ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাদার অব গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের ট্র্যাজেডি

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৫

মাদার অব গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের ট্র্যাজেডি

অবশেষে সফল হয়েছে বিএনপি। গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে তারা যৌথভাবে জামায়াতের সঙ্গে মিলে মানুষ পোড়ানো, খুন করা, শিশু খুন, ঘরবাড়ি, যানবাহন জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়ার যে উৎসব করছিল; তাতেও যাদের কৃপাদৃষ্টি তারা আশা করছিল তা পাচ্ছিল না। রিয়াজ রহমানের পায়ে গুলি করে তারা তাদের লক্ষ্য পূরণ করল। খুন, জ্বালানো-পোড়ানোকে উৎসব বলায় আপনারা আপত্তি করতে পারেন; বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতারা। তাই কেন উৎসব বলছি তা পরে বলব। খালেদা জিয়া তাঁর কার্যালয়ে যে দিন কাটাচ্ছেন তার একটা কারণ ছিল। ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাঁকে ভাল কাভারেজ দিচ্ছিল যাতে তাঁর আন্দোলনটা সফল হয়। কিন্তু, মিডিয়া তা পারেনি। সবাই ধরে নিয়েছিল বিএনপি/জামায়াত অবরোধ বা হরতাল দিলে কিছু গাড়ি পোড়াবে, কিছু খুন করবেই। ভায়োলেন্সের মাধ্যমে তাদের জন্মÑ খুন, জখমের মধ্যে না থাকলে তাদের গা ম্যাজ ম্যাজ করে। এতে তারা একটি উৎসবের আনন্দ পায়। এটি তাদের খাছলত। সে জন্য পার্টিও বহুত পেরেশানে ছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, খালেদাকে ‘মাদার অব গণতন্ত্র’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ, গণতন্ত্র বন্দী। এখন ব্যাম্বু লাও, মই লাগাও, ঢিল ছোড়, গণতন্ত্র মুক্ত কর। এ কারণে অমিত শাহ্্ ও ছয় মার্কিন কংগ্রেসী বক্তব্য নাটক করা হলে। বিএনপি ঘেঁষা এক সূত্র জানাচ্ছে, বিএনপি হাইকমান্ড কখনও চায়নি বিজেপি বর্তমান সরকারকে সাপোর্ট করুক। গতবার করেনি। এ ধারণাও বর্তমান, ভারত চাইলে সরকারকে টাইট দিতে পারে। নরেন্দ্র মোদিকে যখন কিছু করা গেল না তখন তরুণ অমিত শাহ্র কথা মনে হলো। তারেক রহমান থেকে হয়ত কয়েক বছরের ছোট বড় হতে পারেন অমিত। বিএনপির নেতারা চেয়েছিলেন, অমিত খালি জিজ্ঞেস করুক, হাউ ইজ ইয়োর বডি (আপনার শরীর কেমন)? তা হলেই হলো। কিন্তু, সেটি এমনভাবে ভেস্তে গেল যে বলার নয়। অমিত শাহ্্ ফোন করলে বিএনপি নেতারা বা সরকারী গোয়েন্দারা তা রেকর্ড করে রাখবে না, তা হতেই পারে না। এত বড় রাজনৈতিক জালিয়াতি এ শতকে হয়নি। সুজন, সুশীল ও নিরপেক্ষ (আসলে নিরপেক্ষ!) কলামিস্ট ও টক শো বিশেষজ্ঞরা যারা মাদার অব গণতন্ত্র মৃতপ্রায় বলে যে আক্ষেপ-আর্তি প্রকাশ করেছিল, তাঁরাও এ ব্যাপারে কিছু বললেন না। তাঁরাও হয়ত খানিকটা লজ্জা পেয়েছেন। আমরা কিন্তু আজ এই জালিয়াতির কারণে খুবই লজ্জিত। কারণ, আপটার অল খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দু’বারের বিরোধী দলের নেতা। এ জালিয়াতি