ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

আগাম শর্ত বা এজেন্ডা দিয়ে দাবি আদায় হয় না

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

আগাম শর্ত বা এজেন্ডা দিয়ে দাবি আদায় হয় না

টেলিভিশনে দেখলাম বিএনপি’র একদল নারী কর্মী বড় বড় হটপট এবং প্লাস্টিক কনটেনার নিয়ে দলের গুলশান কার্যালয়ে (স্বেচ্ছা অবরুদ্ধ) বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। দেখে মনে হলো পটগুলো খাবার ভর্তি হলে একেকটার খাবার ৫-১০ জন খেতে পারবে। গেটের প্রহরীরা তাদের বাধা দিল না। বেরিয়ে এসে বললেন, খালেদা জিয়া তাঁদের বলেছেন ‘৭ দফার ভিত্তিতে সংলাপের দরজা না খোলা পর্যন্ত অবরোধ চলবে।’ অপরদিকে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমদ বলেছেন, ‘তাঁদের দাবি এক দফা, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং পরবর্তী সরকার গঠিত হওয়া পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত থাকবে।’ এর মানে পরিস্থিতি জটিলতার দিকে এগিয়ে গেছে। এখান থেকে ফিরে আসা তাঁদের পক্ষে যেমন সম্ভব নয়, সরকারকেও মানুষের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব যে কোন পরিস্থিতিতে পালন করতে হবে। দু’বার পূর্ণ মেয়াদে, একবার দেড় মাসের মেয়াদে এই তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম সাহেব কি জানেন শর্ত দিয়ে যেমন সংলাপ হয় না, তেমনি আগাম এজেন্ডা দিয়েও সংলাপে বসার কথা পলিটিক্যাল স্ট্যান্টবাজি। বরং এজেন্ডার ব্যাপারে ঐকমত্য হবার পরই কেবল সংলাপে বসার সুযোগ সৃষ্টি হয়। বেগম জিয়ার ৭ দফা : নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও বর্তমান আরপিও সংশোধন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সংসদ বাতিল এবং বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ইত্যাদি। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, দফাগুলো মূলত শর্ত বা আগাম এজেন্ডা। তাহলে তো সংলাপে বসার প্রয়োজন নেই। শর্তগুলো পূরণ করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। সেই সুযোগও খালেদা জিয়া পেয়েছিলেন, কিন্তু নিজের দেউলিয়াপনার কারণে একটার পর একটা সুযোগ হারিয়েছেন, একটার পর একটা ট্রেন মিস করেছেন। সবচেয়ে বড় সুযোগটি হারিয়েছেন ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে। সে সময় তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংলাপে বসার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি এই ট্রেনটি মিস করলেন। বরং শেখ হাসিনা টেলিফোন করলে তিনি এমন ভাষায় ও ভঙ্গিতে কথা বলেছিলেন তা আজও কানে বাজে, যেন কোন এক ঝগড়াটে গেঁয়ো মহিলা কথা বলছিলেন। শেখ হাসিনা গণভবনে ডিনারেও দাওয়াত দিয়েছিলেন, তিনি সেই ট্রেনটি মিস করেছেন। এটি অভদ্রতার পর্যায়ে পড়ে নয় কি? অথচ এই খালেদা জিয়াই দেশ শত্রুমুক্ত হবার পর ধানম-ি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়েছিলেন সংসার বাঁচাতে। একাত্তরের ৯ মাস তিনি জিয়ার একাধিক তাগিদ সত্ত্বেও ভারত না গিয়ে ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানী আর্মির তত্ত্বাবধানে থাকায় জিয়া তাঁকে ঘরে তুলতে অস্বীকার করেন। তখন দুই সন্তানের হাত ধরে ৩২ নম্বরে গিয়ে উঠেছিলেন। বঙ্গমাতা বেগম মুজিবই বঙ্গবন্ধুকে বলে তাঁকে সন্তানসহ জিয়ার গাড়িতে তুলে দিয়েছিলেন। জিয়া ওই সুযোগটি ছাড়েননি, সেনাবাহিনীতে ডেপুটি চীফ অব আর্মি স্টাফ-এর পদ সৃষ্টি করে নিজেই তা বাগিয়ে নিয়েছিলেন। সংলাপে সরকারকে বসানোর জন্য খালেদা জিয়া যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা কোন অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একদিকে মানুষ হত্যা করা হবে, সরকারী-বেসরকারী সম্পদ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করা হবে, উৎপাদন-উন্নয়ন কার্যক্রমে এবং মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা এবং ঝুঁকিপূর্ণ করা হবে, আবার সংলাপের কথা বলা হবে, দু’টি একসঙ্গে চলে না। সংলাপে বসতে হলে খালেদা জিয়াকে আগে দেশের নাগরিকদের শর্ত হরতাল-অবরোধের কর্মসূচী ও জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করের জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাছাড়া খালেদা জিয়ার লোকেরা বলছেন বল এখন সরকারের কোর্টে, সরকারকেই প্রথম শট দিতে হবে। তাঁরা ভুলে যান সরকার এরই মধ্যে নিদেনপক্ষে হাফ ডজন গোলে এগিয়ে আছেন। খালেদা জিয়াকেই বরং পরিবেশ সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের অন্যতম প্রভাবশালী এবং আস্থাবান (ঈৎবফরনষব) ইংরেজী দৈনিক উঐঅকঅ ঞজওইটঘঊ-এর সাম্প্রতিক জরিপের (ঙঢ়রহরড়হ চড়ষষ) ফলাফলের মেইন শিরোনাম (প্রথম পাতা ৮ কলাম) হলো ৭২% ঈড়হংরফবৎ মড়াবৎহসবহঃ ংঁপপবংংভঁষ. জরিপের প্রধান প্রধান দিক হলো-৭২% মানুষ মনে করে সরকার সফল, পক্ষান্তরে ২৪% মনে করে ব্যর্থ, ৬২% মনে করে বিএনপি সার্বিক বিবেচনায় ব্যর্থ, বর্তমান সরকার পূর্ণ মেয়াদ থাকুক চায় ৪৭%, পক্ষান্তরে চায় না ৪৯%, তাদের মধ্যে ৩৫% চায় দ্রুত নির্বাচন হোক, পক্ষান্তরে ৫% চায় এ বছরই নির্বাচন হোক; আজ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ৪১% এবং বিএনপি ৩৩.৭% ভোট পাবে, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় শেখ হাসিনাকে ৪৮.৬%, খালেদা জিয়াকে ২২.২%, দু’জনের কাউকেই চায় না ২১.৮%, পরবর্তী প্রজন্মের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে চায় ৫২.৪%, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে ২৪.৫% এবং দু’জনের কাউকে দেখতে চায় না ১৮.৭%। জরিপের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরপর ৭৭% মানুষ যথাসম্ভব দ্রুত নির্বাচন চেয়েছে, ৬ মাস পর চেয়েছে ২৫% এবং এখন ৫৩% চেয়েছে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষে। এই জরিপে সরকারের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিল। অহংকার আত্মম্ভরিতা ভাল নয়, খারাপ বৈশিষ্ট্য, কিন্তু তারপরও অহংকার করা বা আত্মম্ভরিতার মতো কিছু থাকলে করবেনইবা না কেন? যদিও জানি কনভেনশন যুদ্ধের সংলাপ হতে পারলেও কোন সন্ত্রাসী জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ হয় না। তবু বলব সংলাপ হতেই পারে। যদিও সংলাপে কোন সমঝোতা অতীতে কখনও হয়নি। স্যার নিনিয়ান কিংবা তারাংকোর প্রচেষ্টা তো সেদিনের কথা। তারপরও সংলাপ হতে হলে আগে কিছু বিষয় খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে পরিষ্কার করতে হবে : ১. দলীয় সন্ত্রাসী এবং জামায়াতের সশস্ত্র জঙ্গীদের মাঠে নামিয়ে বিগত ৫ জানুয়ারি ’১৪ নির্বাচনের আগে পুরো ২০১৩ সাল ব্যাপী এবং গত ১০ দিন যাবত পিটিয়ে, পেট্রোলবোমা মেরে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে বেগম জিয়ার বক্তব্য কি? ২. যেভাবে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ, ৩. ট্রেন-বাস, ট্রাক-টেম্পো অটোরিকশায় পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ, ৪. যেভাবে দেশব্যাপী রাস্তা-গাছ কাটা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ, ৫. যেভাবে সরকারী ও বেসরকারী সম্পদ-স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ, ৬. শাপলা চত্বরে হেফাজত নামিয়ে যেভাবে জ্বালাও-পোড়াও চালানো হলো, পবিত্র কোরআন-হাদিস পর্যন্ত পোড়ানো হলো, কি বলবেন খালেদা জিয়া। এর সঙ্গে আরও কিছু ইস্যু রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে : ১. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এবং ৩ নবেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতার হত্যাকা-ের ব্যাপারে খালেদা ও তাঁর দলের নীতি কি? ২. ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে সিরিজ গ্রেনেড হামলা এবং গ্রেনেডের আঘাতে কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৩ জন নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে নিহত এবং তিন শতাধিক আহত এবং পরবর্তীতে গ্রেনেডের স্পিøন্টার বয়ে বয়ে কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রাজ্জাক ও মুহম্মদ হানিফের ইন্তেকাল, একই সঙ্গে হাওয়া ভবনে বসে পরিকল্পনা করে শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার ব্যাপারে বক্তব্য কি? ৩. সংলাপে বসার আগে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে গাঁটছড়া ত্যাগ করবেন কি? ৪. চলমান আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল ভাঙবেন না এবং ফাঁসির দ-প্রাপ্ত ও বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেবেন না, বরং দ- কার্যকর করবেন, এমন অঙ্গীকার জাতির কাছে করবেন কি? ৫. বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবেন কি? ৬. বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেবেন কি? ৭. ধর্মের নাম করে অধার্মিক কার্যকলাপ আর চালাবেন না, এ অঙ্গীকার করবেন কি? ৮.পাকিস্তানের আইএসআই পাঠানো অস্ত্রশস্ত্র এবং জঙ্গীদের ভারতে অনুপ্রবেশে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করবেন না, অঙ্গীকার করবেন কি? ৯. হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর আর নির্যাতন করবেন না, অঙ্গীকার করবেন কি? ১০. পাহাড়ী-আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার তথা পার্বত্য শান্তি চুক্তি পুরো বাস্তবায়ন করবেন কি? ১১. আল কায়েদা, আইএসআই, তালেবান, মুসলিম ব্রাদারহুড, বোকো হারাম প্রভৃতি আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীর ব্যাপারে কি নীতি হবে? সবচেয়ে বড় কথা হলো খালেদা জিয়া ও তাঁর দল বিএনপিকে সন্ত্রাসী জামায়াত-শিবির ছাড়তেই হবে, সেইসঙ্গে পবিত্র ধর্মের নামে মিথ্যার বেসাতি না করা এবং মিথ্যাচার ত্যাগ করতে হবে। কি ভয়ঙ্কর ছিল সেই ডিজাইন। এতদিন কথায় কথায় ভারত বিরোধিতা করেছেন। কখনও কখনও অহেতুক বিরোধিতা। এর কারণ হলো : ১. ভারত কেন আওয়ামী লীগকেই সমর্থন করছে। ২. বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান আর ভারত হিন্দু প্রধান দেশ। কাজেই ভারতের বিরোধিতা করলে বাংলাদেশের মুসলমানরা খুশি হবে এবং হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করে আওয়ামী লীগের ভোট কমাবে আর বিএনপি’র ভোট বাড়বে। কিন্তু এ চিন্তা কাজে লাগাতে পারেনি। তাই আজ ভারতের দিকে যাওয়াই ভাল। ভারতের আস্থা অর্জন করা গেলে ভারত তাদের ক্ষমতায় যেতে সাহায্য না করে পারবে না। খুব বেশি দিনের কথা নয়, তাদের মধ্যে হয়ত এ উপলব্ধিও এসেছে যে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী বাংলাদেশ সফরে এলে তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়ে ও সময় নির্ধারণ করেও দেখা না করে ভুল করেছে। তারা হয়ত ভাবছে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ভারত আর আওয়ামী লীগকে সমর্থন নাও করতে পারে। তাছাড়া এখন আর আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক মিত্র ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই। ক্ষমতায় এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি। বিজেপি ও বিএনপি জামায়াতের মতোই ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদী দল। তাই তো দেখা গেল নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনের সম্পূর্ণ ফল প্রকাশের আগে তাঁকে অভিনন্দন বার্তা পাঠালেন এবং খালেদা জিয়াই প্রথম অন্য দেশের রাজনৈতিক নেত্রী যিনি সবাইকে পেছনে ফেলে মোদিকে অভিনন্দন জানালেন। আর এবার অমিত শাহর সঙ্গে টেলিটকের যে নাটকটি করলেন তাতে করে তিনি পুরো জাতিকে অপমান করলেন। এমন মিথ্যাচারও মানুষ করে? করেছেন যখন, তখন ধরাও খেয়েছেন এবং নিজেদের ষড়যন্ত্রী চেহারাটাও সহজে উন্মোচিত হয়ে গেল। মনে হয় খালেদা জিয়া আর তাঁর ছেলে তারেক বাংলাদেশের মানুষকে তাঁদের মতো মেধাহীন মনে করেন। তাঁরা জানেন না ভারতের সরকার বদলায়, নীতি বদলায় না; বিশ্বাসের জায়গাটা একই থাকে। আমাদের