ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীতের সন্ধ্যায় ছায়ানটে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরেলা শব্দধ্বনি

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

শীতের সন্ধ্যায় ছায়ানটে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরেলা শব্দধ্বনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার শীতের সন্ধ্যা। সুরের অনুরণনে স্নাত ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরেলা শব্দধ্বনিতে সিক্ত শ্রোতাকুল। হৃদয় উঁচাটন করা বাঁশির সুরের মন নাচানো তবলার বোল কিংবা সেতারের সুমিষ্ট ধ্বনি ছাড়ানো আয়োজনটির শিরোনাম ছিল ‘তাজা রাগা ও রিদম’। আর এই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজন করে পেশকার কালচারাল ফোরাম। নতুন প্রজন্মের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করা এবং দেশী শিল্পীদের নিয়ে উচ্চমানের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতানুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। এর মাধ্যমে প্রকৃত শিল্পীদের মূল্যায়নের পাশাপাশি জোগানো হবে অনুপ্রেরণা। সঙ্গীতাসরের সূচনায় মঞ্চে আসেন সেতারশিল্পী এবাদুল হক সৈকত। শ্রোতাদের আলোড়িত করে নিবিষ্ট মনে বাজিয়ে শোনান চঞ্চল প্রকৃতির সান্ধ্যকালীন রাগ চারুকেশী। সেতারে সুমধুর সুর ছড়িয়ে কিছুক্ষণের আলাপ পর্ব শেষে তবলায় সঙ্গত দিতে শুরু করেন মীর নাকিবুল ইসলাম। দু’জনের মেলবন্ধনে সৃষ্ট প্রথম বন্দীশের আধার ছিল রূপক তালে, যেখানে শিল্পীদ্বয়ের আদান-প্রদান ছিল লক্ষ্যণীয়। বিলম্বিত ও মধ্য লয়ে তিন তালের বন্দী পরিবেশনায় বিভিন্ন লয়ে লয়কারীর দখল ছিল সঙ্গীতানুরাগীদের জন্য দারুণ উপভোগ্য। বিস্তার ও তানের সমন্বিত বাজনায় মুখরিত হয়ে ওঠে মিলনায়তন। রাগ মারওয়াকে সঙ্গী করে মঞ্চে হাজির হন বংশীবাদক মর্তুজা কবীর মুরাদ। তাঁর সঙ্গে তবলায় সঙ্গত দেন বিশিষ্ট তবলিয়া স্বরূপ হোসেন। শুরুতে রূপক তাল শেষে ত্রিতাল দিয়ে শেষ হয় পরিবেশনাটি। এরপর শব্দের নিনাদে উপস্থাপিত হয় চিরায়ত ধুন কিত্তন। বহুদিনের চেতনা এই যুগলের পরিবেশনাটি ছিল অনবদ্য। বাঁশির মোহিনী সুরের মূর্ছনা আচ্ছন্ন করে রাখে শ্রোতাদের। শেষ পরিবেশনাটি ছিল পদ্মভূষণপ্রাপ্ত প-িত জ্ঞানপ্রকাশের সুযোগ্য শিষ্য অশোক পালের তবলাবাদন। পেশকার পরিবেশনা দিয়ে শুরু করেন বাজনা। পরম্পরাগত শিক্ষা থেকে প্রাপ্ত তালিম ও দীর্ঘ সাধনার সম্মিলিত এই শিল্পী নিজস্ব অনন্য ঢঙে পেশকারটি পরিবেশন করেন। এরপর পরিবেশন করেন কায়দা রেলা। অশোকের সঙ্গে নাগমায় সহযোগিতা করেন তরুণ শিল্পী আলমগীর পারভেজ সুমনা। এই তরুণ শিল্পীর দৃঢ় লয় ও সাবলীল বাজনা পরিবেশনাটিকে করে তোলে প্রাণবন্ত। প্রধান অতিথি হিসেবে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। বেঙ্গলে নিকোলা স্ট্রিপ্পোলি তারশিতোর চিত্রপ্রদর্শনী ॥ বেঙ্গল শিল্পালয়ে শুরু হলো ইতালির শিল্পী নিকোলা স্ট্রিপ্পোলি তারশিতোর ‘তারশিতো : এমব্রয়ডার দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক চিত্রকলা প্রদর্শনী। শুক্রবার সন্ধ্যায় বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টস আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি শিল্পী চন্দ্রশেখর সাহা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির মান্যবর রাষ্ট্রদূত মারিও পামা, শিল্পী নিকোলা স্ট্রিপ্পোলি তারশিতো ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। নিকোলা স্ট্রিপ্পোলি তারশিতো ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে স্থপতি, শিক্ষক ও শিল্পী। তারশিতোর শিল্পচিন্তা এবং কাজের ধারা দেখে প্রতীয়মান হয়, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন আধাত্মিক চিন্তা তাঁকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। ব্যক্তিগত সফরে বাংলাদেশে বেড়াতে এলে এদেশের ঐতিহ্যবাহী সুচিশিল্পের লোকজ ধারা তাঁকে আকৃষ্ট করে। সুদূর ইতালির বারি অঞ্চলে রচিত চিত্রকর্মের সঙ্গে কাদামাটির বাংলাদেশের শিল্প উপাদান সম্পৃক্ত করে তাঁর শিল্পকর্মে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন। বাংলাদেশের কাঁথাশিল্পীরা তারশিতোর ক্যানভাসে সুই-সুতোর নিপুণ ফোঁড়ে গ্রামীণ সংস্কৃতির চিরন্তন আবেদনকে ফুটিয়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের কাঁথা আর ইতালির চিত্রকর্মের সম্মিলনÑশুধু এটাকেই তারশিতোর শিল্পকর্মের শেষ লক্ষ্য সম্ভবত বলা যাবে না। শিল্পী দুটি দেশের আবেগ, যাপিতজীবনের গল্প আর আর্থ-সামাজিক অবস্থানকে ক্যানভাসে চিত্রিত করতে চেয়েছেন। ত্রিশটি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। চলবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। বইপড়া কর্মসূচীর পুরস্কার প্রদান উৎসব ॥ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে নিরন্তর কাজ করে চলেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। সেই কমতৎপরতার অংশ হিসেবে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে গত ছত্রিশ বছর ধরে দেশজুড়ে চলছে বইপড়া কর্মসূচী। প্রতিবছর দেশের প্রায় দেড় লাখ ছাত্রছাত্রী অংশ নিচ্ছে এই কর্মসূচীতে। সেই সূত্রে গত বছর ঢাকার ১০০ স্কুলের ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয় এই কর্মসূচীতে। এসব স্কুলের যেসব ছাত্রছাত্রী মূল্যায়ন পর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে তাদের জন্য দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য পুরস্কার বিতরণী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর রমনা বটমূলে শুক্রবার সকালে তিন পর্বের এ উৎসবের উদ্বোধন হয়। এতে দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রের সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। অনুষ্ঠানে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, গোটা পৃথিবী আজ টাকার পেছনে ছুটছে। টাকা দিয়ে পৃথিবীর প্রায় সব কিছুই কেনা যায়। তবে টাকা দিয়ে আনন্দ কেনা যায় না। মানুষের মহত্ত্ব, আত্মত্যাগ কেনা যায় না। যারা একাত্তরে জীবন দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে তাদের আত্মত্যাগ টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয়। তবে বই পড়লে সহজেই আনন্দ উপলব্ধি করা যায়। শেখ ফজলুল করিম রচনাবলীর প্রকাশনা উৎসব ॥ শামসুন নাহার জামান সম্পাদিত ‘শেখ ফজলল করিম রচনাবলী’ দ্বিতীয় খ-ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো শুক্রবার। বিকেলে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে সাপ্তাহিক অন্যস্বর ও স্বপ্নকুঁড়ি যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি নাসির আহমেদ ও কবি আনন্দ মজুমদার। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন প্রফেসর কাজী মদীনা, ড. তপন বাগচী, সাংবাদিক ও ছড়াকার আখতার হুসেন, ড. হাবিবা খাতুন, শেখ ফজলুল করিমের উত্তরসূরি অধ্যাপক আব্দুস সালাম, সাপ্তাহিক অন্যস্বর সম্পাদক কবি নোমান সালমান। অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন গ্রন্থের সম্পাদক শামসুন নাহার জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন কবি হাসান মাহমুদ। আনিসুজ্জামান বলেন, শেখ ফজলুল করিম মানব জীবন সম্পর্কে কৌতূহলের চাইতে আধ্যাত্মিকতার দিকেই ঝোঁক ছিল বেশি। বিশেষ করে লৌকিক জীবন। তাঁর নীতিকথা উনিশ শতকের নীতিকথাগুলোর চাইতেও মার্জিত এবং পরিশীলিত ছিল। তাঁর রচনায় মুসলিম সমাজের নানা উৎকণ্ঠার কথা উঠে এসেছে বেশ জোড়ালোভাবে। সমাজের আলোকিত মুহূর্তের রচয়িতার নাম শেখ ফজলুল করিম উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, কবিরা হচ্ছে যুদ্ধের সৈনিকের মতো। কবি হওয়ার জন্য হাজার হাজার কবিতা লিখতে হয় না। দু’একটা লিখলেই চলে। শেখ ফজলুল করিমের প্রতিটি কবিতায়ই আলোকিত উদ্ভাসন দেখা যায়।
×