প্রকাশের পরও বিএনপির কিছু লিডার ও তাদের এ্যাপোলজিস্টরা বলছিলেন, না, না অমিত শাহ্্ই ফোন করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, হয়ত হান্নান শাহ ফোন করেছিলেন। সেটিই অমিত শাহ্্ হয়ে গেছে। না, তাঁরা লজ্জিত হননি। লাজলজ্জা থাকলে বিএনপি-জামায়াত করা যায় না বা এর সমর্থক হওয়া যায় না। বাংলায় প্রবাদই আছে, একমাত্র দু’কান কাটারাই মাথা উঁচু করে রাস্তা দিয়ে চলে। রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমেরিকা, ব্রিটেন আবার চান্স পেল কিছু বলার। তারা দুঃখিত হয়েছেন। তারা তো আগে থেকেই দুঃখিত ছিল। কিন্তু গতবার গণতন্ত্র ঠেকা দিয়ে রাখার জন্য মাদারকে অনেক সাহায্য করেছিল। বিফলে গেছে তা। এই ওপেনিংটা দরকার ছিল। তবে, এখনও নরেন্দ্র মোদি কিছু বলেননি। আমি বিএনপিপন্থী নই কিন্তু আমিও জোরালো স্বরে বলব, এইসব ভয়ভীতি দেখানো, গুলি করা বন্ধ হোক। স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি/জামায়াত প্রথমে বিচারক ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাসার সামনে ককটেল ফোটাতে থাকে, পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারতে থাকে, গুলি করতে তাকে। কিন্তু, তাদের নেতাদের বাড়িঘরে দু’একটি ককটেল ছোড়া হলে এই হামলা থেমে যায়। আমরা জানি না কারা করছে এসব। কিন্তু যারাই করছেন, তাঁরা ভুলে যাবেন না, একদিন তাঁরাও আক্রান্ত হবেন। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, বিএনপি পক্ষীয়দের আক্রমণ করেছে আওয়ামী পক্ষীয়রা। তারপরও বলতে হয়, রিয়াজ রহমানেরটির সঙ্গে তাঁর নিজ পক্ষেরই জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি। একটি টিভি চ্যানেলে দেখলাম, যারা তাঁর গাড়ি থামিয়েছিল তারা অভিযোগ করছিল নেতারা গাড়ি চড়ে খালি ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেন। কর্মীদের উপেক্ষা করছেন। কথোপকথন বা কথা কাটাকাটির পর্যায়ে গুলি ছোড়া হয় যাতে তিনি খানিকটা আহত হন। বর্তমান পরিস্থিতিতে খানিকটা চেনা না হলে রিয়াজ রহমান গাড়ি থামাতে বললেই গাড়ি থামাতেন না। রিয়াজ রহমান এমন কোন বড় নেতা নন। তাঁর বড় পরিচয় তিনি মরহুম হামিদুল হক চৌধুরীর কন্যাজামাতা। ১৯৭১ সালে যিনি বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন না। এ কারণেই তাঁকে প্রতিমন্ত্রী বানানো হয়েছিল। কিন্তু তারপর? রিয়াজ রহমান ঘটনা তো গেল। আন্তর্জাতিক সহানুভূতি পাওয়ার উপায় আর কী? অবরোধ ক’দিন চলবে? একমাস? তারপর? হরতালের দিন দিব্যি গাড়িঘোড়া চলছে। এরপর যারা এসব করবে তাদের গণপিটুনি দেবে না আমজনতা, তার নিশ্চয়তা কী? এসব বিশ্লেষণে না গিয়ে সাদামাটাভাবে একটি কথা বলি, বিএনপির বড় কোন নেতাকে তো হরতালে পিকেটিং করতে দেখি না। সরকারবিরোধীরা বলবেন, সরকার আমাদের স্পেস দেয় না। রাস্তায় নামলেই পুলিশ পেটায়। কিন্তু বিএনপি আমলে কোহিনূর যেভাবে মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, আসাদুজ্জামান