ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাস্টমসের অদূরদর্শিতায় শাহজালালে হাতছাড়া সোনার বড় চালান

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

কাস্টমসের অদূরদর্শিতায় শাহজালালে হাতছাড়া সোনার বড় চালান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শাহজালাল বিমানবন্দরের কাস্টমসের অদূরদর্শিতায় সোনার একটি বড় চালান হাতছাড়া হয়ে গেছে। শুক্রবার বিকেলে কাতার থেকে আনা সোনার এ চালান খালাসের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে সঠিক সময়েই শাহজালালে হাজির ছিলেন তিন স্মাগলার। তবে সোনা খালাস করতে না পারলেও তারা আটকা পড়ে শুল্ক গোয়েন্দার ফাঁদে। তারা হলো বিমানের ক্লিনার মুরাদ হোসেন, মুন কনস্ট্রাকশনের কর্মচারী সাঈদুর রহমান ও গাড়ি চালক রিয়াজ উদ্দিন। এ সময় তারা স্বীকার করে ওই ফ্লাইটেই ৪৪০ সোনার বার লুকানো রয়েছে। সেটা খালাস করা সম্ভব হয়নি। সোনার চালান নিতে আসা তাদের একটি গাড়িও আটক করা হয় (নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-৩৫-৯০০৭)। শুক্রবার বিকেলে দোহা থেকে আগত কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সোনার একটি চালান আসে। ৪৪০ সোনার বারের এ চালান খালাসের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেন ধৃত মুরাদ হোসেন। তিনি ওই ফ্লাইটে গিয়ে সোনা খালাসের আগেই শুল্ক সদস্যরা সেখানে হানা দেয়। কিন্তু বিদেশী ফ্লাইট হিসেবে পরবর্তী সিডিউলের সময় ঘনিয়ে আসায় তল্লাশি শেষ করা যায়নি। যে কারণে সোনা খালাসের আগেই ওই ফ্লাইট আকাশে উড়ে যায়। এদিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মুরাদ স্বীকার করে, শাহজালাল বিমানবন্দরের ফ্লাইং ক্লাব এলাকায় সোনা নেয়ার জন্য একটি গাড়ি অপেক্ষা করছে। শুল্ক সদস্যরা সেখানে হানা দিয়ে গাড়িটির সন্ধান পান। এর ভেতরে বসা ছিলেন সাইদুর রহমান। এ সময় তার গাড়ির ভেতরে প্রবেশের অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তিনি জানান, বিনানুমতিতেই ভেতরে প্রবেশ করেছেন। সোনা নেয়ার জন্যই বিমানবন্দরের ওই সংরক্ষিত স্থানে অবস্থান করছিলেন। এ সময় শুল্ক গোয়েন্দারা আরও জানতে পারেন, সাইদ এর আগেও একাধিকবার একই কায়দায় ওই গাড়িতে করে সোনা চালান পার করেছে। এ সোনার মালিক উত্তরার নাইম ও জাফর নামের দুই ব্যবসায়ী। তাদের নির্দেশেই মুরাদ সোনার চালান নেয়ার জন্য এখানে অপেক্ষা করে। এ ঘটনায় শাহীনা নাজনীন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় বিমানের কর্মী মুরাদ হোসেন, চালক রিয়াজ উদ্দিন ও গাড়ির মালিক সাইদুর রহমানকে। এজাহারে সাক্ষী করা হয়েছে বিমানের অপর তিন কর্মী আনোয়ার, খোরশেদ আলম ও ওমর ফারুককে। সূত্র জানায়, এয়ারপোর্ট শুল্ক বিভাগের দূরদর্শিতার অভাবে ওই চালান হাতছাড়া হয়ে যায়। ওই চালান সম্পর্কে সোর্স বিমানবন্দর শুল্ক ও শুল্ক গোয়েন্দা দুই বিভাগে আগেই তথ্য জানিয়ে দেয়। এতে শুল্ক গোয়েন্দা বিমানবন্দরে পৌঁছার আগেই শুল্ক সদস্যরা অতি আগ্রহী হয়ে ওই ফ্লাইটে তল্লাশি শুরু করে। তাতে টের পেয়ে যায় চোরাচালানীরা। যে কারণে তারা ওই ফ্লাইট থেকে সোনার চালানটি খালাস থেকে বিরত থাকে। সূত্র জানায়, সোর্স শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খানের কাছে খবর দেয়, শুক্রবার বিকেলে চারটায় ওই ফ্লাইট শাহজালালে অবতরণের পরই সব যাত্রী নেমে যাবে। তারপর বিমানের ক্লিনাররা ফ্লাইট পরিষ্কারের জন্য ভেতরে ঢুকবে। তখন সোনার চালান খালাস করে ফ্লাইং ক্লাবের কাছে রানওয়ের পাশে একটি প্রিমিও গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবে সাইদ নামে এক ব্যক্তি। এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য পাবার পরও শুধু শুল্ক সদস্যদের ভুলের কারণেই সোনার চালানটি হাতছাড়া হয়ে যায়। এ সম্পর্কে আরও জানা যায়, সোনাসহ চোরদের হাতেনাতে ধরার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যদের ভিন্ন কৌশল ছিল। তারা সোনার চালান বের করে গাড়িতে তোলার সময় হাতেনাতে ধরার কৌশল নেয়। কিন্তু শুল্ক সদস্যরা আগেই ফ্লাইটে হানা দেয়ায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এদিকে বিমানবন্দরের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে কি করে বিনানুমতিতে গাড়ি নিয়ে ফ্লাইং ক্লাবের মতো সংরক্ষিত স্থানে প্রবেশের ঘটনা ঘটল সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুল্ক গোয়েন্দা। বর্তমানে যেখানে বিমানবন্দরের সব ধরনের দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে কিভাবে দিনে-দুপুরে গাড়ি নিয়ে স্মাগলাররা ভেতরে ঢোকার সুযোগ পায় সেটা তদন্ত করলেই কেঁচো খুঁজতে সাপ বের হয়ে আসার মতো তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছে পুলিশ।
×