ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে শোক

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে শোক

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ মুক্তিযুদ্ধকালীন অসংখ্য কালজয়ী গানের শ্রষ্ঠা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গীতিকার গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা। শোক জানিয়েছেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও সংস্কৃতিকর্মীরা। বরেণ্য এই গীতিকারের মৃত্যুতে দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে এ শোক জানান উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী ও সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদারসহ অন্য নেতারা। তারা গীতিকার গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। গতকাল এক শোক বিবৃতিতে তারা বলেন, গোবিন্দ হালদারের মৃত্যুতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক গৌরবময় উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যখন বাঙালী জাতি পাকিস্তানী শাসক ও শোষকদের নানা অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠছিল, যখন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে নিজের জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করতে প্রস্তুতি নেয় কোটি বাঙালী, তখন গোবিন্দ হালদারের রচিত গানগুলো তাদেরকে সেই লড়াইয়ে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর তাতে যোগ দিয়ে তিনি রচনা করেন ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’র মতো সাড়া জাগানো গান। এছাড়াও রয়েছে তাঁর রচিত ‘লেফট রাইট লেফট’, ‘হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার’, ‘চলো বীর সৈনিক’ প্রভৃতি গান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিয়মিতভাবে প্রচারিত তাঁর রচিত গানগুলো শুনে বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধারা নতুন অনুপ্রেরণা ও উদ্যম নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। স্বাধীনতার চার দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও যে কোন আন্দোলন সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে জনমত গঠনের ক্ষেত্রে গোবিন্দ হালদারের গানগুলো বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৩০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয় জন্ম নেয়া গোবিন্দ হালদার ছোটবেলা থেকেই প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার সঙ্গে পরিচিত হন। পরিণত বয়সে স্বাভাবিক কারণেই তিনি জড়িয়ে পড়েন বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির দূরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন তিনি। দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে এক পর্যায়ে কলকাতায় উন্নত চিকিৎসার জন্য যান গোবিন্দ হালদার। বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ নবেম্বর কলকাতার মানিকতলায় জেএন রায় সেবা ভবন হাসপাতালে ভর্তি হোন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার সকাল ১০-২০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই মহান গীতিকার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
×