ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাহিত্য ও কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চাই ॥ মমতাজউদদীন আহমদ

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

সাহিত্য ও কর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে চাই ॥ মমতাজউদদীন আহমদ

দেশের প্রথিতযশা নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা ও কলামিস্ট অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদের আশিতম জন্মজয়ন্তী আজ রবিবার। পশ্চিম বাংলার মালদহে ১৯৩৫ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বিশেষ এই দিনটিকে উদ্যাপনের লক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে আজ সন্ধ্যা ৬টায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের আশিতম জন্মদিনকে উপলক্ষ করে মিরপুরের রূপনগরের নিজ বাসা ‘কুমুর নিজের বাড়ি’তে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন গৌতম পা-ে। আশিতম জন্মদিনে আপনার অনুভূতি কেমন? মমতাজউদদীন আহমদ: দেখতে দেখতে অনেক স্মৃতি, ভালবাসা, ভাললাগা নিয়ে আশি বছর হয়ে গেল, ভাল তো লাগছেই। আপনাকে কিছুটা অসুস্থ মনে হচ্ছে? মমতাজউদদীন আহমদ : হ্যাঁ, পা দুটো কেমন ফুলে রয়েছে। এখন একটু বিশ্রাম নিতে হবে। জন্মদিনে আজ আপনাকে ঘিরে উৎসব হচ্ছে, অনুভূতি কেমন? মমতাজউদদীন আহমদ : আমার স্নেহধন্য প্রিয় ছাত্র জিয়াউল হাসান কিসলুই মূলত এই জন্মজয়ন্তীর মূল উদ্যোক্তা। তার প্রবল আগ্রহের কারণেই জীবনের এই পর্যায়ে এসেও এত চমৎকার এক আয়োজনের মুখোমুখি হচ্ছি। বেশ ভাল লাগছে। তবে পেছনে থেকে আসাদুজ্জামান নূর, রামেন্দু মজুমদার, আকতারুজ্জামানসহ সবাই বেশ সহযোগিতা করছেন। আমি সবার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। সবাই দোয়া করবেন যেন ভাল থাকি, সুস্থ থাকি। মঞ্চে আপনার লেখা ও নির্দেশিত নাটক কোন্টি? মমতাজউদদীন আহমদ : মঞ্চে আমার রচনা ও নির্দেশনার প্রথম নাটক হলো ‘তবুও আমরা বাঁচবো’। বেতারে প্রচারিত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ কোন্টি? মমতাজউদদীন আহমদ : বেতারে আমার অনেক নাটকই প্রচার হয়েছে। প্রায় সবই শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে বেতারে প্রচারিত প্রিয় নাটকের মধ্যে একটি হলো ‘কী চাহো শঙ্খচিল’। বিজয় দিবসে বেতারে প্রচার করা হয় নাটকটি। টেলিভিশনে প্রচার হওয়া আপনার নাটক সম্পর্কে কিছু বলুন... মমতাজউদদীন আহমদ : টেলিভিশনে আমার লেখা প্রচার হওয়া প্রথম নাটক ছিল ‘দখিনের জানালা’। এটি নির্মাণ করেছিলেন প্রয়াত আতিকুল হক চৌধুরী। তবে টেলিভিশনে প্রচারিত আমার প্রিয় নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশনায় ‘ঝড়ের মধ্যে বসবাস’। টেলিভিশনে আমার লেখা প্রচারিত সর্বশেষ দর্শকপ্রিয় দুটি নাটক হচ্ছে ‘কূল নাই কিনার নাই’ ও ‘সহচর’। দুটি নাটক নির্মাণ করেছিলেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ ও নওয়াজেশ আলী খান। হুমায়ূন আহমেদেরই নির্দেশনায় দশটি নাটকে অভিনয় করেছি। চলচ্চিত্রের কাজ নিয়ে কিছু বলুন... মমতাজউদদীন আহমদ : সৈয়দ হাসান ইমাম পরিচালিত ‘লাল সবুজের পালা’ চলচ্চিত্রের কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য আমারই রচনা। সদ্যপ্রয়াত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের ‘শাস্তি’, ‘সুভা’ ও ‘হাছনরাজা’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও আমি করেছিলাম। হুমায়ূন আহমেদের ‘শঙ্খনীল কারাগার’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, ‘নদীর নাম মধুমতি’ ও মহিউদ্দিন ফারুকের ‘বিরাজ বৌ’ চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছি। বর্তমানে কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন? মমতাজউদদীন আহমদ : দীর্ঘ ৩৪ বছর শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম। আমি দীর্ঘদিন জনকণ্ঠেও কলাম লিখেছি। এখন অসুস্থতার কারণে লেখা হয় না। আমার প্রবল ইচ্ছে বিশ্বমানের একটি নাটক লেখা বাংলা ও ইংরেজী ভাষাতে। বর্তমানে মূলত এই কাজটিতেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। আমার স্ত্রী কামরুন্নেসা মমতাজ, দুই ছেলে, দুই মেয়ে তিয়াসা, তিতাস, তমাল ও তাহিতি আমেরিকাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। প্রিয় নাতি-নাতনির সঙ্গেই সময় কেটে যায়। দীর্ঘ এই জীবনে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির কিছু কথা বলুন... মমতাজউদদীন আহমদ : রবীন্দ্রনাথের কথায় বলতে হয় ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম সে কখনও করে না বঞ্চনা’। আমি আমার ছাত্রছাত্রী, দর্শক-শ্রোতা ও পাঠকের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। কেননা তাদের কাছ থেকে আমি পেয়েছি অফুরন্ত শ্রদ্ধা, ভালবাসা। আমি মনে করি এতটা পাওয়ার যোগ্য আমি নই। বাংলা ভাষাকে ভালবেসেছি, পেয়েছি সবার ভালবাসা। বাংলাদেশকে আমার বলতে ইচ্ছে করছেÑ জীবন আমার ধন্য হলো মাগো তোমার কোলে এসে। জীবনে কখনও মিথ্যার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইনি। জীবনের একটা বিচলিত অবস্থা গেছে, সেটাকে আমার অপ্রাপ্তি ঠিক বলা যায় না। একটা আপত্তি আমার বিধাতার কাছে। খুব অল্প বয়সে আমার মা মারা যায়। এ সময়ে আমার জীবনের একটা খুবই করুণ মুহূর্ত ছিল। আপনার ইচ্ছার কথা বলুন... মমতাজউদদীন আহমদ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা দীনবন্ধু মিত্র’র মতো মৃত্যুর পরও আমি বেঁচে থাকতে চাই আমার সাহিত্য ও কর্মের মধ্য দিয়ে।
×