দেশে জামায়াত-মুসলিম লীগের মতো সে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কেউ বিরোধিতা করেনি, বিজেপিও না। একই সঙ্গে দু’টি মিথ্যাচার করলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ধরা খেয়ে এখন চোখে ঝাপসা দেখছেন। মিথ্যাচার- ১. গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার অফিস থেকে বলা হলো ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ টেলিফোন করে স্বেচ্ছা অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার শারীরিক খোঁজখবর নিয়েছেন। খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান আবার এই ভুয়া বানোয়াট খবরটি প্রেসকে পরিবেশনকালে অমিত শাহর নামের আগে ‘শ্রীযুক্ত’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে প্রমাণ করতে চাইলেন খালেদা জিয়া তাঁকে কত ইজ্জত দেন। কিন্তু বিধি বাম। দেখা গেল অমিত শাহ বা তাঁর অফিসের কেউ খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করেননি। খবরটি বানোয়াট এবং ভুয়া। মিথ্যাচার-২. একই সময়ে আরেকটি মিথ্যাচার করা হয়েছেÑ মার্কিন প্রতিনিধি সভার পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েসসহ ৬ জন সদস্যের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ‘খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ (?) রাখা বা তার ছেলে তারেকের কোন কথা গণমাধ্যমে প্রচার করা যাবে না বলে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ তাতে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। খবরটি গণমাধ্যমে ছাপা হবার পর এড রয়েস সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, প্রতিনিধি পরিষদের পক্ষ থেকে এ রকম কোন বিজ্ঞপ্তিই দেয়া হয়নি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি মিথ্যা এবং বানোয়াট। তাঁরা নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে এই প্রতারণা করেছে। তদন্তে দেখা গেছে, এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করেছে কিছুদিন আগে নিয়োগপ্রাপ্ত বিএনপি পররাষ্ট্র বিষয়ক কূটনীতিক জাহিদ নামে এক লোক। এই লোকটি প্রতারক এবং প্রতারণার দায়ে এরই মধ্যে ডজনেরও অধিকবার গ্রেফতার ও জেল খেটেছে। লন্ডনে এই ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ইঁংরহবংং ঞরসব ছেপে পরে ক্ষমা চেয়েছে। জানা গেছে চুরি-চামারিসহ নানা অপরাধে অপরাধী হয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে লন্ডনে ফেরারি খালেদা তনয় তার সহকারী হুমায়ুন কবিরের মাধ্যমে বিজনেস টাইম পত্রিকায় পাঠিয়েছিল। এভাবে তিনি বাংলাদেশকে বিদেশের কাছে হেয় এবং জাতিকে অপমান করলেন। তাঁর করজোড়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। সবচেয়ে ভাল হয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ালে। তাতে দেশ, জাতি, মানুষ রক্ষা পাবে। কি ভয়ঙ্কর ছিল সেই ডিজাইন। খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে (স্বেচ্ছা) অবরুদ্ধ হবেন, মির্জা ফখরুল প্রেসক্লাবে কম্বল ফেলবেন আর তারেক লন্ডন-দুবাই বসে ষড়যন্ত্র করবেন, সেইসঙ্গে ভুয়া হোক আর যাই হোক অমিত শাহর টেলিফোনের এবং মার্কিন ছয় কংগ্রেসম্যানের বিবৃতির খবর প্রচারিত হবে, দেশে এমাজউদ্দিন, বদি মজুমদার বা ফেরদৌসরা টিভিতে ঝড় তুলবেন, তাতে বিভ্রান্ত হয়ে মানুষ রাজপথে নেমে সরকারের পতন ঘটাবে। কিন্তু তার আগেই সব ডিজাইন ফাঁস হয়ে গেল। টিভিতে দেখলাম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কে এই রিয়াজ রহমান, একাত্তরে রাজাকারীর দায়ে নাগরিকত্ব হারিয়েছিলেন। এই গুলিবিদ্ধ হওয়ার নিন্দা আমরাও করি, কিন্তু এই রাজাকারের জন্য আমাদের সুশীল বাবুদের যে কান্না দেখলাম, তার আগের দিন রংপুরের মিঠাপুকুরে জামায়াত-শিবিরের পেট্রোলবোমায় পুড়ে নিহত ৫ শিশুসহ হতাহত ১৫ জনের জন্য তার ওয়ান পারসেন্ট দরদও দেখলাম না। ঢাকা ॥ ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
×