নূর এমনকি জেলে মহীউদ্দীন খান আলমগীর থেকে শুরু করে অজস্র লোককে পিটিয়েছে তার ভিডিও তো এখনও আছে (রিমান্ড ও জেলের অত্যাচার ছাড়া)। আওয়ামী লীগ নেতারা তো রাস্তা থেকে সরেননি। এ আমলে তো বিএনপি নেতাদের সেভাবে পেটানো হয়নি। কর্মীরা দেখছে, তাঁরা গ্রেফতার হচ্ছেন আর লিডাররা বাবু সেজে ম্যাডাম দর্শনে যাচ্ছেন। ক্ষমতায় গেলে তাঁরা মন্ত্রী হবেন, মার খাওয়া লোকজন তো নয়। সুতরাং, ম্যাডামপ্রীতি বেশিদিন থাকবে না। মির্জা ফখরুল বুদ্ধিমান। অজুহাত সৃষ্টি করে জেলে গেছেন। মওদুদ, খন্দকার মোশাররফরা কেউ নেই। মির্জা আব্বাসকে গত ১০ দিন কোথাও দেখি না। কেউ হাসপাতালে গেলে দু’তিনজন সেখানে যান এ আশায় যে, টিভি চ্যানেলে যদি চেহারাটা দেখানো যায়। প্রায় দেখা যেত এক সময়ের লেফটি, রুহুল কবির রিজভী একা কার্যালয় পাহারা দিচ্ছেন বিরস মুখে নাইটগার্ডের মতো। ভাল কাভারেজ পাচ্ছিলেন। হাসপাতাল থেকে পালিয়ে ‘আত্মগোপনে’ থেকে লড়াই করার বাণী দিচ্ছেন। বিএনপিঅলাদের কাছে চে’গুয়েভারার মতো তাঁর পরিচিতি। তাঁকে বলা হয় এখন গুয়েভারা রিজভী। আপনারা বিশ্বাস করেন, সরকারী দৃষ্টির বাইরে কারও পক্ষে হাসপাতাল থেকে পালানো সম্ভব? সরকারের সঙ্গে যে বিএনপির এক পক্ষের একটা যোগাযোগ আছেÑ তা বোঝা যায় অনেকের নীরবতা দেখে। শাহরিয়ার কবির বলেছেন, বিএনপি এখন আন্দোলন আউটসোর্সিং করছে। অর্থাৎ, সন্ত্রাসীদের দিয়ে পেট্রোলবোমা, গুলি ছুড়ছে। গত ১০ দিনে অনেক মানুষ মারা গেছেন, অনেকে মারা যাওয়ার পথে, অনেকের পঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। এর মধ্যে কি বিএনপি সমর্থক নেই? যে সব গাড়ি-বাস-ট্রাক পোড়ানো হচ্ছে তাদের সবকিছুর মালিক কি শুধু আওয়ামী লীগ সমর্থক? বিএনপির জনসমর্থন নেইÑ এ কথা বললে মিথ্যা বলা হবে। কিন্তু যখন দেখি অবরোধ-হরতালে বিএনপির শিল্পপতিদের কলকারখানা, গার্মেন্টস খোলা থাকে তা হলে কি ঐসব সমর্থক বিএনপি সমর্থক থাকবেন? জানি না। হয়ত, ম্যাডাম বলবেন, বিএনপি সমর্থকদের গাড়িতেÑ বিএনপি সমর্থকের গাড়ি, বাড়িতে- বিএনপিপন্থী বাড়ি, ফ্যাক্টরিতে মালিক বিএনপিÑ এ ধরনের সাইনবোর্ড প্রদর্শন করতে। এটি করলে কিন্তু মন্দ হয় না। মিডিয়া যতটা মাদার অব গণতন্ত্রের ভক্ত ততটা ভিকটিমদের পক্ষ নয়। হলে, এই ভিকটিমরা একটা বড় অংশজুড়ে থাকত মিডিয়াতে। ছাত্রলীগ কিছু করলে রসালোভাবে নাম ধরে খবর চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। আর এখন যারা পেট্রোলবোমা ছুড়ছে তারা শুধু দুর্বৃত্ত। দুর্বৃত্তায়ন যদি সব সেক্টরে হয়ে থাকে, মিডিয়াও হয়েছে এবং এর কাফফারা মিডিয়াকে অবশ্যই দিতে হবে। নেতাকর্মী ছাড়া আন্দোলন-অবরোধ কতদিন চলবে? রাজনীতি কি আইটি সেক্টর যে, আউটসোর্সিং হলেও চলবে? আমি, আমার অনেক বন্ধু, পাতা ভরানো কলামিস্ট বা টকশো বিশ্লেষকদের মতো সাহসী নই। আমি এমনই ভীতু যে, গত ১০ দিন বাসা থেকেই বের হয়নি। কিন্তু এর একটি সুফল পেয়েছি। টকশো, প্রতিবেদন, চ্যানেল দেখার সুযোগ পাচ্ছি। পত্র-পত্রিকায় কলামিস্টদের বিজ্ঞ আলোচনা দেখতে ও শুনতে পাচ্ছি। আমি ভীতু বটে কিন্তু এরা দেখছি আরও ভীত,ু বিরোধীদের মূল বক্তব্য ‘একতরফা’ নির্বাচনের ফলে এই অবস্থা। মৌলিক অধিকার ক্ষুণœ করা হচ্ছে। গণতন্ত্র ইজ ডেড। তাদের বক্তব্য, শেখ হাসিনা ইজ স্বৈরাচারী। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। আওয়ামী সমর্থক বা লিডাররা মিনমিন করে কিছু বলেন বটে, কথাটা স্পষ্টই হয় না। স্বদেশ রায়কে তো টিভিতে ডাকা হয় না। আর শাহরিয়ার কবির কয়টা চ্যানেল কাভার করবেন? বিরোধীদের বক্তব্য, যা করছেন শেখ হাসিনা সব মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এভাবে চলতে পারে না। এটি জুলুম। পুরনো কথা আমি টানব না। বিএনপি-জামায়াত তাদের শাসনামলে যা করেছে তার ফিরিস্তি টানলে মিডিয়াও মুশকিলে পড়বে। শেখ হাসিনা এদিক থেকে ব্যর্থ। ম্যাডামের মতো সাহসী তিনি নন। ম্যাডাম, তাঁর পুত্র, তাঁদের সমর্থকরা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে কয়েকবার হত্যা করতে চেয়েছিলেন, ট্রাক ট্রাক, জাহাজ জাহাজভর্তি অস্ত্র চোরাচালান করেছেন, গয়েশ্বর ও নিতাই ছাড়া বাকি হিন্দুদের টার্গেট করে পোড়ানো হয়েছে বা দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। শাহরিয়ার বা আমার কথা না হয় বাদই দিলাম। বিএনপির সমর্থক কলামিস্টদের জেলে নেয়া হয়েছে? খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে বালিভর্তি ট্রাক, গ্রেনেড তো ছোড়া হয়নি। আওয়ামী লীগ, এসব জানত না, কিছু শিখেছে বিএনপির কাছ থেকে। কিন্তু গুরু মারা বিদ্যা রপ্ত করতে পারেনি। আমার বক্তব্য একটিই। এবং খুবই সাধারণ। বিএনপি-জামায়াত যে রাজনীতি করছে তা বাংলাদেশে করতে দেয়া যায় কিনা, এই বিতর্ক এখন হওয়া উচিত। বিএনপি-জামায়াত যা করছে, আমি সে সব কাসুন্দি টানব না। গত তিন বছর যেভাবে তারা মানুষ হত্যা, শিশুহত্যা শুরু করেছে; কোন গণতান্ত্রিক দল তা করতে পারে কিনা? সে প্রশ্ন এখন ওঠানো উচিত। লক্ষ্য করবেন, বিএনপি সমর্থক সুশীলরা যাঁরা গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার নিয়ে শঙ্কিত তাঁরা এ সব কথা কখনও তোলেন না। শেখ হাসিনার নমনীয় সরকার জানমাল রক্ষায়; মওদুদ আহমদ যে সন্ত্রাসবিরোধী আইন করে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের আন্দোলন দমানোর জন্য, সেটিও ব্যবহার করতে পারেনি। এসব প্রশ্ন করতে না চাইলে শুধু একটি প্রশ্ন করা উচিত? মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক আইনে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অপরাধ কিনা? ইসলাম ধর্ম মতে, এটি কবিরা গুনাহ কিনা? পৃথিবীর কোন দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ যারা করেছে তাদের রাজনীতি করতে দেয়া হয়? যদি না দেয়া হয়, তাহলে কেন জামায়াত এখন রাজনীতি করবে? ১৪ দলীয় সরকার লাজুক না হলে সে ব্যবস্থা নিত। অন্তত পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মাহমুদ আলী মার্কিন/ব্রিটিশ/ইউরোপের যে সব দূত বড় বড় ছবক দেন তাঁদের জিজ্ঞেস করতে পারতেনÑ ব্রিটেনে বা আমেরিকায় তাঁরা নাজি বা ফ্যাসিস্ট পার্টি বা তালেবান পার্টি করতে দেবে কিনা? যদি না দেয়, তাহলে তো শেখ হাসিনা ওবামা বা ক্যামেরন থেকেও বেশি গণতন্ত্রী? পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়া কোন দেশে এমনটি ঘটেনি। