আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা শীর্ষে ধরলেন সাকিব আল হাসান। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে এক নম্বর ছিলেন আগেই। এবার উঠে এলেন ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়েরও শীর্ষে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার! প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ধরনের ক্রিকেটেই অলরাউন্ডারের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে এখন সাকিব। বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের সহঅধিনায়ক সাকিবের এই অর্জন জাতি হিসেবে গর্বিত হওয়ার মতো। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে ব্যাট-বল হাতে দারুণ পারফরমেন্স করেন সাকিব। এই পারফরমেন্সই বিশ্ব ক্রিকেটে অলরাউন্ডারদের তালিকার শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত করেছে তাঁকে। জানা গেছে, টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ভারনন ফিলান্ডারকে সরিয়ে শীর্ষ জায়গাটি দখল করেন সাকিব। এই ফরম্যাটে সাকিবের রেটিং ৩৯৮। দ্বিতীয় স্থানে ফিলান্ডারের রেটিং ৩৪১। ৩১৮ রেটিং নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ভারতের রবীচন্দ্রন অশ্বীন। ওয়ানডেতে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজকে সরিয়ে সবার ওপরে সাকিব। তাঁর রেটিং ৪০৩। দ্বিতীয় স্থানে থাকা হাফিজের রেটিং ৩৯৭। আর তৃতীয় স্থানে ৩৯৫ রেটিং নিয়ে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। ওয়ানডের মতো হাফিজকে সরিয়ে টি-২০র সেরা জায়গাটিও দখল করেন সাকিব। এখানে তাঁর অর্জিত রেটিং ৩৭৭। হাফিজ ৩৬৩ রেটিং নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে। পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি ৩২৬ রেটিং নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। বলা চলে ক্রিকেটের বিশ্ব উচ্চতায় এখন সাকিব আল হাসান।
সাকিব এক নম্বরের স্বাদ প্রথম পেয়েছিলেন ওয়ানডে দিয়েই। সেটা ছিল ২০০৯ সালের ২১ জানুয়ারি। ২০১১ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথম শীর্ষে ওঠেন টেস্টে। এরপর নানা সময়ে আলাদা করে, কখনওবা একসঙ্গেই শীর্ষে ছিলেন দুটিতে। টি-টোয়েন্টির শীর্ষে অবস্থান করেন গত ৪ ডিসেম্বর। এবার একসঙ্গে তিনটিরই শীর্ষে। সাকিব এখন সত্যিকার অর্থেই বিশ্বসেরা!
ক্রিকেটে বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনার কথা যাঁরা বলেন তাঁদের কথা যে কথার কথা নয় তার প্রমাণ রেখেছেন এই নতুন রেকর্ড সৃষ্টিকারী। বাংলাদেশের ক্রিকেটের রাজপুত্র সাকিব। জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ মাগুরায়। তরুণ বয়সেই সাকিব ফুটবল খেলা শুরু করেছিলন। তাঁর বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে খেলতেন। ফুটবলপাগল পরিবারে বড় হওয়া সত্ত্বেও সাকিবের ক্রিকেট দক্ষতা ছিল অসাধারণ। স্থানীয় একজন আম্পায়ার সাকিবকে মাগুরা ক্রিকেট লীগের একটি দলে অনুশীলন করার সুযোগ করে দেন। ২০০৬ সালে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচের মধ্য দিয়ে জাতীয় ক্রিকেটে হাতেখড়ি তাঁর। ২০০৮-এ নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের আগ পর্যন্ত তাঁকে ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য করা হতো। সেবার উদ্বোধনী টেস্টের প্রথম ইনিংসেই তিনি ৩৭ রান দিয়ে তুলে নেন ৭টি উইকেট। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশী বোলারের টেস্টে এটাই ছিল সেরা বোলিং ফিগার। সেই সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন তিনি। তারপর একজন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বেড়ে ওঠার কাহিনী। এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক জগতখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব। দেশকে অনেক দিয়েছেন সাকিব। ভবিষ্যতে আরও প্রাপ্তির প্রত্যাশায় দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। আসন্ন বিশ্বকাপে সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে, সাকিব তা পূরণ করবেন- এই প্রত্যাশা সবার। সাকিবের জন্য শুভ কামনা।