ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৮ জানুয়ারি ২০১৫

আফগানিস্তানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ সার্কভুক্ত দেশ আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে দেশটিতে রফতানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে বাংলাদেশী পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় চলতি অর্থবছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করবে সরকার। ইতোমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জানা গেছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে কি ধরনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের মতামত গ্রহণ করেছে। এখন এ ব্যাপারে সরকারের করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। আর এ কারণে আগামী ২১ জানুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেসী জনকণ্ঠকে বলেন, সার্কভুক্ত সকল দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য রয়েছে। তাই সার্কের নতুন সদস্য হিসেবে আফগানিস্তানের সঙ্গেও বাংলাদেশ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আগ্রহী। তিনি বলেন, দেশটিতে বাংলাদেশী কিছু পণ্যের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা বাড়ায় দেশের রফতানিকারকরাও উৎসাহিত। তাই দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করতে সরকার আগ্রহী। জানা গেছে, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ ছাড়া সার্কভুক্ত সকল দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার এবং ১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল মালদ্বীপে। আর মালদ্বীপ গত অর্থবছরও বাংলাদেশে ১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যে ২০০৩-০৪ অর্থবছরের পর গত অর্থবছরই প্রথম উদ্বৃত্তে ফিরেছে বাংলাদেশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছর দেশটিতে ৩৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। একই সময়ে আফগানিস্তান থেকে আমদানি করে ১১ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য। ২০০৪-০৫ থেকে ২০০৭-০৮ অর্থবছর পর্যন্ত দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল। সার্কের আরেক সদস্য রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি প্রায় সমান সমান। বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানে হিমায়িত খাদ্য, কৃষিপণ্য, কেমিক্যাল পণ্য, চামড়া, কাঁচা পাট, পাট পণ্য, নিটওয়্যার, ওভেন গার্মেন্ট ও অন্যান্য পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। বিপরীতে ফলমুল, মসলাসহ কিছু পোশাক আইটেম আমদানি হয় আফগানিস্তান থেকে। এদিকে, সার্কভুক্ত সাতটি দেশে সাফটা চুক্তি অনুযায়ী রফতানি বেশি হওয়ার কথা থাকলে তার সুফল পাচ্ছে না বাংলাদেশ। এমনকি ভারতে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকার পরও দেশটিতে রফতানি কমেছে ৩৬ শতাংশ। এ ছাড়া পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানে রফতানি কমেছে। আর এক্ষেত্রে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপে রফতানি কিছুটা বেড়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরের (জুলাই থেকে মার্চ) সময়ের তুলনায় ২০১৩-১৪ অর্থবছরের একই সময়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে রফতানি কমেছে ১৭ কোটি ১২ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৫৩ কোটি ৪৭ লাখ ৫৩ হাজার ডলার। এ প্রসঙ্গে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সার্কের দেশগুলোতে রফতানি কম হওয়া ভাল লক্ষণ নয়। শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাছাড়া স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন না হওয়ায় রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া প্রক্রিয়াগত জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতা ও পরীক্ষাগার ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে রফতানিকারকরা অনুৎসাহিত হচ্ছে। শুল্কবর্হিভূত বাধা দূর করে বাণিজ্য সহজীকরণ করা হলে রফতানি বাড়ানো সম্ভব।
×