তিক গোয়েন্দা নজরদারি করার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি। ক্রাইম জোনে থাকবে বিজিবি। পুুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় র‌্যাব, পুলিশ, আনসার দলের সদস্যরা তৎপরতা শুরু করেছে। বিজিবির সদস্যদের স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। যখনই প্রয়োজন মনে হবে তখনই বিজিবিকে মাঠে নামানো হবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও সিএনজিতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জলকামান ও ফায়ারিং স্কোয়াড নিয়ে টহল দিচ্ছে যৌথ বাহিনী। পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রতিটি জেলার সন্ত্রাস ও নাশকতা দমনে মনিটরিং করা হচ্ছে। মনিটরিং রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা অবরোধ কর্মসূচীতে মাঠে নেই, আত্মগোপনে চলে গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে সন্ত্রাসকবলিত জেলা ও বিভাগে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও সহিংসতাকারীর তালিকা প্রস্তুত করে অভিযান শুরু করা হয়েছে এবং এই তালিকা তৈরি অব্যাহত। অবরোধের নামে বিভিন্ন সময়ে যে সহিংসতা ও নাশকতা করা হয়েছে সেসব ছবি ও ভিডিওফুটেজ দেখে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সারাদেশের প্রায় ৫ হাজারের বেশি সন্ত্রাসীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং এই তালিকা তৈরির কাজ অব্যাহত । তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও নাশকতাকারীকে ধরতে ব্লক রেইড দেয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে সন্ত্রাস ও নাশকতাকারী কবলিত এলাকায়। জেলা ও থানাভিত্তিক এলাকায় কতজন গ্রেফতার হয়েছে, পলাতকরা কোথায় আছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য : জাতিসংঘের আহ্বানও উপেক্ষা ॥ জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও এই সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে সব দলের প্রতি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের নামে সহিংসতা ও নাশকতা বন্ধ হয়নি। রবিবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পেট্রোলবোমা মেরে হত্যা, আহত, দগ্ধ, বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপ, ভাংচুর করা হয়েছে। গত ১৩ দিন ধরে অবরোধের নামে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজির ঘটনায় দগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেু শতাধিক মানুষ।
×