ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেআইনী নির্দেশ না মানতে নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যদের প্রতি বিএনপির আহ্বান

উর্দি খুলে চাকরি ছেড়ে রাজনীতির মাঠে নামুন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

উর্দি খুলে চাকরি ছেড়ে রাজনীতির মাঠে নামুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব কর্মচারীর রাজনৈতিক খায়েশ রয়েছে তাদের উর্দি খুলে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতির মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছে ২০ দলীয় জোট। একই সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সুবিধাভোগী ও উচ্চাভিলাসের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত কর্মকর্তাদের বেআইনী নির্দেশ না মানার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। শনিবার অজ্ঞাত স্থান থেকে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। জোটের পক্ষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন যে বিবৃতি দিয়েছে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা উল্লেখ করে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ, সহিংসতা বন্ধ এবং বিরোধী দল ও জনগণের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার যে আহ্বান জানিয়েছে তাঁর প্রতি জোটের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। জাতিসংঘের এ বিবৃতিকে স্বাগত জানাই। সমস্যাটি যে রাজনৈতিক এবং বিরোধী দলের কর্মসূচী পালনে ক্ষমতাসীনদের বাধা প্রদান ও নির্যাতন থেকে উদ্ভূত তাঁরা তা অনুধাবন করতে পেরেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দেশের চলমান সহিংস ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে জাতিসংঘ যে আহ্বান সরকারের প্রতি জানিয়েছে তা নিয়ে জোটের এবং জনগণের সংশয় রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোটারবর্জিত নির্বাচনী প্রহসনে ক্ষমতা জবরদখলকারীরা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহ ও তদন্ত প্রক্রিয়াসহ সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। এদের মাধ্যমে কোন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও কার্যকর তদন্ত সম্ভব নয়। কাজেই রিয়াজ রহমানসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ওপর গুলি ও বোমা হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর প্রহরাধীনে চলাচলরত যানবাহনে রহস্যজনক হামলায় মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো নৃশংস ঘটনাবলির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এদের দ্বারা সম্ভব নয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি তাদের দলভুক্ত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি বোমাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষবাহিনীর হাতে আটক হলেও তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে মিথ্যা মামলায় বাড়িঘরে হামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন, গুম ও হত্যা করা হচ্ছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ধ্বংস এবং পরিবারে সদস্যদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পদে এমন সব চরম দলবাজ লোকদের বসানো হয়েছে তারা এখন আইন-কানুন এবং তাদের আওতা পরিধি ও কর্তব্যের সীমারেখা মেনে চলার ধারও ধারছে না। শুক্রবার রংপুর জেলার মিঠাপুকুরে পুলিশের আইজি ও র‌্যাবের ডিজি জনসভায় রাজনীতিকদের ভাষণ দেয়ার মতো রীতিমত রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বিরোধী দল ও জনগণকে কঠোর ভাষায় হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। দেশের জাতীয় নির্বাচন কখন হবে না হবে সে বিষয়ে তারা মন্তব্য করেছেন। আন্দোলনকারীদের জীবনাশের হুমকি দিয়ে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার কথা বলেছেন। বিরোধী দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কটূক্তি করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক এজেন্ডার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় এসব ঘটনা স্বাধীন গণতান্ত্রিক ও সভ্য দেশে অকল্পনীয়। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে বেতন ভাতা গ্রহণকারী প্রজাতন্ত্রের এসব কর্মচারীর এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে তীব্র নিন্দা জানাই। দেশে কোন জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার থাকলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও এখতিয়ার বহির্ভূত এমন সব বেআইনী বক্তব্য প্রদানের দায়ে তাদের অবশ্যই চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনা হতো। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষমতাসীনরা এতই দেউলিয়াপনা হয়ে পড়েছে যে রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পথে না গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর প্রধানদের রাজনীতির মাঠে নামিয়ে দিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর যেসব কর্মচারীর রাজনৈতিক খায়েশ রয়েছে তাদের উর্দি খুলে প্রজাতন্ত্রের চাকরি ইস্তফা দিয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ১১ হত্যাসহ গুম-খুনের বিভিন্ন ঘটনায় বিতর্কিত র‌্যাব বিলুপ্ত করার দাবি উঠেছে দেশ-বিদেশে। এই কালিমা দূর করে র‌্যাবে ভারমূর্তি ফিরিয়ে আনার বদলে নতুন ডিজি আরও বিতর্কিত ও গণবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের কারও কারও নিকটাত্মীয়রা পর্যন্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এদিকে এ বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আরেক বিবৃতি দিলে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। রিজভী বলেন, এ বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির গুলশান অফিস থেকে বিবৃতি দেয়ার কারণে তার নামের বিবৃতিটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। রুহুল কবির রিজভীর বিবৃতিতে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত চলামান অবরোধ কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। এছাড়া পুলিশের মহাপরিদর্শক ও বিজিবির মহাপরিচালক যে বক্তব্য দিয়েছেন তার জন্য নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এদিকে শনিবার গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান এগ্রিকালচারিস্ট এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব)-এর প্রতিনিধি দল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ্যাবের প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে এলে ৮৬ নম্বর রোডের মাথা থেকে পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে এমকে আনোয়ারের সাক্ষাত ॥ এদিকে শনিবার রাত পৌনে ৮টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে গুলশান কার্যালয়ে যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার। এ সময় তার সঙ্গে খালেদা জিয়া দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
×