ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সোবহান শেখের জবানবন্দী

সিরাজ মাস্টারের নির্দেশে রাজাকাররা বাবাকে গুলি করে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

সিরাজ মাস্টারের নির্দেশে রাজাকাররা বাবাকে গুলি করে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১৪তম সাক্ষী সোবহান শেখ জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, সিরাজ মাস্টারের নির্দেশে রাজাকাররা তাঁর বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তাঁর বাবার লাশ নদীতে ফেলে দেয়। জবানন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য ২৫ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। সাক্ষী জবাবন্দীতে বলেন, আমার নাম সোবহান শেখ। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-টেংরাখালী, থানা-কচুয়া, জেলা-বাগেরহাট। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১০/১১ বছর। তখন আমি গরু-ছাগল চড়াতাম। ১৯৭১ সালের বাংলা অগ্রহায়ণ মাস শুরু হওয়ার দুয়েক দিন পরে একদিন সকাল আনুমানিক ১০/১১টার সময় চারজন রাজাকার আমাদের বাড়িতে আসে এবং আমার বাবাকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়। আমাদের পরিবারের কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন। ঐ চারজন রাজাকারের মধ্যে আমি একজনকে চিনতে পারি তার নাম সুলতান ডাউয়া। এরপর রাজাকাররা আমার বাবাকে ধরে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আমি কান্নাকাটি করতে করতে বাবার পিছু পিছু কচুয়া যাই। রাজাকাররা আমাকে ক্যাম্পের বাইরে মাটিতে বসিয়ে রেখে বাবাকে ক্যাম্পের ভিতরে নেয়। এক পর্যায়ে লম্বা কালোমতো একজন রাজাকার আমাকে বলে, এখানে কারফিউ দেয়া হয়েছে তুমি চলে যাও। এই বলে সে আমার শরীরে আঘাত করে সেখান থেকে বের করে দেয়। আমি তখন সেখান থেকে নদীর ধারে এসে কান্নাকাটি করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শুনতে পাই। আমার পরিচিত একজন লোক তখন আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। রাতের বেলা আমরা জানতে পারি যে, রাজাকার সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেন, সুলতান ডাউয়া, মুনিরুজ্জামানসহ অন্য রাজাকাররা আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে। পরদিন সকালে আমার ভগ্নিপতি শিখু শেখ ঘটনাস্থলে গিয়ে নদীতে ভাসমান আমার বাবার লাশ নিয়ে আমাদের গ্রামে আসলে আমরা দাফন করি। ঘটনাস্থলে এখন আমার বাবাসহ অন্য শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ আছে। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে মোট ১৪ জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দী প্রদান করেছেন। বাগেরহাটের এই তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তরিতসহ ছটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। কচুয়া থানা পুলিশ ১১ জুন পলাতক আসামি আঃ লতিফ তালুকদারকে গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে। ১৯ জুন অপর পলাতক আসামি আকরাম হোসেন খানকে রাজশাহী থেকে মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করে। ২১ জুলাই রাত ১১টায় বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশ বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে মৃত মোসলেম পাইকের (তার চাচাশ্বশুর) পরিত্যক্ত খুপড়ি ঘর থেকে সিরাজ মাস্টারকে গ্রেফতার করে। এরা তিনজনই কারাগারে আটক রয়েছেন।
×