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধকে সমর্থন করে। জঙ্গী মৌলবাদের উত্থান ঘটায় তাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে কিনা? এ কথাও যেসব দেশ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দেবে তাদের দূতদের ডেকে জিজ্ঞেস করা বাঞ্ছনীয়। পাকিস্তান এসব করতে দিয়েছিল দেখে পাকিস্তান এখন শুধু ব্যর্থ রাষ্ট্র নয়, ভাঙ্গনের পথে এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা। সেখানে অবস্থা এমন ১৯৭১ সাল থেকে যে, যে সেনাবাহিনী যুদ্ধাপরাধ করেছে, জঙ্গী মৌলবাদ বিকশিত করেছে, তালেবানদের ক্ষমতাবান করেছে এখন তারা ৭০০ জঙ্গীকে ফাঁসি দিচ্ছে। বিতর্ক এখন এ বিষয় নিয়ে হওয়া উচিত। আওয়ামী লিডাররা বস্তাপচা কথা বলা বন্ধ করুন। মূল বিষয় উত্থাপন করুন। বিতর্ক হওয়া উচিত, কোন রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে কিনা প্রতিদিন মানুষ খুন করার, শিশু হত্যার? এটি কি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? কোন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সঞ্চালক এ প্রশ্ন রাখেননি? যে দেশে যুদ্ধাপরাধীরা রাজনীতি করতে পারে [বিএনপিকেও এখন একই অভিধা দেয়া যেতে পারে] সে দেশে গণতন্ত্র থাকতে পারে কিনা, সে প্রশ্ন আগে উত্থাপন করা জরুরী। এসব প্রশ্ন না তুলে মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মাদার অব গণতন্ত্রের প্রতি অধিকার; এ ধরনের প্রশ্ন তোলা শুধু ভ-ামি নয়, সাধারণ বা গরিব মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ। আওয়ামী লীগ নেতারাও একই কাজ করছেন। গত দু’সপ্তাহে যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই হদ্দ গরিব। মওদুদ, ফখরুল, গুয়েভারা রিজভী, বা ম্যাডামের কার্যালয়ে বালতি ভরে খাবার নিয়ে যাওয়া রমণীকুল বা তাদের পরিবার-পরিজন বা অন্য বিএনপি লিডারদের এক পয়সাও ক্ষতি হয়নি। স্যুট পরে বিবৃতি দেয়া ও ক্যামেরা পছন্দ করা অকেশনাল বুদ্ধিজীবীদেরও কিছু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী খালি বলেন, কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। এ যেন, আমাদের পাড়ায় আসিস দেখে নেবোর মতো। ম্যাডাম যদি ক্ষমতায় থাকতেন এখন, শেখ হাসিনাকে আর রাজনীতি করতে দেয়া হতো না। সুধাসদন গুঁড়িয়ে দেয়া হতো। এ রাষ্ট্রের ট্র্যাজেডিটা হলো, গরিবরা এ রাষ্ট্র এনেছিল। কিন্তু গরিবরা শুধু মরেই গেল, ছত্রছান হয়ে গেল। মালাই খেল শুধু সামরিক-বেসামরিক আমলা, মধ্যবিত্ত ও রাজনীতিবিদরা।
×