ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সভাপতি দেশে ফিরলেই আদালতে যাওয়া হবে

হরতাল অবরোধ বন্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবে এফবিসিসিআই

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫

হরতাল অবরোধ বন্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবে এফবিসিসিআই

এম শাহজাহান ॥ হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচী বন্ধে অবশেষে আইনের আশ্রয় নিতে যাচ্ছে এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের এ শীর্ষ সংগঠনটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, হরতাল-অবরোধের কারণে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো ক্ষুণœ হচ্ছে। গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও হরতালের নামে দেশে এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে। তাই এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধে দেশে আইন করতে পারে সরকার। এ অবস্থায় এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ চীন থেকে দেশে ফিরলেই সংগঠনটির পক্ষ থেকে হরতাল বন্ধে আদালতে যাওয়া হবে। আগামী ১৮ জানুয়ারি তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের কারণে দেশে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে। এর আগে গত ২০১৩ সালে হরতালের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। ওই সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয় একদিনের হরতালে দেশে প্রায় ১৬শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। তবে এক বছরের ব্যবধানে সেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান একদিনের হরতালে ১৮শ’ ৫০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। একই সঙ্গে বহির্বিশ্বে তীব্র ইমেজ সঙ্কটে পড়ে দেশ। এতে করে রফতানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, হরতাল-অবরোধ বন্ধে আইন করার বিষয়টি এফবিসিসিআই থেকে ইতোপূর্বে বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ কখনও আইনের আশ্রয় নেয়নি। আমরা দু’নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করেছি হরতালের বিকল্প কর্মসূচী দিতে। ব্যবসায়ীরা সারাদেশে একযোগে সাদা পতাকা মিছিল ও সমাবেশ করে এই কর্মসূচীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো কখনই এটি আমলে নেয়নি। তাই হরতাল বন্ধে এবার বাস্তবে আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ হরতাল বন্ধে আইনী লড়াই চালিয়ে যেতে আমাকে সমর্থন দিয়েছে। তাই ধ্বংসাত্মক এই কর্মসূচী বন্ধে এফবিসিসিআই আদালতের আশ্রয় নিবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতায় ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন সহিংসতা বন্ধে আইনের আশ্রয় নেয়া ছাড়া ব্যবসায়ীদের কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিও হরতাল বন্ধে আইন চায় ॥ একদিনের হরতালে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির আওতাধীন ব্যবসায়ীদের নিট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২শ’ কোটি টাকা। এই ক্ষতির হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে দোকান পাট খোলা রাখা হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতাদের আনাগোনা না থাকায় বেচাবিক্রিতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এ কারণে হরতাল-অবরোধের মতো অর্থনীতি বিধ্বংসী কর্মসূচী বন্ধে আইন চায় দোকানদের বৃহত্তম এ সংগঠনটি। দেশের ২৬ লাখ দোকান মালিক এ সমিতির সদস্য। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত শিবিরের হরতাল-অবরোধের কারণে দোকানদাররা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন। তাই এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে তাদের শতভাগ সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, হরতাল বন্ধে প্রয়োজনে দোকান মালিক সমিতি পৃথক কর্মসূচী দিবে। ব্যবসায়ীদের এ উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করছে সরকার ॥ হরতাল-অবরোধ বন্ধে ব্যবসায়ীদের আইনের আশ্রয় নেয়ার উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। বিশেষ করে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের এ দাবির প্রতি অর্থমন্ত্রী হিসেবে আমার সমর্থন রয়েছে। তাঁরা এ বিষয়টি নিয়ে এগোলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা থাকবে। একই সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও ব্যবসায়ীদের এ দাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন। বর্তমান তিনি ভারত সফরে রয়েছেন। তবে হরতাল-অবরোধ বন্ধে ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
×