ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাড়তি পরিবহন ব্যয়ে নিত্যপণ্যের দাম উর্ধমুখী

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

বাড়তি পরিবহন ব্যয়ে নিত্যপণ্যের দাম উর্ধমুখী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গার্মেন্টস কর্মী রাহেলার মনে শান্তি নেই। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের মুখে তাকে প্রতিদিন আগুন ও বোমা আতঙ্ক নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হয়। এত ঝামেলার মধ্যে আবার বেড়ে গেছে ভোগ্যপণ্যের দাম। বেতনের টাকায় এখন যেন আর কুলায় না! দু’সপ্তাহ ধরে টানা অবরোধের কারণে বেড়ে গেছে জিনিসপত্রের দাম। ফলে রাহেলাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শিল্প মালিকরা। কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক ভাড়া তিন থেকে চারগুণ বেড়ে গেছে। আড়ত মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুলিশী পাহারায় কিছু পণ্যসামগ্রী এলেও পরিবহন ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দু’সপ্তায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। একদিন আগেও প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিল ২৪ টাকা। এখন এই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৯ টাকায়। খুচরা বাজারে ৪০ টাকার নিচে কোন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য বণিক সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ সাঈদ জনকণ্ঠকে বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে পণ্য সরবরাহ কমে গেছে। নৌপথে কিছু পণ্য এলেও সড়কপথে পণ্য সেভাবে আসছে না। ৫০ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া বেড়ে এখন ১ থেকে দেড় লাখ টাকা হয়েছে। এ কারণে বাজারে কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি গত সপ্তায় সয়াবিন তেল, পামওয়েল, সুপার পাম, ডাল, মুরগি, মাংস, আলু এমনকি আদা ও রসুনের দামও বেড়ে গেছে। চালের দাম কেজিতে বাড়ছে ১-২ টাকা করে। তবে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে আগামী সপ্তায় চালের দাম বাড়ার আভাস দিয়েছেন কাপ্তানবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, উত্তরবঙ্গ বিশেষ করে রাজশাহী থেকে চালের সরবরাহ কমে গেছে। হরতাল-অবরোধে পিকেটাররা পণ্যবাহী ট্রাকে অগ্নিসংযোগসহ ভাংচুর করছে। এ কারণে ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। আর দু’একটি এলেও ভাড়া দিতে হচ্ছে তিন থেকে চারগুণ। এদিকে সবজির বাজারেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। শীতের সবজির মৌসুমে কৃষকরা সরবরাহজনিত কারণে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। কিন্তু নগরবাসীকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। মহাসড়কে পণ্য সরবরাহকারী যানবাহন চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ছে নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম। দেশের পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী নেতা হাজী মোঃ আলী ভুট্টো জনকণ্ঠকে বলেন, সড়কপথে না এলেও নদীপথে কিছু পণ্য সরবরাহ হচ্ছে। ফলে চাহিদামতো পণ্য সরবরাহ না হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া প্রতিটি হরতাল-অবরোধে কেবল পরিবহন খাতেই প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষ আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। কাপ্তান বাজারের জামশেদ স্টোরের ম্যানেজার আবদুল গনি জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা হরতাল-অবরোধ চাই না। আমরা ব্যবসাবান্ধব বাংলাদেশ চাই। হরতালের কারণে আমরা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছি না। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছি না। তাই বিএনপির কাছে আমাদের অনুরোধÑ আপনারা হরতাল-অবরোধ পরিহার করুন, বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচী দিন। একদিকে বেকার হয়ে যাওয়া ও অন্যদিকে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। সহিংস ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে নগরীর স্বল্প আয়ের মানুষের। সহিংস ও হিংস্র রাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের চরম ঘৃণার সৃষ্টি হচ্ছে। উদ্যোক্তারা মনে করছেন, হরতাল ও অবরোধের কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়বে, ঘটবে মূল্যস্ফীতি এবং কমে আসবে কর্মসংস্থান। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, হরতাল-অবরোধের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়ে। বিশেষ করে দিনমজুর, সিএনজি, রিকশা ও ঠেলাগাড়ি চালকরা বেকার হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এভাবে হরতাল চলতে থাকলে বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অবক্ষয়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচী নির্ধারণ করা উচিত। কাপ্তান বাজারের ক্রেতা লালন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের কর্মসূচী বন্ধে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
×