ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তারেক থেকে রিয়াজ- কোন ঘুঁটিই কাজে লাগাতে পারছে না বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

তারেক থেকে রিয়াজ- কোন ঘুঁটিই কাজে লাগাতে পারছে না বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তারেক রহমান থেকে শুরু করে রিয়াজ রহমান পর্যন্তÑ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার প্রত্যক্ষদর্শী তাঁর গাড়িচালকের হদিস মেলেনি। তার সম্পর্কে রিয়াজ রহমান বা চালকের পরিবার আজও মুখ খোলেনি। আজ চালকের সন্ধানে অভিযান নামছে পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। অভিযান চালানো হতে পারে চালকের আত্মীয়স্বজন, গ্রামের বাড়ি এবং রিয়াজ রহমানের বাড়িতেও। আন্দোলনের কৌশল ভেস্তে যাওয়ায় দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও আর লাশ ফেলে ক্ষমতাসীন দলকে গদিচ্যুত করার মিশন নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারও শক্ত হাতে এমন মিশন ব্যর্থ করতে প্রস্তুত। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে সরকার সম্পর্কে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাতে সুফল না আসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কেও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেন তারেক রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পরিকল্পিতভাবেই আবোল-তাবোল বলেছেন। উদ্দেশ্য- যাতে সরকার তারেক রহমানকে জোর জবরদস্তি ধরে এনে গ্রেফতার করে। তারেক রহমান গ্রেফতার হলে দেশব্যাপী সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচী মারাত্মক আকার ধারণ করবে। ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতাচ্যুত করা সহজ হবে। যদি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা না যায়, সেক্ষেত্রে অন্তত মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করা যাবে। কিন্তু তারেক রহমান সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আর দেশে আসার সাহস করেননি। বিশেষ একটি সূত্র বলছে, শীঘ্র তিনি দেশে ফিরছেন না। বিএনপির ক্ষমতা লাভের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেই কেবল তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলকে গদিচ্যুত করা কঠিন হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে কূটনৈতিকভাবে তৎপরতা শুরু করেছে ২০ দলীয় জোট। তারই ধারাবাহিকতায় ছয় মার্কিন সিনেটরের স্বাক্ষর জাল করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুয়া বিবৃতি পাঠানো এবং বিজেপি প্রধান অমিত শাহর সঙ্গে খালেদা জিয়ার কথোপকথনের ভুয়া খবর ছড়ানো হয়। এসব পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে খালেদা জিয়ার কূটনৈতিক উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিনের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে বহির্বিশ্বের তরফ থেকে ক্ষমতাসীন দলের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। সে পরিকল্পনাও ভেস্তে গেছে। সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর এলাকার ৪৬ নম্বর সড়কের দশতলা বিলকিস টাওয়ারের সামনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা পরে গাড়িটি জ্বালিয়ে দেয়। তদন্তকারী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রিয়াজ রহমানকে গাড়ি থেকে ডেকে বের করে গুলি করা হয়। হত্যার উদ্দেশ্যে রিয়াজ রহমানকে গুলি করা হয়নি, সেটি নিশ্চিত। আগুন দেয়ার আগে গাড়ি থেকে চালককে ডেকে বের করে দেয়া হয়। ঘটনার পর থেকেই চালক নিখোঁজ। সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চালকের হদিস মেলেনি। রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার প্রধান প্রত্যক্ষদর্শী তাঁর গাড়িচালক। নিখোঁজ চালক সম্পর্কে চালকের পরিবার বা রিয়াজ রহমানের পরিবারের তরফ থেকে কোন অভিযোগ করা হয়নি। এমনকি নিখোঁজ চালকের পরিবার বা রিয়াজ রহমানের পরিবারের তরফ থেকেও চালকের হদিস বের করতে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়নি। এতে করে সন্দেহ আরও বাড়ছে। চালকের সন্ধানে আজ চালকের গ্রামের বাড়ি ও ঢাকার ঠিকানাসহ প্রয়োজনে রিয়াজ রহমানের বাড়িতেও অভিযান চালাতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বাড়ির কাছাকাছি অনায়াসে গাড়ি নিয়ে যাওয়া সম্ভব। অথচ ৭৪ বছর বয়সী রিয়াজ রহমান কী কারণে, কেন এবং কী উদ্দেশ্যে গাড়িটি অনেক দূরে ওই জায়গায় রেখে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন, তা রীতিমতো রহস্যের জন্ম দিয়েছে। রাষ্ট্র বা সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই রিয়াজ রহমানের ওপর হামলা ও তার গাড়িতে আগুন দেয়া হতে পারে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দেশব্যাপী ব্যাপক নাশকতা চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মিশন নিয়ে এগোচ্ছে। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে দেশের মানুষ আর কূটনৈতিক চাপের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করার পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করছে বিএনপি। আন্দোলন-সংগ্রামের ডাক দিতে নেতাদের গ্রেফতারের বাইরে রাখতে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে দেশব্যাপী নাশকতা চালানো হচ্ছে। আগামী দিনের ২০ দলীয় জোটের ডাকা সরকারবিরোধী কর্মসূচীতেও এমন কৌশল বহাল থাকছে। এদিকে সরকারও নাশকতাকারীদের কঠোরহস্তে দমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক রাখতে বিজিবি প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করছে এবং করবে। তবে হামলার শিকার হলে বিজিবি সহ্য করবে না। আত্মরক্ষার্থে তারাও প্রয়োজনে গুলি চালাবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন, নাশকতাকারী ও তাদের ইন্ধনদাতাসহ অর্থদাতাদের তালিকা অনুযায়ী সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। নাশকতাকারীদের কঠোরহস্তে দমন করা হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া আছে।
×